পাতা:প্রবাসী (একত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫ম সংখ্যা ] নিকট তুলিতে পারিল না। লীলা ব্যাপার বুঝিয়া বলিল, বৌমা কতদিন বেঁচেছিলেন ? অপু লাজুক স্বরে বলিল—বছর চারেক— —ত এ তোমার অন্তায় কাজ ভাই –তোমার এ বয়সে বিয়ে করবে না কেন ?...তোমাকে তো এতটুকু দেখিচি এখনও বেশ মনে হচ্চে ছোট, পাংলা, টুকটুকে ছেলেটি—একটি কঞ্চি হাতে নিয়ে আমাদের ঘাটের পথের বঁাশতলাটায় বেড়িয়ে বেড়িয়ে বেড়াচ্চ-কালকের কথা যেন সব—না ও কি ছিঃ—বিয়ে কর ভাই । থোকাকে কলকাতা রেখে এলে কেন—দেখতাম একবারটি । লীলা ও উঠিতে দেয় না-অণুও উঠিতে চায় না। লীলার স্বামীর সঙ্গে আলাপ করিল—ছেলেমেয়েগুলিকে আদর করিল। উঠিবার সময় লীলা বলিল—কাল আসিস অপু, নেমস্তয় রইল—এখানে দুপুরে খাবি। পরদিন নিমন্ত্রণ রাখিতে গিয়া কিন্তু অপু লীলাদির পরাধীনভা মৰ্ম্মে মৰ্ম্মে বুঝিঙ্গ—সকাল হইতে সমুদয় সংসারের রাপ্নার ভার একা লীলাদির উপর । কৈশোরে লীলাদি দেখিতে ছিল খুব ভাল—এখন কিন্তু সে লাবণোর কিছুষ্ট অবশিষ্ট নাই—চুল দুচার গাছ এরই মধ্যে পাকিয়াছে, শীর্ণ মুখ,শিরা-বাহির হওয়া হাত, আধময়লা শাড়ী পরণে । র":ধবার আলাদা ঘরদেশর নাই, ছোট্ট দালানেৰ অৰ্দ্ধেকটা দরমার বেড়া দিয়া ঘেরা, জারই ও-ধারে রান্না হয় । লীলাদি সমস্ত রান্ন। সারিয়া তার জন্য মাছের ডিমের বড়া ভাঙ্গিতে বসিল, এক একবার কড়াথানা উকুন হইতে নামায়, আবার তোলে, আবাব নামায়, আবার ভাঙ্গে । আগুনের ভূতে মুখ তার রাঙা দেখাইতেছিল—অপু ভাবিল কেন এভ কষ্ট করচে লীলাদি, আহ, রোজ রোজ ওর এই কষ্ট, তার ওপর আমার জন্তে আর কেন কষ্ট করা ? বিদায় লইবার সময় লীলা বলিল—কিছুই করতে পারলুম না ভাই-এলি যদি এত কাল পরে, কি করি বল, পরের ঘরকন্না, পরের সংসার, মাথানীচু করে থাকা উদয়াস্ত খাটনিটা দেখলি তো ? কি আর করি, তবুও একটা ধরে মাছি । মেয়েটা বড় হ’য়ে উঠল, বিয়ে দিতে তো হবে ? ঐ বট ঠাকুর ছাড়া আর ভরসা নেই। সন্ধ্যে বেলাটা বেশ ভাল লাগে - দশাশ্বমেধ ঘাটে সন্ধোর সময় বেশ কথা হয়, পাচালী হয়, গান হয়—ৰেশ লাগে। দেখিস নি ?...আসিস না আজ ওবেলা— বেশ জায়গা, জাসিস, দেখি এখন । এস, এস কলোণ হোকৃ। তারপর সে আবার কাদিয়া ফেলিল— বলিল—তোদের দেখলে যে কত কথা মনে পড়ে—কি সব দিন ছিল— - অপরাজিত ৬৯৫ এবার অপু অতিকষ্টে চোখের জল চাপিল । আর একটি কৰ্ত্তব্য আছে তাহার কাশীতে—লীলার মায়ের সঙ্গে দেখা করা। বাঙালীটোলার নারদ ঘাটে র্তাদের নিজেদের বাড়ি আছে—খুজিয়া বাড়ী বাহির করিল । মেজ বৌরাণী অপুকে দেখিয়া খুব আনন্দ প্রকাশ করিলেন, চোখের জল ফেলিলেন, অনেক গল্প করিলেন । লীলা ধরমপুরেই আছে বিমলেন্দুও সেখানে— অপুe তাহ জানিত । - কথাবার্তা চলিতেছে এমন সময়ে ঘরে একটি ছোট মেয়ে ঢুকিল—বয়স ছয় সাত হইবে, ফ্রক পরা ক্টোকৃড়া র্কোকৃড়া চুল—অপু তাহাকে দেখিয়াই বুঝিতে পারিল— লীলার মেয়ে । কি সুন্দর দেখিতে ! এত স্থনরও মাস্কর্য হয় ?--স্নেহে, স্মৃতিতে, বেদনায় অপুর চোখে জল আসিল—সে ডাক দিল-শোনো খুকী মা, শোনো (マ1 - খুকী হাসিয়া পলাইতেছিল, মেজ বোপ্পাণী ডাকিয়৷ অনিয়া কাছে বসাইয়া দিলেন । সে তার দিদিমার কাছেষ্ট কাশীতে থাকে আজকাল । গত বৈশাপ মাসে তাহার বাবা মারা গিয়াছেন–কিন্তু লীলাকে সে সংবাদ জানানে হয় নাই এখনও । দেখিতে অবিকল লীলা— এ বয়সে লীলা ষা ছিল তাই । কেমন করিয়া অপুর মনে পড়িল শৈশবের একটি দিনে বদ্ধমানের লীলাদের বাড়ীতে সেই বিবাহ উপলক্ষে মেয়ে মজলিসের কথা - লীলা যেখানে হাসির কবিতা আবৃত্তি করিয়া সকলকে হাসাইয়াছিল—সেই লীলাকে সে প্রথম দেখে এবং লীলা তখন দেখিতে ছিল ঠিক এই খুকীর মত অবিকল । মেজ বেীরাণা বলিলেন—মেয়ে তো ভাল, কিন্তু বাবা শুর কি আর বিয়ে দিতে পারব ? ওর মার কথা যখন সকলে শুনবে—আর তা নাই বা জানে কে – ও মেয়ের কি আর বিয়ে হবে বাবা ? অপুর ছদ্ধমনীয় ইচ্ছা হইল একটি কথা বলিবার জন্ত--সেট। কিন্তু সে চাপিয় রাখিল । মুখে বলিল— দেখুন, বিয়ের জন্তে ভাববেন কেন ? লেখাপড় শিখুক, বিয়ে নাই বা হ’ল, তাতে কি ? মনে ভাবিল—এখন সে-কথা বলব না, থোকা যদি বঁাচে, মাহষ হয়ে ওঠে— তবে সেকথা তুলব। যাইবার সময়ে অপু লীলার মেয়েকে আবার কাছে ডাকিল। এবার খুকী তাহার কাছে ঘেষিয়া দাড়াইয়া ডাগর ডাগর উন্মস্থক চোখে তাহার মুখের দিকে চাহিয়া রহিল। সেদিনের বাকী সময়টুকু অপু বন্ধুর সঙ্গে সারনাথ দেখিয়া কাটাইল । সন্ধ্যার দিকে একবার বিশ্বনাথের গলিতে লীলাদের বাসায় বিদায় লইতে গেল-কাল সকালেই এখান হইতে রওনা হইবে । নিশ্চিন্দিপুরের