পাতা:প্রবাসী (একত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৭৭৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ԳՖ օ প্রবাসী—ফাঙ্কন, ১৩৩৮ ! ৩১শ ভাগ, ২য় খণ্ড লুকোলেও সেখান হ’তে তাকে টেনে বের করে আনা হবে—এবং তারপর এমন কোনো জায়গায় তাকে পাঠিয়ে দেওয়া হবে যেখানে গরুর মত ঘানি টেনে তেল বের করতে হয়। স্বতরাং দুঃখ ও আতঙ্কে মধা যে তার দেহে তেল সঞ্চয় করতে পারচে না, তা খুবই স্বাভাবিক। এখন প্রশ্ন হ’তে পারে, মধা এমন ভয়ঙ্কর কড়ারে নিজেকে আবদ্ধ করলে কেন ? এ যে তিন বছরের জন্ত নিজেকে একরকম বেচে ফেলা। কিন্তু বেচে ফেলা ছাড়া তার উপায় কি ছিল ? মহাজনের দেন না শোধ করলে এতদিন যে তার দেশের ভিটেবাড়ি পর্য্যন্ত নিলামে উঠত—তার বুড়ে মা ও একরত্তি বউকে উদ্বাস্থ হয়ে গাছতলায় মাথা গুজতে হত। আর একটি প্রশ্নও হ’তে পারে। উকীলবাবু একজন শিক্ষিত বাঙালী হয়ে সেই উৎকলী মহাজনের চেয়ে কম নিষ্ঠুর কিসে ? মধা একদিনের জন্তও তার বাড়ি ছেড়ে নড়তে পারবে না—সুদীর্ঘ তিন বছর ধরে বিনা মাইনায় ক্রীতদাসের মত খেটে যাবে—এ-রকম ভাবে তার বুকে দাগ দিয়ে তার স্বাধীনতা বেড়ে নেওয়া কি তার উচিত হয়েছিল ? এর উত্তর উকীলবাবুর হয়ে অতি সংক্ষেপেই দেওয়া যেতে পারে। উকীলবাবু জানতেন মধা একদিন সওঁ ভঙ্গ ক’রে পালাবেই, কেন-না, উৎকলীয়দের সত্যরক্ষা সম্বন্ধে তার খুব উচ্চ ধারণা ছিল না। তার চল্লিশ বছরের অভিজ্ঞতায় এটুকু তিনি ধ্রুব সত্য বলে জেনেই মধাকে একটু ভয়ের বাধনে বেঁধেছিলেন মাত্র। ভাল ক’রে চোখ-কান ফোটার আগে সে যদি পােচ সাত মাসও টিকে যায় তাহলে সেইটুকুই উকীলবাবু পরমলাভ ব’লে মনে করবেন—মনে করবেন তাতেই তার বদান্ততার ৭২ টাকা উস্থল হ’ল—কেন-না, তার সংসারে আজকাল কোনো চাকরই পাঁচ-সাত দিনের বেশী টিকচেনার্তার দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রীর কণ্ঠঝঙ্কারের গুণে। মধা পলাতক হ’লে তিনি যে সত্যই তার পিছনে হলিয়া দিয়ে পুলিসের ডাল কুত্তো লেলিয়ে দেবেন, এমন ইচ্ছা তার একটুও ছিল না। তবে সে যদি রিক্ত হন্তে না-পালিয়ে মোট রকম কিছু চক্ষু দান ক’রে পালায় তাহলে অগত্যা নামধাম টিপসইয়ের সদ্ব্যবহার করতে হবে। - উকীলবাবুর চল্লিশ বছরের অভিজ্ঞতায় ঘুণ ধরতে বসেচে। যতই দিন যাচ্ছে ততই তিনি বুঝতে পারচেন যে, মধ্য সে-জাতীয় মানুষ নয়, যারা সত্য ভঙ্গকেই সত্যরক্ষার একার্থবোধক বলে মনে করে। তার চোখেমুণে এখনও একটা সরল নিরীহতার ছাপ—যা কোনো দিনও নিমকহারামিতে পরিণত হবে ব’লে আশঙ্কা করা যায় না। সে যে উকীলবাবুর দয়ালুতারগুণেই মহাজনের নৃশংসকবল হতে পরিত্রাণ পেয়েছে—এটুকু যেন সে কিছুতেই ভুলতে পারচে না । সে যেন তার কৃতজ্ঞতাকে কেবলই ব্যক্ত করতে চায় তার অনলস কৰ্ম্মনিষ্ঠার ভিতর দিয়ে—এবং মোট ভাতের সঙ্গে গৃহকত্রীর, মোটা বকুনির বুকনিকে বিনাবাক্যব্যয়ে হজম করে। আর একটা মাস দেখে উকীলবাবু যে মধাকে তার অপ্রিয় কড়ারের হাত হতে মুক্তি দেবেন— অর্থাৎ তাকে মাস মাস মাইন ও মাঝে মাঝে দেশে যাবার অনুমতি দিয়ে পুরস্কৃত করবেন, এ-রকম একট সদিচ্ছা উকীলবাবুর মাথায় আজকাল উকিঝুকি মারছে। মধা যে মাইনে পায় না, থাটে আর খায়—একথা অবষ্ঠ জগা ও বন কেউজানে ন—লজ্জার কথা বলেই মধ, তাদের কাছ থেকে গোপন করেছে। তবে তারা এটুকু লক্ষ্য করেচে যে, মধ্য কোনদিনই একটা মনি-অর্ডার করে না। তারা ত জানে না যে, উকীলবাবুর স্ত্রী তাকে পানগুঞ্জীর জন্য রোজ যে একটা পয়সা ক্রুদ্ধ হাতে ছুড়ে ফেলে দেন—তাই হচ্চে তার চাকরি-জীবনের একমাত্র আর্থিক সম্বল। তারা মনে করে সে মাইনের টাকাটা আত্মবিলাসেই নিয়োগ করে। হায় আত্মবিলাস । সে উৎকলীয় হয়েওঁ দিনাস্তে একটু পানগুঞ্জী মুখে দেয় না—যা কসের মধ্যে না পুরে দিলে সে আগে ঘুমতে পৰ্য্যস্ত পারত না। সে বড়জোর আজকাল দু-এক কুচি স্থপুরি মুখে দিয়ে তার পানগুঞ্জীর সাধ মেটায়—কেন-ন, এই পানগুঞ্জীর পয়সাটা না বাচালে সে কি দেশে পাঠাবে ? কিন্তু—হায়, পয়সগুলো ত খুব তাড়াতাড়ি জমচে না—এতদিন ধরে জমিয়েও তার পুজি হয়েছে মোটে পাচসিকে। বৈঠকখানার সংলগ্ন যে ছোট কুঠুরীটি উকীলবাবুর চাকরের জন্য নির্দিষ্ট ছিল তা নেহাৎ অপ্রশস্ত ছিল না ! জগা ও বন প্রত্যহ তার পাশে গুয়েই রাত্রি যাপন করে