পাতা:প্রবাসী (একত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৯৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩য় সংখ্যা ] পোর্ট আর্থারের ক্ষুধা vరి(రి মর অবস্থা । হুঙ্কার দিয়া শত্রুর প্রতি ধাওয়া করার এই অবসর । সহসা যেন শত বজ্ৰ হাকিয়া উঠিল, পাহাড় ও উপত্যক, জাকাশ ও পৃথিবী কঁাপিতে লাগিল, আমাদের নায়ক কাপ্তেন মুরাকামি স্বদীর্ঘ অলি আস্ফালন করিয়া চীৎকাৰ করিয়া সম্মুখে ধাবিত হইলেন। তার দৃষ্টান্ত অনুসরণ করিয়া সৈনিকের চকিতে শত্রুশ্রেণী বিদীর্ণ করিল-লঙ্কবন্ধ করিয়া হৈ-হৈ রৈ-রৈ শব্দে। প্রাণের দায়ে শত্রু পিছন ফিরিয়া ছত্ৰভঙ্গ হইয়া দৌড় দিল— অস্ত্রশস্ত্র, টুপি টোট। প্রভৃতি পশ্চাতে ফেলিয়া । ওয়াইতুশান দখল হইল । আটটার সময় ‘বানজাই’ ধ্বনিতে সকালের আকাশ কাপিতে লাগিল । o - কেন্‌জান ওয়াইতুশান স্বচ্ছন্দে দখল করিয়া জাপানীদের সাহস বাড়িয়া গেল । দীর্ঘ অপ্রশস্ত পার্বত্য পথ ধরিয়া পলায়নপর শক্রকে তারা তাড়া করিল। কেনজান বা “৩৬৮ মিটার পাহাড” আক্রমণ করাই উদ্বেগ । তাদের উৎসাহ অসীম—এক চালেই বাজি মাত করিবার আশ । কেন্‌জান শিলাময় অতি বন্ধুর দুরারোহ গিরিচড়া । সেখানে উঠিবার একটিমাত্র পথ আমাদের দিকে ছিল । সে-পথ এমন যে একটি মাহুষ তার মাঝে দাড়াষ্টয়া হাজার হাজার লোকের ওঠা নামায় বাধা দিতে পারে। গোড়ায় এ পাহাডের কোনো নাম ছিল না আগেই বলিয়াছি । রুশের নাম দেয় “Quin Hill” । স্থানটি আমাদের দখলে আসার পর জেনারেল নোগি উহার নাম রাখিয়াছিলেন “কেন্‌জান” বা "খড়গগিরি”। প্রথমে জানিতাম না কত শত্রুসৈন্ত সেখানে আছে—শুনিয়াছিলাম কিছু পদাতিক ও দশটি কামান মাত্র তাদের সম্বল । আমাদের রেজিমেন্টই ওয়াইতুশানের পাদদেশ প্রদক্ষিণ করিয়া সাগরতীরাভিমূখে শস্যক্ষেত্রের মাঝে গিয়া থামিল । Liaotung-এ তখন দারুণ গ্রীষ্ম-নিকটে মুখ ডিজাইবার মতও একটি জলধারা নাই। গ্রামের আস্তে গাছপালা, ঝোপঝাড়ের অভাবে একটু ছায়াও মেলে না। পদতলে একগাছা বাস পৰ্যন্ত নাই-স্বৰ্য্যরশ্মি যেন জলন্ত লৌহশ্যাক-টুপি ফুড়িয়া আমাদের মাথা গলাইয়া দিবার اساسن-88 উপক্রম করিল। মনকে বুঝাইলাম, এ নিদারুণ দাহ-যন্ত্রণা বেশীক্ষণ থাকিবে মা-অচিরেই যুদ্ধে মাতিবার স্থৰোগ মিলিবে । কিন্তু বৃথা বৃথা ! সকাল নষ্ট হইতে বেলা তিনটা পৰ্য্যন্ত সমভাবেই কাটিয়া গেল। ৰামে বহুদূরে পূর্বসাগরের বীচিবিক্ষুদ্ধ বারিরাশি দেখা যাইতেছে। মনে হইতে লাগিল—আহা! যুদ্ধক্ষেত্রে গিয়া মরিৰার জাগে যদি একবার ঐ শীতল জলে ডুব দিতে পারিতাম ! কিছুক্ষণ পরে আমাদের বামদিকে Hsiaoping-tao দ্বীপের নিকটে এক রুশ মানোয়ারি জাহাজ আসিয়া অচিরে আমাদের উপর গোলাবর্ষণ স্বরু করিল। উদ্ধ আকাশে ইতস্তত ধোয়ার কুগুলী রচিত হইতে লাগিল, বাতাসে একটা ছরর ধ্বনি উঠিল, প্রচও শব্দে গোলা আমাদের নিকটে পড়িতে লাগিল—গোলার পর গোলা, শব্দের পর শব্দ । গোলা পাথরের উপর পড়িয়া ফুলিঙ্গ বর্ষণ করিতেছে, চারিদিকে ধোয়া ছড়াইতেছে, টুকরা পাথর এদিক-ওদিক ছুটিতেছে। নিরাপদে দূরে দাড়াইয়া দেখিলে মনে উত্তেজনার সঞ্চার হয় বটে, কিন্তু গোলার ঘায়ে ঘায়েল হুইবার সাধ হয় না । অধিকাংশ গোলাই খুব কাছে পড়িলেও ভাগ্যক্রমে কেহই আহত হইল না । শীঘ্রই কেনজানের দিক থেকে বন্দুক ও কামানের শব্দ আসিতে স্বরু করিল। আক্রমণ তবে আরম্ভ হইয়াছে। যুদ্ধে যোগ দিবার জন্ত মন অস্থির হুইয়া উঠিল। ধাত্রার আদেশ আসিয়াছে । ভারি চামড়ার বোচক চটপট চলাফেরার বাধা । সকলে তাড়াতাড়ি এক একটা লম্বা থলির মধ্যে একদিনের আন্দাজ রসদ ভরিয়া পিঠে বাধিল, তারপর ওভারকোট কাধে ফেলিল। গোট। দুই তিন সিগারেট সংগ্ৰহ করিয়া তখনই রওনা হইলাম । ক্ৰতগতি চলিবার বিশেষ কোনো আদেশ দিল না, তবুও আমাদের চলার বেগ দেখিতে দেখিতে বাড়িয়া গেল। ষেদিক খেৰে বন্দুকের আওয়াজ ও কামানের গর্জন জাসিতেছিল সেইদিকে একটানা স্থলীর্ঘ পথ অতিক্রম করিয়া চলিলাম, যুদ্ধক্ষেত্র ক্রমে নিকটে জাসিতে লাগিল । - (knapsack)