পাতা:প্রবাসী (একত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/১২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Ye 8 প্রবাসী—বৈশাখ, ১৩৩৮ ©♥ ভাগ, »ች היצe ] যেন মনে হয় এ স্থধামাখা দেববাণী—কথার মধ্যে কি অপূৰ্ব্ব শবসঙ্গীত ! তাহ ছাড়া প্রত্যেক কথাটা অপুর মনে বিস্ময় জাগায়। স্কটির আদিম যুগ হইতে কোনো শিশু যেন কখনও "বাবা’ বলে নাই, "জল" বলে নাই,— কোন অসাধ্য সাধনই না তাহার খোকা করিতেছে ! পথে বাবার সঙ্গে বাহির হইয়াই থোকা বকুনি মুরু করে । হাত পা নাড়িয়া কি বুঝাইতে চায়—অপু না বুঝিয়াষ্ট উৎসাহের সুরে ঘাড় নাড়িয়া বলে—ঠিক ঠিক ! তার পর কি হ’ল রে খোকা ? একটা বড় সাকো পথে পড়ে, খোকা বলে—বাবা যাব-ওই দেখব । অপু বলে—আস্তে আস্তে নেমে ঘা—নেমে গিয়ে একটা কু-উ করবি— থোকা জান্তে ঢালু বাহিয়া নীচে নামে -জলনিকাশেব পথটার ফাকে ওদিকের গাছপালা দেখা যাইতেছে—ন। বুঝিয়া বলে—বাবা, এই মধ্যে একতা বাগান—কু করে তো থোকা, একটা কু করে ? খোকা উৎসাহের সহিত বাশির মত স্বরে ডাকে— কু-উ-উ-উ-পরে বলে—তুমি কলুন বাবা ?— . অপু হাসিয়া বলে-কু-উ-উ-উ-উ থোক আমোদ পাইয়া নিজে আবার করে—আবার বলে—তুমি কলুন ...বাড়ী ফিরিবার পথে বলে, খপিছাক এনে বাবা-দিদিমা থপিছাক জাড়বে—খপিছাক ভালো— —কপি তুই ভালবাসিস থোক ?...এবার খুব বড় দেখে আনব । কলিকাতা ফিরিবার সময়ে অপর্ণার মা বলিলেন— বাবা, আমার মেয়ে গিয়েছে, যাক-কিন্তু তোমার কষ্ট হয়েছে আমার বেশী। তোমাকে যে কি চোখে দেখেছিলাম বলতে পারিনে, তুমি যে এ-রকম পথে পথে বেড়াচ্চ, এতে আমার বুক ফেটে যায়, তোমার মা বেঁচে থাকলে কি বিয়ে না করে পারতে ? খোকনের কথাটাও তো ভাবতে হবে, একটা বিয়ে কর বাবা । নৌকায় আবার পীরপুরের ঘাটে আসা। অপর্ণার ছোট খুড়তুত ভাই ননী তাহাকে তুলিয়া দিতে আসিতেছিল। খররেীত্রে ‘বড়দলের নোনাজল চকু চক্‌ করিতেছে । মাঝ নদীতে একখানা বাদাম-তোলা মহাজনী নৌক, দূরে বড়দলের মোহনার দিকে স্বন্দরবনের ধোয় ধোয়া অস্পষ্ট সীমারেখা । —আশ্চৰ্য্য ! এরই মধ্যে অপর্ণ যেন কত দূরের হইয়া গিয়াছে ! অসীম জলরাশির প্রাস্তের ওই অনতিস্পষ্ট বনরেখার মতই দূরের—অনেক দূরের ! অপুদের ডিঙিখানা দক্ষিণতীর ঘেষিয়া যাইতেছিল, নৌকার তলায় ছলাৎ ছলাৎ শব্দে ঢেউ লাগিতেছে, কোথায় একটা উচু ডাঙা, কোথাও পাড় ধসিয়া নদীগর্ভে পড়িয়া যাওয়ায় বঁাশঝোপের শিকড়গুলা বাহির হইয়া ঝুলিতেছে। একটা জায়গায় আসিয়া অপুর হঠাৎ মনে হইল, জায়গাটা সে চিনিতে পারিয়াছে—একটা ছোট · থাণ, ডাঙার উপরে একটা হিজল গাছ । এই খালটিতেই অনেকদিন আগে অপর্ণাকে কলিকাতা হইতে আনিবার সময়ে সে বলিয়াছিল—ও কলা-বেী, ঘোমটা খোল, বাপের বাড়ির দ্যাশটা চেয়েই দ্যাথো— তারপর ষ্টীমার চড়িয় খুলনা, বা দিকে সে একবার চাহিয়া দেখিয়া লইল । ওই যে ছোট খড়ের ঘরটি, প্রথম যেখানে সে ও অপর্ণা সংসার পাতে । সেদিনকার সে অপূর্ব আনন্দমূহূৰ্ত্তটিতে সে কি স্বপ্নেও ভাবিয়াছিল যে এমন একদিন আলিবে, যেদিন শূন্তদৃষ্টিতে খড়ের ঘরখানার দিকে চাহিয়া দেখিতে দেখিতে সমস্ত ঘটনাটা মনে হইবে মিথ্যা স্বপ্ন ? নিশিমেষ, উৎস্বক, অবাকৃ চোখে সেদিকে চাহিয়৷ থাকিতে থাকিতে অপুর কেমন এক দুৰ্দ্দমনীয় ইচ্ছা হইতে লাগিল—একবার ঘরখানার মধ্যে যাইতে, সব দেখিতে হয়ত অপর্ণার হাতের উকুনের মাটির ছিটা এখনও আছে—যেখানে বসিয়া সে অপর্ণর হাতের জলখাবার খাইয়াছিল। প্রথম যেখানটিতে অপর্ণা ট্রাঙ্ক হইতে আয়নাচিরুণী বাহির করিয়া তাহার জন্ত রাখিয়া দিয়াছিল••• ট্রেনে উঠিয়া জানালার ধারে বসিয়া থাকে। ষ্টেশনের পর ষ্টেশন আসে ও চলিয়া যায়, অপু শুধুই ভাবে বড়দলের তীর, চাদাৰ্কাটার বন, ভাটার জল কলকল করিয়া নামিয়া যাইতেছে,...একটি অসহায় ক্ষুদ্র শিশুর জবোধ, হাসি-•• ক্রমশঃ