পাতা:প্রবাসী (একত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৭৭৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দেশের পথে ঐসতীশচন্দ্র ঘটক > জগা, মধা আর বন তিনজনে একসঙ্গে কটক ছেড়ে কলকাতায় পাড়ি দিলে। বউ ছেলে মা বোন পড়ে রইল, কিন্তু উপায় কি ? তারা ত অনাচারী বাঙালী নয়। তাদের সমাজে এখনও বিদেশে পা দিলে মেয়েদের জীত যায়—আর জাত পোয়ানোর চেয়ে দেশে পড়ে মর যে অনেক শ্রেয় এ-কথা উৎকল নীতিশাস্ত্রে লেখে। অবশ্য প্রশ্ন হ’তে পারে যে, প্রাণের দায়ে নিজেরা দেশত্যাগ করার চেয়ে মেয়েদের সঙ্গে সহমৃত্যু বরণ করা কি শ্রেয় নয়, কিন্তু অকারণ মৃত্যু-সংখ্যা বাড়ানোর বিরুদ্ধে পুরুষজাতির একটা স্বাভাবিক বিদ্বেষ আছে—এবং তার সপক্ষে নীতিশাস্ত্রের কোন স্পষ্ট অনুশাসন নেই। চামড়-ঢাকা হাড়ের কাঠাম নিয়ে তিন বন্ধু যখন হাবড়া ষ্টেশনে নামল, তখন তাদের মনে হ’ল তারা একটা স্বৰ্গ-রাজ্যের দ্বারে উপস্থিত—কেন-না, যার দিকেই তারা চায় তারই গোলগাল নধর চেহারা। কেউ রাস্তায় দাড়িয়ে শাকের ডাটা চিবোচে না—কেউ তা ছে মেরে কেড়ে নিয়ে পালাচ্চে না । কিন্তু একটু পরেই তাদের শুকৃনো চোখের গৰ্ত্ত দিয়ে ই-এক ফোটা ময়লা জল উকি মারতে লাগল। সেই জল যেন নীরব ভাষায় বলতে লাগল—‘হায়, কোথায় এলুম আমরা, আর কোথায় রইল তারা।” নিজের প্রাণের আশা ইলেই প্রিয়জনের প্রাণের জন্য একটা তীব্রতম দরদ জেগে ওঠে । চোখের জল মুছে নিয়ে তারা ভিক্ষা করতে লাগল। সন্ধ্যার আগেই সাতটা পয়সা এবং সের-খানেক চাল রোজগার করে তার বুঝলে, তাদের জগড় নাথ এখন পালিয়ে এসে কলকাতাতেই আডড নিয়েচেন। তিন পয়সার মুড়ি কিনে তারা বড়বাজারের ফুটপাথে বসে এাণভরে চিবোলে এবং রাস্তার কলের পরিষ্কার জল আঁজলী অঁাজল গিলে তিন মাসের জঠর-জালাকে বেশ খানিকট নিৰ্ব্বাণ করলে । যে-দেশে হাত পাতলেই এত পাওয়া যায় সে-দেশে কাজ করলে যে আরও কত পাওয়া যাবে, তা বুঝতে তাদের একটুও দেরি হ’ল না। তার কাজের সন্ধানে ঘুরতে লাগল এবং আশ্চৰ্য্য এই যে, সাত দিনের মধ্যেই তাদের বেকার ভিক্ষুকত্ব ঘুচে গেল। কলকাতায় কাজও এত সস্তী । জগ৷ বাইসমানি কাজে ভৰ্ত্তি হয়ে বেশ দু-পয়সা কামাতে লাগল। বনা পাইপে ক’রে রাস্তায় জল ছড়ায়, আর সকাল সন্ধ্যায় একজনের বাড়িতে পেটভাতায় কাজ করে। তারা মাস মাস দু-চার টাকা বাড়িতে মনি-অর্ডার ক’রে পাঠাতে লাগল এবং কটকের পিয়নগুলোস্কন্ধ যদি না চোর হয়ে উঠে থাকে, তাহলে তাদের বউ ছেলেদেরও একটা কিনারা হচ্চে এই কল্পনার আনন্দে তাদের হাড়ের উপর তাল তাল মাংস লাগতে লাগল। মধার চেহারা কিন্তু বড়-একটা ফেরেনি। তার কণ্ঠার হাড় এখনও জেগে আছে। সে এক উকীলবাবুর বাড়িতে চাকরি জুটিয়েছে বটে, কিন্তু চাকরির সন্ত বড়ই ভয়ঙ্কর। তিন বছরের জন্য সে মাইনেও পাবে না, দেশেও যেতে পাবে না। তার বদলে উকীলবাবু অগ্রিম ৭২ টাকা দিয়ে তার এক নিষ্ঠুর মহাজনের মায় স্বদস্নদ্ধ সমস্ত দেনা শোধ করবেন। উকীলবাবু সৰ্ত্তের নিজ অংশ পালন করেচেন—এখন মধা তার অংশ চোখ কান বুজে পালন করচে। সে যে একদিন ফাকি দিয়ে অর্থাৎ পালনীয় সৰ্ব অসম্পূর্ণ রেখে দেশে চম্পট দেবে, এমন পথ উকীলবাবু রাখেন নি। তিনি তার নামধাম নাড়ীনক্ষত্র সব টুকে নিয়েচেন, এমন কি টিপ-সই পৰ্যন্থ নিয়ে স্থানীয় দ্বারোগাবাবুর কাছে পাঠিয়ে দিয়েছেন। মধা ইংরেজ রাজত্বের মধ্যে কোনো পিপড়ের গৰ্ত্তে গিয়ে