পাতা:প্রবাসী (একত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৯৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৬ষ্ঠ সংখ্যা ? জাল જે খুব ছোট বয়স থেকেই ছমিরের আপন বলতে কেউ ছিল না। নিজের ছ’খানা কঠিন হাতের জোরেই লে হয়ে উঠেছিল গ্রামের মোড়ল। দল বেঁধে সে টানত নদীর উপরে ছিপ, কালবৈশেষীর দিনে বানের সময় ঝাপিয়ে পড়ত নদীর জলে। তার কৈশোরের উদামত যৌবনেতে দেখা ছিলে অগুরূপে। ছেলেবেলা থেকে যে-জিনিষ জীবনে8কখনও পায়নি তাই সে এখন নিতে চাইলে কেড়ে গায়ের জোরে। ছিল সে ভালবাসার চিরকাঙাল, এখন স্বরু করলে দস্থ্যবৃত্তি । শ্রাবণের বর্ষণ শেষ হয়েছে ; ফুলঝের নদী কুলে কুলে ভরে উঠেছে ; কাছিম মারবার সময় এল। ইস্পাতের ফলায় শান দিয়ে ছমির বেরুল বেলতলীর দিকে ; ওখানকার জলে কাছিম জমে ভাল । রাত্রে ছিপ বেঁধেছিল শর ঝোপের আড়ালে, কোন ঘাটে তার ঠিক নেই। ভোরের ঝাপসা আলোয় সেই ঘাটে এল জল নিতে আবদাল সদারের মেয়ে মোতিয়া --মেয়ে নয় ত যেন শ্বেতকরবীর গুচ্ছ । ছমিরের নীল চোখে কি আলো জলে উঠেছিল জানি না, কিন্তু তারই পানে চেয়ে মোতিয়া মুখের উপর ঘোমটা টানতে ভুলে গেল । - কলসীতে জল ভরে যখন ফিরবে, এমন সময় ছমির তার বর্ষ। তুলে নিয়ে ছুড়ে মারলে ; আমগাছের গুড়িতে বিধে মোতিয়ার ফেরবার পথে সে যেন প্রকাণ্ড আগল হয়ে র ল । ছমির হেসে উঠল । মোঙিয়া মাথা নীচু ক’রে ঘরের দিকে ফিরল । ভাগ্যদেবতা তখন ভোরের আকাশে সোনার আলোয় এদের ভাগ্যলিপি রচনা করতে আরম্ভ করেছেন । বেলতলীর সে ঘাট থেকে ছমির নৌকা খুলল না । হাটাইটি স্বরু করলে আবদালের ঘরে—মোতিয়াকে তার চাই-ই। বুড়ে আবদাল ভয় পেলে ; ছমির—পে যে ডাকাত ! শেবে তার হাতে মেয়েটাকে দিয়ে কি চিরদুঃখিনী ক’রে রাখবে ? আবদালের মত হ’ল না। ছমিরের নৌকা বাধাই রইল বেলতলীর ঘাটে । কোন দিন সে আনে প্রকাগু মাছ ; কোন দিন আনে গাছের ফল। আবদালের ঘরের আঙিনায় এনে নামিয়ে রাখে। যেখানের জিনিষ সেইখানেই পড়ে থাকে ; কেউ উঠায় না। কোথা থেকে একদিন ছমির নিয়ে এল এক মেষ-শিশু ; উঠানের মাকে এনে ছেড়ে দিলে তাকে । নধর জীব-শিশু ত্রস্ত ছুই চোথ মেলে খুজে ফিরতে লাগল তার হারানো মা’কে। মোতিয়া আর পারলে না থাকৃতে ; মাথায় ঘোমটা টেনে বেরিয়ে এল ঘর থেকে ; মেষ-শাবককে কোলে করে নিলে, তারপর চাপা গলায় বললে, “আর এলো ন৷ छूभि ।।' কে শোনে তার কথা ; ছমিরের দৌরাত্ম্য বেড়েই চলল । একদিন ভোরের অন্ধকারে সে এল আবদালের ঘরের কাছে। তার কপালের উপর ঝাকড় চুলের মাঝে তখনও কাচা রক্ত জমাট বেঁধে আছে ; মোতিয়াদের আঙিনায় সে এক থলি লুটের টাকা ঝনাং ক’রে ফেলে দিয়ে চলে গেল ঘাটের দিকে । সকাল বেল! আবার সে টাকা ফিরে এল তার নৌকায় । গ্রামের লোকে পরামর্শ দিলে আবদালকে—মেয়ের আর কোথাও বিয়ে দিয়ে দাও । হ’লও তাই । পাশের গ্রামের বুড়ে মক্কুলের তেজারতির কারবার ; অনেক টাকা । সম্প্রতি স্ত্রী গেছে তার মারা। চোখের জলে বুকের ওড়না ভিজিয়ে মোতিয়া একদিন গেল তার ঘরের ঘরণী হয়ে । ছমির স্থির হয়ে রইল—যেন বজে ভর বর্ষার মেধ । বুড়ে মকবুল তেজারতি কারবার করতে করতে নিজের জীবনের জম-খরচের প্রায় শেষ অঙ্কে এসে পৌছেছিল। হঠাৎ একদিন সেই অঙ্ক শেষ করে দিলে সে ; জের টানবার আর অবকাশ হ’ল না। মোতিয়া ফিরল বাপের ঘরে, তার পরিপূর্ণ যৌবন আর মঞ্চুবুলের দেওয়া একরাশ টাকা নিয়ে । ছমিরের কোনও উদ্দেশ নেই। কেউ খোজও রাখে না। শুধু মোতিয়ার দুই কালে চোখ নিয়তই জলে ভরে থাকে । সন্ধ্যাবেলা যখন কাশের বনে হাওয়া ব্যাকুল হয়ে ওঠে তখন মোতিয়ার মন যেন কেমন করে। ডাঙ।