পাতা:প্রবাসী (একত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৯৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Ꮟ ☾b~ গালাগালি করে... । তারপর কোথাও কিছু খাওয়া । ময়দানের কোন এক ছায়া-গাছের তলায় গিয়া একটু বিশ্রাম। ছবি আঁকা। তারপর আবার ঘুরিয়া বেড়ান। দিনগুলি যেন নদীর জলে-পড়া পাতা,—এ স্রোতে ও-স্রোতে ভাসিয়া চলে, নাচিয়া যায়। কি চমৎকার! হঠাৎ ঘরের কড়া নড়িয়া ওঠে । অজয় ভাবে হয়ত পাশের ঘরের মাম্রাজী ছেলেটা নয়ত ব্যারাকের ওদিককার পাঞ্জাবী পরিবারের ছোট্ট মেয়োট। মনটা খুশীই হয়--- দরজা খুলিয়া চমকিয়া উঠিল। তার এক সময়কার বন্ধু মঞ্জলীর দাদা। অচিন্তানীয় ব্যাপার,—কেন ? এমন কি প্রয়োজন পড়িয়াছে যে এতদিন পরে রাজার ছেলে আসিয়া আবার তার দরিদ্র ঘরে উপস্থিত হইয়াছে। --তুমি শেষে বেরিয়ে যাবে, তাই খুব ভোরে জেগে উঠেই আসতে হ’ল। —এস, কিন্তু হঠাৎ কেন ভাই ? সে তার উদ্দেশু বলিয়া গেল।.নন্দনপুরের যুবক জমিদারের সঙ্গে তার বাবা. মঞ্জলীর বিবাহ ঠিক করিয়াছে । কিন্তু নিৰ্ব্বোধ মেয়েট লাকিয় বসিয়াছে এখন । তার কাগুজ্ঞান লোপ পাইয়াছে নিশ্চয়, নইলে রূপে-গুণে এমন পাত্রকে অবহেলা দেখায় কখনও ? অকুনয়, উপদেশ, ভৎসন—সবষ্ট ব্যর্থ হইয়াছে। এখন অজয় শুধু ভরসা। কেন যে মধুলীর এমন মনোভাব, অজয় হয়ত জানে, কিন্তু তাহা যে তার মঙ্গলের হইবে না তাহা কি অজয় বুঝিতে পারে না। অন্তত আর কিছু না হউকৃ, মঞ্জলীর স্বগের জন্য অজয় তাকে ও-বিবাহে রাজী করুক। তার করা উচিত।-- অজয় ক্ষণকাল চুপ করিয়া রহিল। মঞ্জলীর স্বখের জন্য জীবন দিতে পারে সে—তার জন্য কি সে করিতে পারে না ? সত্যই তে, তার জন্য মঞ্জুলীর ধে মায়া সেট মঞ্জুলীর মুখের হইবে না কখনও । সে ঘর-ছাড়া ক্ষ্যাপী বৈরাগী, বিত্তহীন, খামখেয়ালী । অজয় রাজী হইল। হঁ্যা, বলিবে মঞ্জুলীকে । হয়ত চোখে একটু বাষ্প ঘনাইয়া আসিল, কিন্তু সে তাড়াতাড়ি চাপিয়া ফেলিল । প্রবাসী—চৈত্র, ১৩৩৮ [ ৩১শ ভাগ, ২য় খণ্ড সরকারী বাগানের এক বাদাম গাছের তলায় অৰ্দ্ধ শয়ানে অজয়ের দুপুরটা কাটে। ছবি আঁকিতে চেষ্টা করিয়াছিল, পারে নাই। মনের লক্ষ ভাবনা আজ তাহার উদভ্ৰান্ত হইয়া উঠিয়াছে। মঞ্জুলীকে আজ একটা জবাব দিতে হুইবে,— ভালবাসে কি না ? অন্তর্যামী জানেন কোনটা সত্য, কি তাহার প্রাণের কথা, তাহার চেতনার বাণী । কিন্তু তাহা বলিলে তো চলিবে না । .নন্দনপুরের জমিদার খুবই যোগ্য পত্রি, রূপে গুণে । আর সে লক্ষ্মীছাড়া । সে শুধু ছবি অাকে, শুধু খেয়ালের রূপ দেয় । বেশ, কি জবাব দিবে সে ঠিক করিয়া ফেলিয়াছে। বুকটা হু হু করে, করুক। চোখে যদি জল ঘনাইয়৷ আসে, জামার হাতায় মুছিয়া ফেলিবে । সন্ধ্য হইল। পথে পথে গ্যাস জলিল। দখিন হাওয়া জাগিল । কৰ্ম্মব্যস্ত নগরীর উপর কেমন একটা বিশ্রামের আমেজ, কেমন একটা শাস্তির ছায়া । ষ্ঠাটিতে ঠাটিতে চমকিয়া অজয় এক সময় দেখিল মধুলীদের বাড়ির পথে আসিয়া পৌছিয়াছে। ঐ ভো মঞ্জুলীর ঘরে আলে জলিতেছে! কে জানে, কাছে গেলে এস্রাজের সুরও হয়ত শোনা যাইবে । এ ধারের ওধারের বাড়ি হইতে গানের মুর ভাসিয়া আসে । হাসির টুকুর, . শিশুর আনন্দ-চীংকার। জীবন এখানে আনন্দে ভরিয়া আছে, পূর্ণতায় ডগমগ করিতেছে । আর তার ছন্নছাড়া জীবনের চরম बार्बेड এখান হইতেই বহন করিয়া লইতে হইবে তাহাকে \, ঐ তো জানলা ধরিষ্ক মধুলী দাড়াইয়া আছে! অকস্মাৎ অজয়ের ভিতরটা মোচড় দিয়া উঠিল । মধুলী, মঞ্জুলী ! অমন দুটি চোখ কোথা হইতে চুরি করিয়া আনিয়াছিল মঞ্জুলী। তার রামধন্স-বাকী দুটি ভুরু, তার কপালে আসিয়া পড়া আঙুর অলক, তার গ্রীবাভঙ্গী, তার—যাকৃ। কি হইবে ভাবিয়া ? মধুলীকে ছাড়িতেই হুইবে । মায়ার পাশ ছিড়িয়া ফেলিতে হুইবে তাহাকে । তবু খামখেয়ালীর বুকে বেদন জাগে, নিবিড়, হয়ত অসঙ্ক । যখন দিনের পর দিন সন্ধ্যাতারা উঠিবে, যখন রূপালী