পাতা:প্রবাসী (একত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৭৪৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

হারাইবার ভয়ে স্বপ্রসন্ন দৃষ্টিতে গৃহলক্ষ্মীকে কোলে টানিয়৷ লইতে পারেন না। স্বার্থের স্বল্প একটু রেখা এত সোহাগ হর্যের মাঝখানেও কাচের দাগের মত স্পষ্ট হইয়া ফুটিয়া উঠে। তাই কয়েক মাসের মধ্যেই মা হইয়া উঠেন শাশুড়ী ও সংসারের সংঘাত এই অস্তুৰন্থের ঝটিকায় বাড়িয়াই চলে। কথাটা রূঢ় হইলেও সত্য। শাশুড়ীর স্নেহমমতা— বধুর জন্য দরদ সবই আছে, কিন্তু অস্তুনিহিত সত্যের ছায়া এ সকলের পশ্চাতে প্রতিনিয়ত ঘুরিয়া বেড়াইতেছে। ঠিক যেমন স্বর্ষোর বিপরীত দিকে মানুষের ছায়া। বধুর কৰ্ম্মপটতার মধ্যে, চালচলনে, হাসি ও রূপের বিশ্লেষণে প্রতিদিনই এই সকল স্বার্থকলুষ আত্মপ্রকাশ করে। কোন সংসারে ঝড় উঠে, কোথাও বা শীতের মেঘের মত নি:শঙ্গেই মিলাইয়া যায়। বুদ্ধি দিয়া কেহ ঢাকিতে পারেন, কেহ বা সরল মনের কাহিনী উচ্ছসিত কণ্ঠে পাঁচজনের সাক্ষাতে বলিয় তাহাদের কৌতুককৌতুহল বুদ্ধি করেন। ট্রেন চলিতেছিল। জিজ্ঞাসা করিলাম, “কোথায় নামবেন প্রথমে ?” দক্ষিণপাড়ার বিন্দুবাসিনীর অভিজ্ঞতা এ বিষয়ে বিশেষ রকমেরই ছিল। বলিলেন, “আগে পৈরাগ। কথায় বলে,— পৈরাগে মুড়ায়ে মাথা— যাকৃগে পাপী যেথাসেথা।” আমি হাসিয়া বলিলাম, “না বিন্দুদি—এতগুলি লোককে আমি কখনই পাপী মনে করতে পারি না।” মাথা নাড়িয়া বিন্দু দিদি বলিলেন, “পাপী নয় ত কি ? আর জন্মে কত পাপ করেছিলাম তাই—” একটি নিঃশ্বাস ফেলিয়া সমাপ্তির ছেদ টানিলেন। বিন্দুদির অবস্থা ভাল। কস্তাদের লইয়া সংসার , তাহার মায়ের অধ-মহিমায় বাধ্য এবং বশীভূত। পাপের মধ্যে এক-স্বামী নাই। তা সেজন্য দুঃখ বিলুদি কোন কালেই করিতেন না। আজ সহসা হয়ত সেই কথাই স্মরণ করিয়া দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিলেন। রাঙামামী বলিলেন, “পাপের কথা আর ব’লো না, बाबा । डिनिं भिन्न हेखक-बाज़िद्र इशाब बीज़वब्र একদিন দর্শন করতে পারি নি!” কাসর বলিলেন, “পাপের শরীল না হ’লে আম্বলের ব্যায়রামে এত কষ্ট পাই।” বলিয়া হেউ করিয়া একটা ঢেকুর তুলিয়া মুখবিকৃতি করিলেন। উত্তরপাড়ার হরের মা সামুনাসিক স্বরে বলিলেন, “পাপিষ্ঠ। যদি না হব ত এক ছেলে বউ নিয়ে ভেন্ন’ হ’ল কেন ?” সঙ্গে সঙ্গে বাকী সকলে পাপের মাহাত্ম্য কীৰ্ত্তনে শতযুগ হইয়া উঠিলেন। ভাগো বধূটর কথা বলিবার কোন সুযোগ মিলিল না এবং কোলের কচি ছেলেটিও পাপপুণা সম্বন্ধে অজ্ঞান, নতুবা মনে হইত ধৰ্ম্মরাজের পুরীর কোন এলাক-বিশেষের মধ্যে জীবন্ত আমরা কি করিয়া আসিলাম ? স্থির করিলাম পাপভার মোচনের জন্য আমাদের সৰ্ব্বপ্রথম নামিতে হইবে এলাহাবাদে । সুতরাং নামিলাম এলাহাবাদে । শোনা গেল ধৰ্ম্মশালা এখানে অনেকগুলিই আছে। যমুনার ধারে ছোট্ট একতলা ষে ধৰ্ম্মশালাটি আছে এক্কাওয়ালা আমাদের সেইখানে লইয়া চলিল। "এক্কা জিনিষটি কি তাহ চৰ্ম্মচক্ষে অনেকেই দেখিয়াছেন ও কবির ভাষায় শুনিয়াছেন, "বেহারে বেঘোরে চড়িচ্চু এক্কা’ , কিন্তু দেখাশোনার মধ্যেও যিনি কৃপা করিয়া ইহার গদীপৃষ্ঠে কখনও দেহভার রাখেন নাই তাহাকে ইহার স্বরূপ বুঝাইতে যাওয়া বৃথা। সৰ্ব্বাঙ্গে আড়ষ্ট ব্যথা লইয়া এক্কা হইতে নামিলাম। পয়সা দিবার সময় টাঙ্গার মুখাসনের প্রতি বারেক মাত্র দৃষ্টিপাত করিয়া মনে হইল, এক্কার উচ্চাসনই ভাল। শুধু গতরের উপর দিয়াই কষ্টটুকু যায়—থলির মর্শ্বাশ্রয় করে না । গোছগাছ করিয়া বলিলাম, "কে কে স্নানে যাবেন, চলুন।” - স্নান মানে শ্ৰাদ্ধ তৰ্পণ ও মস্তক মুগুন ইত্যাদি। যাহারা পাপের মহিমা কীৰ্ত্তনে শতমুখ হইয়াছিলেন সকলেই উঠিয়া দাড়াইলেন।