পাতা:প্রবাসী (একত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৭৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S$8 এই গুঢ়তত্বট বোধ হয় কাহারও জানা নাই। আমি সেই জন্ত প্রথম অধ্যায়টা খুব লোমহর্ষণ গোছের দাড় করাইয়াছিলাম। বাংলা-সাহিত্যে নায়ক-নায়িকার প্রথম দর্শনটা সাধারণত বড় সাদাসিদে ব্যাপার, নেহাৎ যেন ঘরোয়া গোছের, তাহাতে পরস্পরের হৃদয়ে এমন একটা ঝাকানি লাগে না যাহাতে অম্ভনিহিত প্রেমের স্বপ্তিতে আঘাত করিতে পারে। আমার উপন্যাসের নায়ক-নায়িকার প্রথম সাক্ষাৎ হয় একটা খণ্ডপ্রলয়ের মধ্যে । জমিদার-তনয় দ্বাবিংশতি বয়স্ক যুবক হেমন্তকুমার মৃগয়া করিয়া মোটরযোগে ফিরিতেছেন। একলা ; সঙ্গিগণ পিছনে মৃগয়ালব্ধ বাস্ত্র ভল্লুক বলিহাস প্রভৃতি লইয়া আসিতেছে। এমন সময় তুমুল ঝড়, মুষলধারায় বৃষ্টি আর অবিশ্রাস্ত বিদ্যুৎ বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে মূহুমুহু করকাপাত। নিকটে আশ্রয় নাই—মোটরে হুড নাই, ছিড়িয়া গিয়াছে। বর্ষাক্ষীত নদীর কিনারা দিয়া ভাঙাচোরা রাস্ত চলিয়া গিয়াছে ; হেমন্তকুমার ঘণ্টায় ৬০ মাইল হিসাবে তাহারই উপর দিয়া মোটর চালাইয়াছেন। হঠাৎ গাড়ীর আলো নিবিয়া গেল ; গাড়ী কিন্তু পূৰ্ব্ববংই ধাবমান।--ধন্য হেমন্তকুমার, ধন্য তোমার শিক্ষা ! হঠাৎ একটা কিসে এক ভীষণ ধাক্কা—সঙ্গে সঙ্গে মোটর চুরমার। হেমন্তকুমার ছিটুকাইয়া গিয়া কিনারার নীচেয় খানিকট নরম ভিজা বালির উপর পড়িলেন। জিমন্যাক্টিক করা শরীর—কিছুমাত্র আঘাত লাগিল না ! কিন্তু একি –হেমন্তকুমারের পার্থেই সেই চড়ার উপর সংজ্ঞাহীন অবস্থায় এসে এক পরমান্বন্দরী রমণীমূৰ্ত্তি ! হেমন্ত কুমার বিস্থিত, চমকিত হইলেন ; কিন্তু খুব প্রত্যুৎপন্নবুদ্ধি বলিয়া পরক্ষণেই বুঝিতে পারিলেন, এই ঝড় তুফানে কোন নৌকা ডুবি হইয়াছে। আহে, কি স্বন্দর সেই নারীমূৰ্ত্তি ! এ কি জলদেবী নদীগর্ভ ত্যাগ করিয়া বালুকাতটে বিশ্রাম লইতেছেন, না চঞ্চল সৌদামিনী মূৰ্ত্তি পরিগ্রহ করিয়া ধরণীতে অবরোহণ করিয়াছেন ?--হেমন্তকুমার জীবনে এই প্রথম অস্তরে এক তীব্র আবেগ অনুভব করিলেন ; সে আবেগ কি ভালবাসার ? এই অধ্যায়টির শেষে সবিতা দেবী লিখিয়া রাখিয়াছেন “গাজাখুরি নম্বর এক।” রাগে আমার গারি রি করিতে লাগিল। গাঁজাখুরি ? কোনখানটায় গাঁজাখুরি হইল –ঝড় গাঁজাখুরি, হেমন্তকুমার গাজাখুরি, মোটর গাজাখুরি, না সেই রমণীমূৰ্ত্তি গাঁজাখুরি ? ইস্, কি ধৃষ্টত এই মেয়েজাতটার । ইহার ফিপ্ত ক্লাস, সেকেণ্ড ক্লাস পর্ষ্যস্ত পড়িয়াই ভাবে দিগগজ, হইয়া পড়িয়াছি ।--এতদিন একেবারে গণ্ডমূর্থ হইয়াছিলে ; আজকাল দু-অক্ষর পড়িতে শিখিয়া দু-একথানা করিয়া নভেধ পড় তাহাতে আপত্তি নাই ; কিন্তু নভেল-লেখার কি জান ? আটের কেরামতি কি বোঝ ? ইাড়ি খন্তি ছাড়িয়াছ, কিন্তু ফোড়ন দেওয়ার অভ্যাসটা ত এখনও যায় নাই। ইহার পরের অধ্যায়ে ঝড়বৃষ্টি থামিয়া, মেঘ অপসারিত হইয়া জোৎস্না উঠিয়াছে। একটা তুমুল বিক্ষোভের পর প্রকৃতি শাস্ত মূৰ্ত্তি ধারণ করিয়াছে। ঝড়ের ক্রুদ্ধ গজ্জনের বদলে পার্থীদের আনন্দকোলাহলে আকাশ ভরিয়া গিয়াছে, তাহার মধ্যে আবার একটা কোকিলের আওয়াজ সকলের উপর আত্মপ্রকাশ করিতেছে। আমার মতে গল্পের প্রয়োজনায়যায়ী প্রাকৃতিক অবস্থা বায়স্কোপের ছবির মত সর্টু সন্টু বদলাইয়া ফেলা দরকার। যে-দৃশ্বট যে-ভাবের পরিপোষক সেটাকে তৎক্ষণাৎ আনিয়া ফেলিতে হইবে। তুমুল ঝড় তুফানের যখন প্রয়োজন ছিল তখন ছিল, এখন নায়ক-নায়িকার মধ্যে প্রেমসঞ্চারের সময় ; স্বতরাং খানিকটা জ্যোৎস্না, একটু মৃদু মন্দ হাওয়া এবং একটু কোকিলের তান চাই-ই। হেমন্তকুমার উঠিয়া বসিয়৷ সেই আৰ্জবন্ত্রমণ্ডিত অপূৰ্ব্ব মূৰ্ত্তির দিকে একটু মুগ্ধদৃষ্টিতে চাহিলেন। দেহ স্পর্শ করিয়া দেখিলেন দেহে তখনও উত্তাপ বর্তমান। এখন চেতন-সঞ্চারের কি উপায় ? তাহার জানা ছিল—এক বিশেষ পদ্ধতিতে জলমপ্লের হন্ত ও পদ সঞ্চালিত করিয়া বদনে ফু দিলে চেতনা ফিরিয়া আসে। কিন্তু সেই অপরিচিত সুন্দরী যুবতীর অধর স্পর্শ করিয়া ফুৎকার দিতে স্বশিক্ষিত যুবকের শীলতায় বাধে। অথচ সাজোপাঙ্গ সব পিছনে - দেরি করাও বিপজ্জনক । তাই নিতান্ত বাধ্য হুইয়াই