পাতা:প্রবাসী (একত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রেমসম্পূট শ্ৰীখগেন্দ্রনাথ মিত্র, এম-এ ভ্ৰাধারের নিডল নীল বুকের মাঝে তারাগুলি নিমিথশূন্ত দৃষ্টিতে স্নাগিয়া থাকে, রহস্যাচ্ছেন্ন কালের বক্ষেও তেমনি কতকগুলি উজ্জল চরিত্র অম্লান জ্যোতিতে দেদীপ্যমান থাকে। শ্রীরাধা সেইরূপ একটি চরিত্র। ঐরাধা বিশুদ্ধ প্রেমের আদর্শ। তিনি কৃষ্ণময়ী। কৃষ্ণ-প্রেম বলিতে যাহা বুঝায় তিনি তাহার মূৰ্ত্তিমতী প্রতিমা । তিনি সৰ্ব্বাংশে কৃষ্ণস্বরূপিণী । সৰ্ব্বাংশে কৃষ্ণসদৃশী ভেন কৃষ্ণ-স্বরূপিণী—ব্রহ্মবৈবৰ্ত্তে। প্লেমের স্বভাব এই যে উহ। দুইটি হৃদয়কে গলাইয়া এক করিয়া দেয়। যতক্ষণ এই একত্ব সাধিত না হয়, ততক্ষণ প্রেম ইষ্টল না । শ্রীরাধা কৃষ্ণপ্রাণাধিক কৃষ্ণপ্রিয় কৃষ্ণস্বরূপিণী —ঐ কৃষ্ণ হইতে অতিরিক্ত কোনও সত্তা তাহার নাই । ভাই তাহাকে পণ্ডিতেরা বলেন ‘প্রেমশিরোমণি’, ‘মহাভাবস্বরূপিণী’, ‘প্রেমরসের সীমা” । কল্পনা প্রেমের এতদপেক্ষা কোনও উজ্জ্বলতর চিত্র অঙ্কিত করিতে পারে নাই । সাংসারিক প্রেমের কলঙ্ক-কালিমময় নিকষে সোনার রেখাটির মত . এই প্রেমের চিত্র । এই প্রেমচিত্রের সম্মুখে স্বকীয়া পরকীয়া প্রভৃতি প্রশ্ন উঠিতে পারে বলিয়া আমি মনে করি না । প্রেম যেখানে পাগল! ঝোরার মত শত শত ধারায় ছুটিয়া সব ভাসাইয়া লইয়া যায়, সেখানে নীতিবাদীদের সমস্ত সংশয় বিতর্ক স্তন্ধ ইয়া যায় না কি ? গোস্পদ বা পুষ্করিণীর গভীরতা ও দৈর্ঘ্য সমালোচনার বিষয় হয় বটে, কিন্তু মহাসমূত্রের কুলে- দাড়াইয় কেহ কি সে-সকল কথা একবারও ভাবে? রাধা-প্রেম ঐ পাগলা কোরার স্থায় সকল বাধাকে : উপেক্ষা করে, গভীরতায় সমুদ্রকেও নিন্দা করে, নিঃস্বার্থতায় সমস্ত উপমাকে স্থার মানায় । এই প্রেমের ছবি ফুটিয়া উঠিয়াছিল পদাবলী-সাহিত্যে । পাবলী সত্যই শ্রেমসম্পূট বা গ্রেমের রত্নকোটা। জয়দেব, চণ্ডীদাস, বিদ্যাপতি প্রেমের যে ছবি আঁকিয়াছেন, তাহা বর্ণে ও বৈচিত্র্যে অতুলনীয় । চৈতন্তদেব এই প্রেমের পরিমলে পাগল । বৈষ্ণবেরা বলেন তিনি ভগবানের অবতার। কিন্তু এ এক নূতন অবতার এ—প্রেমের অবতার ! তিনি প্রেমের ঠাকুর । এমন অবতারের কথা পূৰ্ব্বে কেহ কখনও শুনে নাই। মহাপ্রভু সন্ন্যাসী, কিন্তু প্রেমিক । প্রেমিক কখনও সন্ন্যাসী ੱਉਾਂ না, সন্ন্যাসী কখনও প্রেমিক হয় না। কিন্তু গোরা কখNপ্রেমে অজ্ঞান, কখনও বিরহে ব্যাকুল । কি ভাব উঠিল মনে কাদিয়া আকুল কেনে সোণার অঙ্গ ধূলায় লুটায়। এই যে চিত্র, ইষ্ঠার সহিত শ্রীরাধার চিত্রের সাদৃশু বড় মুম্পষ্ট । সেই জন্য শ্ৰীগৌরাঙ্গকে বলে ‘রসরাজ মহাভাব।’ তিনি প্রেমিক, রসিকশেখর, এই জঙ্ক রসরাজ । তিনি প্রেমের চরম অভিব্যক্তি, এই জন্ত মহাভাব । - এই যে প্রেম ও রসে মাখামাথি, ইহাই বৈষ্ণবধর্শ্বের সৰ্ব্বাপেক্ষ নিগৃঢ় ও পরমাস্বাদ্য রহস্য । ইহা হটতে মধুর ও উপভোগ্য আর কিছুই নাই। অল্প সমস্তই বাহা । প্রেম-যমুনার মূলপ্রপাত খুজিতে গিয়া মহাপ্রভূ যুখন উৰ্দ্ধ হইতে উদ্ধতির শিখর অতিক্রম করিয়া রাধা-প্রেমরূপ যমূমোত্রীর স্বচ্ছ ধারায় অবগাহন করিলেন, তখন আর কোনও রূপ বিচার রহিল না। এইখানে সমস্ত জিজ্ঞাস, সমস্ত কৌতূহল মুহূর্তে নিরস্ত হইয়া গেল। ঐচৈতন্তের পরে এই রাধাপ্রেমের মাধুৰ্য্য কাব্যে ও ছন্দে আরও বিরুসিত হইয়া উঠিল। গোবিন্দ দাস, জ্ঞান দাস, নরোত্তম দাস প্রভৃতির কাব্যে এই প্রেমের মাহাত্ম্য নানা ছন্দে, নানা ভাবে বর্ণিত হইল । নরোত্তম দাস ঠাকুর তাহার একটি প্রসিদ্ধ "প্রার্থনা’র পদে বলিলেন :–