পাতা:প্রবাসী (একত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৮৬৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ঐীশাস্তু দেবী মোহেঙ্কোদড়ো দেখার পর একবার নিকটবৰ্ত্তী ডুক্রির বাজারটা দেখিয়া যাইব ভাবিলাম। বাজারের পথে টাঙ্গ ঢুকিবামাত্র দোকানে দোকানে ও পথের দুইধারে বিস্ময়স্তম্ভিত লোকের ভিড় জমিয়া গেল। বাঙালীর মেয়ে তাহার কখনও দেখিয়াছে মনে হইল না। বিস্ময় যখন সীমা ছাড়াইয়া উঠিল, তখন আরম্ভ হইল সকলে মিলিয়া গাড়ীর পিছনে দৌড়ানো। একটা দোকানের সামনে টাঙ্গা থামিতেই ছোট ছোট মেয়েরা একেবারে আমার গায়ের উপর আসিয়৷ ছমড়ি খাইয়া পড়িল। অভিভাবকদের মান তাহারা শুনিল না। কেহ আমার জুত, কেহ শাড়ির পাড়, কেহ হাতের চুড়ি হাত দিয়া ছুইয়৷ ছু ইয়া তারিফ করিতে লাগিল। বাজারে কি আর দেখিব ? তাই, দোকানদারদের ভাল ছিটের কাপড় দেখাইতে বলিলাম। বলিতেই বিলাতী আর্ট সিদ্ধের বোঝা আনিয়া হাজির ! অনেক কষ্টে বুঝাইয়৷ দেশী ছাপানো চাদর কয়েকটা আবিষ্কার করা গেল ; সেগুলা দীন দরিদ্র সকলেই গায়ে দিয়া বেড়ায়, কিন্তু তাহার রূপ মাছে। দামও কলিকাতা এবং বোম্বাই বাজারের অৰ্দ্ধেক । ভিড়ের মধ্যে ছেলেদের মাথায় দেখিলাম মুন্দর স্বন্দর রেশম ও অভ্রের কারুকার্ষা করা টুপি, জরির টুপিও দুই একটা। কিনিতে চাহিলে পাওয়া গেল না। হাতের কাজ চাহিলে একজন কয়েকটা সাদা স্থতার বিলাতী টেবিল ঢাকা আনিয়া দেখাইল, নিতান্ত ছেলেমান্থী বিলাতী নক্সার নকল কাজ করা। নিজেদের দেশের পুরাতন খাটি শিল্পের কাজগুলিকে ইহারা ধর্তব্যের মধ্যেই আনে না। ফিরিবার পথে সিন্ধু দেশের হায়দরাবাদে একবার নামিলাম। শহরটি অতান্ত আধুনিক। প্রকৃতি এখানে অনেকটা বাংলা দেশের মত। সিন্ধু দেশের অনেক জায়গায়ই খাল কাটয়া জল আনিয়া শস্তক্ষেত্ৰ তৈয়ারি হইয়াছে। আগে দেখিয়াছি রাজপুতানা ও সিন্ধুদেশের মাঝামাঝি জায়গায় ঘন সবুজ শস্তক্ষেত্র, আকাশে পার্থীর বাৰ, বক চিল উড়িয়া চলিয়াছে, দূরে বড় বড় গাছ, মাঝে মাঝে ডিজামাটি। এসব ক্ষেত্রই খালের জলে পরিপুষ্ট। কিছু দূর রাজপুতানার মরুভূমির মত জমি, আবার তাহার কাছেই সারি সারি কাটা খাল ও পাশে পাশে সবুজ শস্তক্ষেত্র। কোথাও রেল লাইনের একধারে মরু আর একধারে চাষবাস, গাছপালা । সিন্ধু দেশের পোষাক-পরিচ্ছদ, রাজপুতানা হইতে একেবারে স্বতন্ত্র। এপানে পুরুষদের হাজার রঙের পাগড়ী অন্তহিত হইয়া কালে টুপি দেখা দিয়াছে, পোষাক কোট ও ঢিলা পাজামা অথবা পুরা সাহেবী ড্রেস । অল্পবয়স্ক অনেক সিন্ধী বালককে দেখিয়া ফিরিঙ্গী বলিয়া ভ্রম হয়। মেয়েদের পোষাকে কোনো সৌন্দর্যই চোপে পড়ে না। অধিকাংশ সাদা ঢিলা পাজামা, সাদা জাম} ও সাদা ওড়না। পাজামা পেশোয়াজ কি চুড়িদার কিংবা ঘোরানো নয়, রঙের খেলাও পোষাকে প্রায় নাই। দুই একটি মেয়েকে বিলাতী রঙীন সিঙ্কের পাজামা পরিতে দেখিয়াছি, কিন্তু তাহাও স্বধৃত নয়, ইহাতে শাড়ী কি. ঘাঘরার ভাজ ও দোলা নাই, আবার কাটা পোষাকের মাপ ও যুতসই কোনো কাটও নাই। ঘোমটাহীনঅনেক অল্পবয়স্ক সিন্ধী মেয়েকে দেখিলাম বাঙালীর মত শাড়ী পরা। তাহারা দেখিতেও বাঙালীরই মত, কেবল অনেকে লম্বায় একটু বড়। পুরুষদের মুখের ভাব খুব বেশী বাঙালীর মত, তবে বাঙালীর সঙ্গে তাহদের কাহারও কাহারও লম্বা চওড়া শরীরের তুলনা চলে না। এ দেশের খান্তেও বাঙালীর মত মৎস্যের প্রাধান্ত দেখা যায়। খাবার দিবার জন্ত পাতার ঠোঙ্গ এত পথ পরে এখানে আবার চোখে পড়ে। হায়দারাবাদ ষ্টেশনের কাছেই মাটিলেপ বিরাট একটি কেল্লা । ট্রেন হইতেই সমস্ত শহরটা দেখা যায়, প্রত্যেক