পাতা:প্রবাসী (একত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

f প্রবাসী—বৈশাখ, ১৩৩৮ -ט [ ৩১শ ভাগ, ১ম খণ্ড ডিক্টেটরশিপ একটা মস্ত আপদ, সেকথা আমি মানি এবং সেই আপদের বহু অত্যাচার রাশিয়ায় আজ ঘটচে সেকথাও আমি বিশ্বাস করি । এর নঙৰ্থক দিকটা জবরদস্তির দিক, সেটা পাপ । কিন্তু সদর্থক দিকটা দেখেচি, সেটা হ’ল শিক্ষা, জরবদস্তির একেবারে উন্টে । দেশের সৌভাগ্য-স্বাক্ট-ব্যাপারে জনগণের চিত্ত সম্মিলিত হ’লে তবে সেটার ক্রিয় সজীব ও স্থায়ী হয় ; নিজের একনায়কত্বের প্রতি যারা লুব্ধ, নিজের চিত্ত ছাড়া অন্য সকল চিত্তকে অশিক্ষা দ্বারা আড়ষ্ট ক’রে রাখাই তাদের অভিপ্রায়-সিদ্ধির একমাত্র উপায়। জারের রাজত্বে শিক্ষার অভাবে জনগণ ছিল মোহাভিভূত, তার উপরে সর্বব্যাপী একটা ধর্শ্বমুঢ়তা অজগর সাপের মত সাধারণের চিত্তকে শত পাকে বেড়ে ধরেছিল। সেই মূঢ়তাকে সম্রাট অতি সহজে নিজের কাজে লাগাতে পারতেন । তপন য়িহুদীর সঙ্গে খৃষ্টানের, মুসলমানের সঙ্গে আৰ্ম্মাণির সকল প্রকার বীভৎস উৎপাত ধৰ্ম্মের নামে অনায়াসে ঘটানো যেতে পারত। তখন জ্ঞান ও ধর্মের মোহদ্বারা আত্মশক্তিহার শ্লথগ্রস্থি-বিভক্ত দেশ বাহিরের শত্রুর কাছে সহজেই অভিভূত ছিল । একনায়কত্বের চিরাধিপত্যের পক্ষে এমন অমুকুল অবস্থা আর কিছুই হ’তে পারে না । পূৰ্ব্বতন রাশিয়ার মতই আমাদের দেশে এই অবস্থা বহুকাল থেকে বর্তমান । আজ আমাদের দেশ মহাত্মাজীর চালনার কাছে বশ মেনেচে, কাল তিনি থাকবেন না, তখন চালকত্বের প্রত্যাশীরা ডেমনি ক’রেই অকস্মাৎ দেখা দিতে থাকবে যেমন ক’রে আমাদের দেশের ধৰ্ম্মাভিভূতদের কাছে নূতন নূতন অবতার ও গুরু যেখানেসেখানে উঠে পড়চে । চীন দেশে আজ নায়কত্ব নিয়ে জনকয়েক ক্ষমতালোভী জবরদস্তদের মধ্যে নিরবচ্ছিন্ন প্ৰলয় সংঘর্ষ চলেইচে, কারণ, জনসাধারণের মধ্যে সে-শিক্ষা নেই যাতে তারা নিজের সম্মিলিত ইচ্ছাদ্বারা দেশের ভাগ্য নিয়মিত করতে পারে, তাই সেখানে আজ সমস্ত দেশ ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেল। আমাদের দেশে সেই নায়ক পদ নিয়ে দ্বারুণ হানাহানি ঘটবে না এমন কথা মনে করছে । —তখন দলিতবিলিত হয়ে মরৰে উলুখড়, জনসাধারণ, কারণ তার উলুখড়, তারা বনস্পতি নয়। রাশিয়াতেও সম্প্রতি নায়কের প্রবল শাসন দেখা গেল। কিন্তু এই শাসন নিজেকে চিরস্থায়ী করবার পন্থা নেয় নি, একদা সে পন্থা নিয়েছিল জারের রাজত্ব, অশিক্ষা ও ধৰ্ম্মমোহের দ্বারা জনসাধারণের মনকে অভিভূত ক’রে এবং কষাকের কষাঘাতে তাদের পৌরুষকে জীর্ণ ক’রে দিয়ে। বৰ্ত্তমান আমলে রাশিয়ায় শাসনদও নিশ্চল আছে ব’লে মনে করিনে, কিন্তু শিক্ষা-প্রচারের প্রবলতা অসাধারণ। তার কারণ এর মধ্যে ব্যক্তিগত বা দলগত ক্ষমতী-লিঙ্কা বা অর্থলোভ নেই । একটা বিশেষ অর্থনৈতিক মতে সৰ্ব্বসাধারণকে দীক্ষিত ক’রে জাতি বর্ণ ও শ্রেণী নিৰ্ব্বিশেষে সকলকেই মানুষ ক’রে তোলবার একটা দুনিবার ইচ্ছা আছে । তা যদি না হ’ত তা হ’লে ফরাসী পণ্ডিতের কথা মানতে হ’ত যে, শিক্ষা দেওয়াট। একটা মস্ত ভুল। অর্থনৈতিক মতটা সম্পূর্ণ গ্রাহ কি না সে-কথা বলবার সময় আজও আসেনি—কেন-না এ মত এতদিন প্রধানত পুথির মধ্যেই টলে টলে বেড়াচ্ছিল, এমন বৃহৎ ক্ষেত্রে এত বড় সাহসের সঙ্গে ছাড়া পায়নি। যে প্রবল লৈাভের কাছে এই মত প্রথম থেকেই সাংঘাতিক বাধা পেত সেই লোভকেই এরা সাংঘাতিকভাবে সরিয়ে দিয়েছে। পরীক্ষার ভিতর দিয়ে পরিবর্তন ঘটতে ঘটতে এ মতের কতটুকু কোথায় গিয়ে দাড়াবে তা আজ নিশ্চিত কেউ বলতে পারে না। কিন্তু এ কথাটা নিশ্চিত বলা যেতে পারে যে, রাশিয়ায় জনসাধারণ এতকাল পরে যে শিক্ষা নিৰ্ব্বারিত ও প্রচুরভাবে পাচ্চে তাতে ক’রে তাদের মনুষ্যত্ব স্থায়িভাবে উৎকর্ষ এবং সম্মানলাভ করল । to: বর্তমান রাশিয়ায় নিষ্ঠুর শাসনের জনশ্রুতি সৰ্ব্বদাই শোনা যায়--অসম্ভব না হ’তে পারে। নিষ্ঠুর শাসনের ধারা সেখানে চিরদিন চলে এসেছে, হঠাৎ তিরোভূত না হওয়াই সম্ভব। অথচ সেখানে চিত্ৰযোগে সিনেমাযোগে ইতিহাসের ব্যাখ্যার সাবেক আমলের নিদারুণ শাসনবিধি ও অত্যাচারকে সোভিয়েট গবমেণ্ট অবিরত প্রত্যক্ষ করিয়ে দিচ্চে। এই গবমেন্ট নিজেও