পাতা:প্রবাসী (একত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/১৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Ֆ ՖԵ চেয়ার ও বেঞ্চির চারিদিকে পায়চারি করে, বড় আয়নাটায় মুখ দেখে, সঙ্গের যুবকটিকে বয়স্ক লোকটির অন্ধ,ক্ষো একটি ঠোনা মেরে অল্পক্ষণের মধ্যেই সে এক্ট মৃতকল্প পরিত্যক্ত ঘরখানিকে জীবনের মুথরতায়, উল্লাসে, দীপ্তিতে, গৌরবে একেবারে রোমাঞ্চিত ক’রে তুলল। দীর্ঘ পথ গাড়ীর মধ্যে অতিক্রম ক’রে এসে সে যেন মুক্তির আননে অধীর হয়ে উঠেছে। যুবকটি ভঙ্গায় কাতর হয়ে পড়েছিল, এই মেয়েটির সঙ্গে পাল্লা দিতে না পেরে সে আস্তে আস্তে একটা বেঞ্চিতে পা ছড়িয়ে শুয়ে পড়ল । বয়স্ক লোকটি স্নেহের কাসি হেসে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে স্বন্দর পাঞ্জাবী ভাষায় বলল,—সমস্ত পথটা তুমি ঘুমিয়েছ, আর আমরা জেগে বসেছিলাম ! এবার ঘুম পাচ্ছে, বিরক্ত করো না কিন্তু চুপটি ক'রে বসে থাক লক্ষ্মীটি, গাড়ী আসতে এখন অনেক দেরী ! মেয়েটি ইজি-চেয়ারে বসে পা দুলিয়ে দুলিয়ে হাসতে লাগল। হাদি তার সব-কিছুতেই। ঘরের কড়িকাঠের দিকে তাকিয়েও তার হাসি থামে না। কতক্ষণ কেটে গেছে। যুবকটির নাক-ডাকার বিচিত্র শব্দ শুনে মেয়েটি সকৌতুকে তার দিকে এক-একবার তাকাচ্ছিল। হঠাৎ তার চঞ্চল দুটি চোখের তারা স্থির হয়ে গেল "প্রীংয়ের দরজাটার দিকে তাকিয়ে । সোজা হয়ে সে উঠে বসল। মুখ ফিরিয়ে দেখলে, তার চাচা’ তন্দ্রীয় কাৎ হয়ে পড়েছেন । পাছে শব্দ পেয়ে তিনি জেগে ওঠেন এজন্ত চটিজুতোটি সে আস্তে আস্তে ছাড়ল, তারপর পা টিপে টিপে উঠে সে দরজার কাছে এল । দরজার দুটি পাল্লার ঠিক নীচেই বাক্টরে সেই মণিহারীর বাপিটা নামিয়ে ঝুমঝুমিওয়ালা তার পাশে বসেছে। এতবড় লোভ আর সে সংবরণ করতে পারল না, একটুখানি সে হাসল, তারপর মাটিতে ষ্ট্রেট হয়ে পড়ে দরজার নীচে দিয়ে একটি হাত গলিয়ে চুপি চুপি টপ, করে একটি কাচের পুতুল তুলে হাত সরিয়ে নিল । ঝুমঝুমিওয়াল কোনো সাড়াই দিল না। মেয়েটির কিন্তু আগে তা মনে হয়নি । সে ভেবেছিল এ চুরি তার হাতে হাতে নিশ্চয় ধরা পড়বে, তারপর খানিকক্ষণ হবে কাড়াকড়ি, এবং ঠিক তারপরেই জোর করে হাতট ছিনিয়ে সে পালিয়ে আসবে। ছেলেটি চেঁচামেচি করে ঘরে এসে টুকবে, সে তখন বলবে, ইস, তুমি কি আমাকে নিতে দেখেছ ? আমি ত ছিলাম জোর এদিকে ! কে হাত বাড়িয়েছিল তা আমি কি 斑 r—ছেলেটিকে কাদো কাদে হতে দেখলে তবে পুতুলট ফিরিযে দেবে ! সমবয়সী ছেলেকে জবা করতে তার ভারি ভাল লাগে । প্রবাসী—বৈশাখ, ১৩৩৮ [ ৩১শ ভাগ, ১ম খণ্ড মুখের হাসি তার মিলিয়ে গেল। চাচার দিকে একবার ভাকিয়ে দরজার একটা পাল্লা টেনে বাইরে সে মুখ বাড়িয়ে দেখল, দেয়ালে মাথা হেলান দিয়ে অকাতরে ছেলেটি ঘুমিয়ে পড়েছে, ঝাপিন্থদ্ধ চুরি গেলেও তার সে ঘুম হয়ত ভাঙত না । সমস্ত দিন পরিশ্রমের একটি করুণ ক্লাস্তির ছায়া তার নিদ্রিত মুখের ওপর ফুটে উঠেছে । এ অবস্থায় কেউ ষে এমন ক’রে ঘুমুতে পারে মেয়েটির ভl ধারণায় এল না। ইেট হয়ে সে তার স্বাভাবিক অপরূপ কোমল কণ্ঠে ডাকূল, "য়ারা’ ? ফেরিওয়ালা জেগে তাড়াতাড়ি সোজা হয়ে বসতেই সে বলল—তোমার জিনিষ যদি চুরি হয়ে যেত এক্ষুণি ? ছেলেটি তার মাতৃ-ভাষায় বলল, চুরি । এ মাথা ভেঙে দেব না ? তারপরই সে একটা রবারের পার্থী তুলে’ তার পেট টিপে বাণী বাজিয়ে বলল,—লেও, ছে প্যায়সা । মেয়েটি একটু হেসে পায়জামাটা গুটিয়ে ঝাপির কাছে উবু হয়ে বসে বলল,—তোমার সব জিনিস ঠিক-ঠিক আছে ? দেখ দেপি ? ছেলেটি একবার সেদিকে চোখ বুলিয়ে নিশ্চিন্ত হয়ে বলল,—তুমি নাও না, কি চাও...এই নাও ‘মণি ব্যাগ’— দো আনা ! — ও আমার চাইনে । —আচ্ছ, এই নাও জর্দার কোঁটে—এক আন । জরির ফিতা নেবে ? সাত আনা গজ । তবে এই লাটু আছে, লাটু, দো দে প্যায়সা । —লাট্র আমার কি হবে,--মেয়ে মাহুষ ! —তোবে কি লেবে ? "সিস’ চাই ? মুখ দেখবার জনো ? তোমার মুখ স্বন্দোর আছে ! মেয়েটি তার বলবার ভঙ্গী দেখে মুথের দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলল । বলল,- চাইনে—তুমি দেখে তোমার মুখ, দুষ্ট ! নতুন লাইসেন্স পেয়ে ছেলেটি প্রথম কারবার স্বরু করেছে, ক্রেতা চেনবার অভিজ্ঞতা এখনও তার ভাল ক’রে হয়নি। সে বলল, তবে ত’ হায়রাণি, তোমার কাছে কত পয়সা আছে বল, সেই মত জিনিষ বেছে দিচ্ছি । পয়সা ? পয়সা আমি পাব কোথায় ? . ছেলেটি তার মুখের দিকে তাকাল, তারপর শ্লেষের হাসি হেসে অন্ত দিকে মুখ ফিরিয়ে বলল, যাও গিয়ে ঘুমোওগে । মিছামিছি এতক্ষণ— মেয়েটি নড়ল না, নানা রকমের চকচকে ঝলমলে খেলনা এবং নানা সৌধীন জিনিষের মধ্যে তার দৃষ্টি