পাতা:প্রবাসী (একত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/১৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১২• —কোথায় দেখেছিলে ? ঘাড় ফিরিয়ে বদরি একবার রেল-পথের দিকে তাকালো । কোথায় দেখেছে তা সে কেমন করে বলবে ? স্মরণের পরপার পর্য্যস্ত সে একবার হাতড়ে দেখল। সসাগরা ধরিত্রী আর নক্ষত্ৰখচিত অনন্ত আকাশ সে মনে মনে তোলপাড় ক’রে এল । তারপর ঘাড় বেঁকিয়ে বলল, হাঁ, ঠিক আমি চিনি তোমাকে – দেখেছি যে আগে । তার দৃঢ় আত্মবিশ্বাসের দিকে তাকিয়ে শাস্তি হাসল। হেসে বলল,—তাহলে এ জন্মে নয় । দুজনে বসে গল্প চলতে লাগল। শাস্তি বলল, তাদের বাড়ি অমৃতসরে ‘জালিয়ান বাগের কাছেই, আর একটু গেলেই ঘন্টাঘর,”—ওই যেখানে রয়েছে সরোবরের মাঝখানে ‘সোনেক মনূদির’ । পিতা তার রেশমের কারবার করেন । একবার কবে সে লাহোরে গিয়ে ঘোড়দৌড় দেখে এসেছিল !—বদরি বলল,— তাদের বাড়ি এই কাছেই গোয়ালামহল্লায় । বাপ তার দুধ বিক্রী করে। তার মামা হচ্ছে "ধরমশালার’ দারোয়ান । একবার ঝড়ে তাদের বাড়ি পড়ে গিয়েছিল । মা তার পাগলি । চম্পা নদীতে তারা প্রায়ই মাছ ধরতে যায় । একজন থামে আর একজন বলে, এমনি করেই তাদের আত্মবাহিনী গড়িয়ে গড়িয়ে চলল। যে-বন্ধু নতুন এসে জোটে সে আনে নতুন বিস্ময় ! তার হৃদয়টিকে আবিষ্কার করবার জন্ত সমস্ত মনের কৌতুহলের আর সীমা থাকে না ! মুখোমুখী দু’জনে বসে নিজ নিজ অস্তরের কপাট খুলে পরস্পরকে অভিনন্দিত করল। পথচারী ও গৃহবধুর মাঝামাঝি কোনো পার্থক্যই আর রইল না । সমবয়সের নিঃসঙ্কোচ-আলাপের ভিতর দিয়ে এমনি করেই তাদের হ’ল গভীর পরিচয়, প্রীতি, সখ্যতা এবং ভাবের আদান-প্রদান । হঠাৎ তাদের আলাপে বাধা পড়ল একটি কুকুরের প্রাণপণ করুণ চীৎকারে । বেচার বোধ হয় আহারংগ্রহ করতে নেমেছিল লাইনের ধারে, একখানা চলন্ত মালগাড়ীর চাকায় লেগেছে ধাক্কা । কুকুরটা চীৎকার করতে করতে এদিকের প্লাটফরমে যখন উঠে এল, শাস্তি দেখল, একটি পা যে উচু ক'রে খুড়িয়ে খুঁড়িয়ে বিকৃত আৰ্ত্তনাদ করতে করতে পালাচ্ছে, ঝর বাবু ক’রে রক্ত পড়ছে তার সেই পা খানি বেয়ে । ভয়ে উত্তেজনায় বিবর্ণ আহত মুখে সে বঙ্গরির “দকে তাকাল। সৰ্ব্বাঙ্গ তখন তার থর ধর ক’রে কাপ ছে। কিন্তু এত বড় একটা দুর্ঘটনা ঘটেও মাল গতিতে নিজের পথে চলতে লাগ ল । বদূরি তার দিকে তাকিয়ে একটু হাস্থল। বলল, এ ত দুবেলাই হচ্ছে । কত কুকুর এমনি•••সেদিন একটা কুলী মোটু নিয়ে পার হবার সময়—বাস, দেখতে দেখ তেষ্ট একটি পা তার আর্টুকে গেল চাকার তলায় শান্তি সাড়া দিল না । দুরে কোথায় গিয়ে থেকে থেকে কুকুরটা তখনও আৰ্ত্তনাদ করছিল, সেইদিকে সে তাকিয়ে রইল। মনে হ’ল, নিষ্ঠুর পৃথিবী ! একটি অসহায় প্রাণী চিরজীবনের জন্য যে পঙ্গু হয়ে গেল, কেউ একবার সেদিকে ফিরেও তাকাল না ! যে প্রতিবাদ করতে পারে না, অভিযোগ আনতে জানে না, যার বেদনার কোনো ভাষা নেই, তার জীবন কি এত তাচ্ছিল্যের, এতখানি অনাদরের ? অশ্রুতে শাস্তির চোখ দুটি পরিপূর্ণ হয়ে এল। এ শাস্তি যেন তাকেই সইল, এ আঘাত যেন তারই বুকে বাজল। পরের ব্যথা যে বুঝতে পারে সে চিরদিনই দুঃখ পায় । শাস্তি জীবনে স্বর্থী হতে পারবে না ! বদরি বলল, আরও আছে, তুমি ত জানো না, কীই-ব দেখেছ আমরা ওদিকে আর ফিরেও তাকাইনে ? ওড়না দিয়ে চোখু মুছে সোজা হয়ে বসতেই বদরি তাকে বোঝাতে লাগল, এ দুনিয়ার কত দিকে কত করুণ দৃশুই প্রতিদিন দেখা যায়। এর চেয়ে তারা আরও নিষ্ঠুর, আরও ভীষণ, আরও মৰ্ম্মান্তিক !—বদরি হেসে বলল, তোমার মতন দুৰ্ব্বল হ’লে দুনিয়ায় আমাদের ঠাই হ’ত না । বদরি বোধ হয় আরও কিছু বক্তৃতা দেবার চেষ্টা কচ্ছিল, সহসা চাচাকে শাস্তির পাশে এসে দাড়াতে দেখেই তার কথা বন্ধ হয়ে গেল । চাচা শাস্তির হাত ধ’রে তুলে বললেন, এবার গাড়ী আসছে! কাপড়া বদল কর লেও জলদি । সোহন সিংকো উঠায় দেও ' শান্তি গিয়ে নিত্রিত সোহন সিংকে একটা খোচা দিয়ে জাগিয়ে কাপড়চোপড় নিয়ে গোসলখানায় ঢুকূল। সে যে কেঁদে ফেলেছে এ জন্যে তার লজ্জার আর সীমা রইল না । ছেলেটা নিশ্চয়ই তাকে হেনস্তা করবে ! চাচা বললেন, আবার বুৰি জিনিষ বিক্ৰী করতে এসেছিলি আমার মেয়ের কাছে ? বদমা ! বারি বলল, গরীব আদমী সর্দারজী, এমনি করেই ত আমার রোজগার —এই বলে সে তার ঝাপি