পাতা:প্রবাসী (একত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৭৮০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

«ጫ oy ] যায়। রাত বারোটার সময় তারা যখন বিড়ি মুখে দিয়ে হাসতে হাসতে তার ঘরে আডিডা দিতে আসে, তখন তারা প্রায়ই দেখে সে হাটুর উপর চিবুক রেখে কি যেন ভাবচে। জগা হয়ত বন্ধুস্থলভ আক্ষেপ করে বলে—“তুই ভেবে ভেবেই শরীর সারতে পারছিল না—কি ভাবিস্ ? বন ঈষৎ ভংগনার স্বরে বলে—‘ভাবে মাথা আর মুণ্ডু—আর যাই ভাবুক্‌ মা-বউয়ের জন্য ভাবে না। নইলে উপরি গণ্ডা না পায়, মাইনের টাকাই কোন বাড়িতে পাঠায় ? জগা সমঝদার রসিকের মত চোখ মিটুমিচ্‌ ক’রে বলে— "কখন কাকে দিল বলত।’ মধ। অসোয়াস্তির সঙ্গে একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে বলে—“নে, বকাসনি। শুবি ত শে—আমার বড় ঘুম পাচ্ছে।’ সেদিন সন্ধ্যার সময় মধবাবুর জন্য তামাক সাজ ছিল । সে একমনে টিকেয় ফু দিতে দিতে ভাবছিল, তার কি আছে । চাল থাকলে কি হয়, চলো কি জলে ? এতদিনে জমলে কিনা মোটে পাচসিকে পয়সা যদি মানুষের মত বংশবৃদ্ধি করতে পারত, তাহলে ঐ পাচসিকেই এতদিনে পঞ্চাশ সিকে হয়ে দাড়াত। তাহ’লে সে কি এমন মনমরা হয়ে বসে থাকে ? এক লাফে পোষ্টাপিসে গিয়ে— সহসা তার চিম্ভার স্বত্রকে ছিন্ন ক’রে দিয়ে শব্দ হ’ল— ‘মধারে—এই মধা আমরা দেশে যাচ্ছি। সে চমকে উঠে চেয়ে দেখে জগা আর বন । তাদের দুজনের বগলে দুই ছাতি—পিঠে দুটাে বোচক। তাদের মুখ দিয়ে আনন্দের আলো ঠিকৃরে পড়চে । “তুই যাস ত চলন আমাদের সঙ্গে” জগা উৎসাহের সঙ্গে বললে। চোখ নীচু করে মধা বললে—“কি ক’রে যাব ? বাবুকে ত আগে বলিনি।” বন চালাকের মত চোখ ঘুরিয়ে বললে— "কেন বদলি দিয়ে যাবি। এই যে আমরা যাচ্ছি কি করে ? কাল ত কিছুই ঠিক ছিল না—আজ সকালে ইজনে মতলব করে গেলুম দুজনের বাবুর কাছে একেবারে বদলি সঙ্গে নিয়ে। ব্যস, কাজ হাসিল—তুইও ব’লে দেখ, নী—তোর বাবুকেও ত তেমন ছেচুড়া বলে মনে হয় না। মধার চোখ বোধ হয় চুলকে কিংবা করকর করে উঠল। সে টিকের কালিমাখা আঙল দিয়ে চোখ "দেশের পথে

  • > 》

রগড়াতে রগড়াতে বললে—“না রে ভাই, সে হবে নএখন কি ক’রে বলব ? এই বড়দিনের বন্ধে বাবুর দেশের লোক এসেচে—কাজও বেড়েচে । এখন কি আর নতুন লোক দিলে চলে ? এখন কখনও ছুটি দেয় ?” টাটুকিরীর স্বরে জগ ব’লে উঠল—“দেয়—দেয়, একমাসের জন্তে বই ত নয়। তুই বলেই দেখ না। তুই যে আগে থাকৃতেই কেঁচো হয়ে যাস। কোন উত্তর না দিয়ে মধা বার-বার চোক গিলতে লাগল। তার পিঠে একটা বড়গোছের ধাক্কা মেরে বন বললে—“ষা না চেষ্টা করেই দেখ না, বেশ তিন জনে একসঙ্গে যাব, সে ভাল নয় ? এর পর একলা কার সঙ্গে যাবি ? যা, যা একটু গুছিয়ে বললেই হবে, বদলির লোক এখনই এনে দেব।’ জগা আর বনার-নিৰ্ব্বন্ধে পড়ে মধা কলকে নিয়ে আস্তে আস্তে তার মনিবের ঘরে ঢুকল। উকীলবাবু তখন টেবিলের উপর ঘাড় গুজে কি যেন লিখছিলেন—সে পা টিপে টিপে তার পাশে গিয়ে দাড়িয়ে গড়গড়ার মাথায় কলকে বসিয়ে দিলে, কিন্তু মুখ দিয়ে তার কোনো কথাই সরল না। সে কোন মুখ দিয়ে দেশে যাওয়ার কথা বলবে ? সে যদি মুখ ফুটে বলতে পারত তাহলে খুব সম্ভব তার প্রার্থনা ব্যর্থ হ’ত না। কিন্তু সে ত জানে না সে নিজেকে যতটা ক্রীতদাস বলে মনে করে তার বাবু ততটা করে না । সে একবার চোক গেলে, একবার মাথা চুলকোয়। একবার উস্থুস করে, একবার দরজার দিকে চেয়ে দেখে জগ বন দূর হতে আড়িপেতে শুনচে কি না । হঠাৎ উকীলবাবুর চমক ভাঙল—তিনি মধার দিকে চেয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, “কিরে ?’ মধা হাত কচলাতে কচলাতে বললে, “আজ্ঞে এই একটু—এই. একটু যাব। ‘কোথায় রে ? উকীলবাবু সরলভাবে প্রশ্ন করলেন। কিন্তু ঐ ছোট্ট প্রশ্নের ধাক্কায় মধা একেবারে ঘাবড়ে গিয়ে বললে, “আজ্ঞে আজ্ঞে—এই ওদের গাড়ীতে তুলে দিয়ে আসতে— এই জগা আর বনাকে P ও আচ্ছা ব’লে উকীলবাবু আবার ঘাড় গুজে কাজ করতে লাগলেন। মধা ঘর থেকে লাফিয়ে বেরিয়ে এসেই সঙ্গীদের বললে, চল—ইটশান পৰ্যন্ত যাই। বাৰু ইষ্টশান পৰ্যন্ত যাবার