পাতা:প্রবাসী (চতুর্দশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২য় সংখ্যা] উঠবে ! বেটা আমার সর্বস্ব পুড়িয়ে দিয়ে অমনি পালাবে ? তা কিছুতেই হ’তে দেব না ......একবার যদি বেটাকে হাতে নাতে ধরতে পারি !" তখন তাহার রমেশকে ধরিবার ইচ্ছাটা এতই প্রবল হইয়া উঠিয়াছিল যে সে বাড়ীর ভিতর না ঢুকিয়া একবার বাড়ীর কানাচট। ঘুরিয়া আসিৱার মতলব করিল। সে চোরের মত ধীরে ধীরে চলিতেছিল। ঠিক বাকের মাথায় আসিয় তাহার মনে হইল ঠিক তাহার বিপরীত দিকের মোড়ের কাছে কে যেন হঠাৎ নড়িয়া উঠিল । পরাণ স্থির হইয়া দাড়াইয়া ভাল করিয়া লক্ষ্য করিল ; চারিদিক আবার পূৰ্ব্বের মত স্থির ধীর । অন্ধকারটা প্রথম তাহার নিকট অত্যন্ত গাঢ় বলিয়া মনে হইতেছিল, কিছুক্ষণ থাকিবার পর সেটা চক্ষে সহিয়া গেল। সে দেখিল সেখানে একটা লাঙ্গল পড়িয়া আছে, আর কিছুই নাই। “তবে বোধ হয় ভুল হয়েছে! ত হোক তবু একবার চারিদিকট। দেখে আসি।” এমনি ধীর পদে মীর্জারের মত সে অগ্রসর হইতেছিল যে আপনার পদশব্দ আপনিই শুনিতে পাইতেছিল না। সে ক্রমে পূৰ্ব্বেক্ত বাকের মাথায় আসিয়া উপস্থিত হইল। চকিতের মত লাঙ্গলটার কাছে কি একটা জলিয়া উঠিয়া আবার তখনি নিভিয়া গেল। পরাণের বক্ষের স্পন্দন দ্রুততর হইয়। উঠিল । সেইখানেই সে স্থির হইয়া দাড়াইল । সঙ্গে সঙ্গে আবার একটা আলোক পূৰ্ব্বোক্ত স্থানে জলিয়া উঠিল ; সেই আলোকে পরাণ স্পষ্ট দেখিতে পাইল যে একজন লোক মাথায় গামছা ধধিয়া গুড়ি মারিয়া অগ্রসর হইতেছে ; তাহার হাতে একটা খড়ের আঁটি ছিল, সে একমনে সেইটাই জালিতেছিল। পরাণের প্রাণ অস্থির হইয়া উঠিল ; শরীরের প্রতি শিরা উত্তেজনায় স্ফীত হইয়া উঠিল। সে আত্মবিস্মৃতের মত বলিয়া উঠিল,—“পালাতে দিচ্চি না, যেমন ক’রে পারি ধরতে হবে।” তখনও লোকটার কাছে পরাণ পৌছিতে পারে নাই ; হঠাৎ দেখিয় খড়ের আঁটিটা ধাউ ধীউ করিয়া জলিয়া উঠিল। এবার আগুনট একটু তফাতে জ্বলিয়া উঠিয়াছিল । দেখিতে দেখিতে পরাণের চালা জলিয়া উঠিল ; জার, বিন্মিত পরাণ দেখিল সেই আগুনের কাছে আগুনের ফুলকি 。 >8○ খড়ের কৃটি হাতে করিয়া রমেশ সোজা হইয়া দাড়াইয়। আছে । বাজপাখীর মত সে রমেশকে ধরিতে ছুটিল। রমেশ বোধ হয় তাহার পদশব্দ শুনিতে পাষ্টয়াছিল, কারণ সে একবার চতুর্দিকে চাহিয়৷ ছুটয় পলাইল , পরাণ তাহার পিছু পিছু ছুটিতে ছুটিতে বলিয়া • উঠিল,--“পালাবে কোথা ? পেটি হচ্চে না চাদ!" সে লাফাইয়া রমেশকে ধরিতে গেল কিন্তু পারিল না, কেবল তাহার কাপড়ের খানিকট ছিন্নাংশ হাতে রহিয়৷ গেল। পরাণ ঝেণক সামলাইতে ন পারিয়া পড়িয়া গেল। তখনই আবার উঠিয়। পড়িয়া সে ছুটিল, সঙ্গে সঙ্গে চীৎকার করিতে লাগিল,—“ওগে। ধর, ধর! চোর ! খুনে!” ইতিমধ্যে রমেশ তাহার বাড়ীর দ্বারপ্রান্তে আসিয়া পড়িল ; পরাণও তাহার নিকটে আসিয়া পড়িয়াছিল; প্রায় ধরে ধরে এরূপ সময়ে কি একটা আসিয়া তাহুর মাথায় ভীষণ ভাবে লাগিল। রমেশ একটা বংশদও তুলিয়া লইয়। সজোরে পরাণের মাথায় মারিয়াছিল। পরাণের মাথা ঘুরিয়া উঠিল ; চুক্ষের সুমুখে উজ্জ্বল আলোক যেন নিভিয় গেল ; সংজ্ঞাশূন্য অবস্থায় সে মাটিতে পড়িয়া গেল। যখন সংজ্ঞ। ফিরিয়া আসিল তখন সে দেখিল সেখানে রমেশ নাই, চতুর্দিক দিবালোকের মত উজ্জ্বল অলোকে ভরিয়া গিয়াছে । গোয়ালের দিক হইতে একটা আৰ্ত্তনাদ একটা হুটোপাটির শব্দ অসিতেছে। পরাণ চাহিয়া দেখিল আগুন —আগুন—কেবল চারিদিকে আগুন ! পরাণ বক্ষে ও কপালে করাঘাত করিয়া উঠিয়। বসিল । একবার মনে করিল চীৎকার করিয়ু লোক ডাকিবে, সাহায্য চাহিবে। কিন্তু হা অদৃষ্ট ! এ তাহার কি হইল ? গল! দিয়া স্বর বাহির হয় না যে মোটে ! একি ? একবার মনে করিল দৌড়িবে কিন্তু চেষ্ট৷ করিয়াও সে উঠিতে পারিল না । হামা দিয়া অগ্রসর হইতে চাহিল কিন্তু দুই পদ গিয়াই সে হাফাইয়। উঠিল। দেখিতে দেখিতে অগ্নি, অনেকটা পথ অগ্রসর হইয়া পড়িয়াছিল। পাশে পাশে লাগোয়া বাড়ী,—সব চালাঘর ; অগ্নিদেব যেন কুস্তকর্ণের ক্ষুধা উদরে পুরিয়া