পাতা:প্রবাসী (চতুর্দশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

>8や বিক্রমের সমালোচনায় বঙ্কিমচন্দ্র উপহাসচ্ছলে বলিয়াছিলেন যে “পুরুবিক্রম বীররসের গতীয় ।” “পুরুবিক্রম শেষে গুজরাট ভাষায় অনূদিত হয়। ইয়ুরোপের বিখ্যাত সমালোচক ও সংস্কৃত বিদ্যায় পারদর্শী sylvin Icvi , সাহেব গুজরাটী সাহিত্যের সমালোচনায় পুরুবিক্রমের প্রশংসা করিয়াছেন, কিন্তু এখনি যে আমরাই পুরুবিক্রমের অনুবাদ, তাহা তিনি জানিতেন না।” সত্যেন্দ্রনাথের “গাও ভারতের জয়” গানটি পুরুবিক্রমে সন্নিবিষ্ট হইয়াছে। গ্রেট ন্যাশানেল থিয়েটারে অভিনয়ের সময় ঐ গানটিতে যে সুর থিয়েটারওয়ালারা পিয়াছিলেন সেই সুরেই ইহা এখনও গাত श्ध्र । “তার পর বেঙ্গল থিয়েটারেও নাটকথানি অভিনীত হয়। ছাতুবাবুদের বাড়ীর শরচ্চন্দ্র ঘোষ মহাশয় পুরু সাজিয়াছিলেন । শরৎ বাবুর একটি অতি সুন্দর শাদা আরব ঘোড় ছিল । ঘোড়াটি যেমন তেজীয়া তেমনি সায়েস্তাও ছিল । এই অথপুণ্ঠে আরোহণ করিয়া তিনি উন্মুক্ত আসি ইস্তে অল্পপরিসর নাট্যমঞ্চের উপর আস্ফালনপূর্বক ঘোর-ফেরা করিতেন এবং সৈন্যদিগকে উত্তেজিত কfরতেন । ঘোড়াটি কিন্তু এমন সায়েস্তা সে নীচে ফুটলাইট (foot ight), চারিদিকে গ্যাসের উজ্জ্বল আলো, দর্শকগণের ঘনঘন করতালিধ্বনি, যুদ্ধের বাজনা প্রভূতিতে কিছুমাত্র ভীত হইত না । এইরূপে এই দৃশ্বে বীররসের অতি চমৎকার অবতারণ করা হইত। “ইতিপূৰ্ব্ব হইতে বড়লোকদের ভিতরে ঘোড়tয় চড়ার একট; খুব সখ, হইয়াছিল। পূৰ্ব্বোক্ত শরৎবাবু, ঠাকুরদাস মাড়, অঙ্গু গুহ প্রভৃতি অনেকে মিলিয়: কলিকাতার উত্তর অঞ্চলে একটা ঘোড়দৌড়ের মাঠ ঠিক করিয়ছিলেন । ঘোড়দৌড়ও দুই একবার হইয়tছিল । তারপর রাজা দিগম্বর মিত্র মহাশয়ের পুত্র ঘোড়া হইতে পড়িয়া যেমন মাল্লা গেলেন অমনি সকলের ঘোড়াচড়ার বাতিক ও %ां७ श्ब्र! cश्रृंळ ।।' তার পর কটক হইতে কলিকাতা আসিয়া জ্যোঙিবাবু “সরোজিনী রচনা করেন । রবীন্দ্রনাথ তখন বtড়ীতে রামসৰ্ব্বস্ব পণ্ডিতের নিকট সংস্কৃত পড়িতেন । জ্যোতিবাবু ও রামসৰ্ব্বস্ব দুইজনে রবিবাবুর ঘরে বসিয়াই “সরোজিনীর" প্রাফ সংশোধন করিতেন । রামসৰ্ব্বস্ব খুব জোরে জোরে পড়িতেন । পাশের খর হইতে রবিবাবু শুনিতেন ও মাঝে মাঝে পণ্ডিত মহাশয়কে উদ্দেশ করিয়া কোনূ স্থানে কি করিলে ভাল হয় এমনি মতামত প্রকাশ করিতেন। রাজপুত মহিলাদের পিতা-প্রবেশের যে একটা দৃশ্ব আছে, তাহতে পূৰ্ব্বে জ্যোতিবাবুর একটা গদ্য রচনা ছিল, কিন্তু রবিবাবু তাহার স্থানে “জুলু জ্ব চিতা দ্বিগুণ দ্বিগুণ” কবিতাটি রচনা করিয়া সেই গদ্যটার স্থানে বসাইতে বলেন । জ্যোতিবাবু দেখিলেন যে এই কবিতাটিই সেখানে সুপ্রযুজা, তাই তিনি গদ্যের পরিবর্ক্সে এই কবিতাটিতে সুরসংযোগ করিয়া সেইস্থানে সন্নিবিষ্ট করিলেন । “সরোজিণী প্রকাশিত হইবামাত্রই কলিকাতার সাধারণ থিয়েটারে অভিনীত হইয়া গেল। কলিকাতার অtট স্কুলের তদানীন্তন শিক্ষক শ্ৰীযুক্ত অন্নদাপ্রসাদ বাকৃচী মহাশয় সরোজিনীর শেষ দৃশ্বের চিত্র অঙ্কিত করিয়াছিলেন । সে চিত্ৰখালি পৌরাণিক দেব দেবীর চিত্রের সঙ্গে বাজারে বহুদিন পৰ্য্যন্ত বিক্রীত হইয়াছিল। যাত্রায় দলেও সরোজিনী অভিনীত হইতে লাগিল । সরোঞ্জিনী যাত্রা একবার জ্যোতিবtধুদের বাড়ীতেও হইয়'চিল । সরোজিনীর গান তখন সভায়, মজলিশে, বৈঠকে সৰ্ব্বর গীত হইত। প্রবাসী—এগ্রহায়ণ, ১৩২১ হইয়া কটকে থাকিতে “পুরুবিক্রম’ নাটক রচনা করিলাম। পুরু [ ১৪শ ভাগ, ২য় খণ্ড

  • সরোজিলী প্রকাশের পর হইতেই আমরা রৰিকে আমাদের দলে প্রোমোশন্‌ দিয়া উঠাইয়া লইলাম। এখন হইতে সঙ্গীত-ওসাহিত্য-চৰ্চাতে আমরা তিনজন হইলাম—আমি, অক্ষয় ( চৌধুরী ), ও রবি । পরে জানকী বিলাত যাইবার সময় অামার ভগিনী, এখনকার ভারতীসম্পাদিক, আমাদের বাড়ীতে বাস করিতে অসায় সাহিত্যচর্চায় উtহাকেও আমাদের একজন সঙ্গীরূপে পাইলাম ।”

ভারতী প্রকাশের ইতিহাস এইরূপ । একদিন জ্যোতিবাবু উtহার তেতালার ঘরে বসিয়৷ পূৰ্ব্বোক্ত দুইজনের সহিত পরামর্শ করিয়া স্থির করিলেন যে সাহিতাবিষয়ক একখানি মাসিকপত্র প্রকাশ করিতে হইবে। যেমন কথা অমনি কাজ। তৎক্ষণাৎ জ্যোতিবাবু দ্বিজেন্দ্রবাবুকে এ কথা জানাইলেন। দ্বিজেন্দ্র বাবুও এ প্রস্তাবে মত দিলেন । এখন এ পত্রের নাম কি হইবে, এই সমস্তার সমাধানে সকলে যত্নপানূ হইলেন । দ্বিজেন্দ্র বাবু নাম বলিলেন “সুপ্রভাত" কিন্তু এ নাম জ্যোতিবাবুদের মনোনীত হইল না, কারণ ইহাতে যেন একটু স্পৰ্দ্ধার ভাব আছে, অর্থাৎ এতদিনে যেন বঙ্গসাহিত্যের সুপ্রভাত হইল । স্ট্র প্রভাত নাম সখন গ্রাহ হইল না, তখন দ্বিজেন্দ্র বাধু আবার তাহার নাম রাখিলেন “ভারতী” । সেই ভারত আজও পধ্যস্ত র্তাহীর ভগিনীদেবীর যত্নে দ্বিজেন্দ্রনাথ, জ্যোতিরিন্দ্রনাথ, রবীন্দ্রনাথ ও অক্ষয়চন্দ্রের বtল স্মৃতি রক্ষা করিয়া আসিতেছে । জ্যোতিবাবু বলিলেন, “ভারতী প্রকাশ উপলক্ষে আমাদের আর একজন বন্ধু লাভ হইল। ইনি কবিবর শ্ৰীযুক্ত বিহারীলাল চক্ৰবৰ্ত্তী । উtহাকে দেখিলেই মনে তুইত—একজন খাটি কবি । সৰ্ব্বদাই তিনি ভাবে বিভোর হইয়া থাকিতেন । যখন কোনও সাহিত্য-আলোচনা হইত অথবা কোনও বিষয় চিস্তা করিতেন, তখন তামাক টানিতে টানিতে চক্ষু দুইটি রঞ্জিয়া তিনি ভাবে ভোর হইয়া যাইতেন । আমাদের বাড়ী যখনই আসিতেন তখনই তিনি আমায় বেহালা বাঙ্গাইতে বলিতেন । তন্ময় ভাবে বেহালা শুনিতেন।” elরতীর প্রথম বর্ষে ‘সম্পাদকের বৈঠকে “গঞ্জিকা’’ নামে একটt ভাগ ছিল । তাহাতে কেবল বাঙ্গকৌতুকের কথাই থাকিত । এইভাগে দ্বিজেন্দ্রবাবুই প্রায় সব লিখিতেন। জ্যোতিবাবু "উনবিংশ শতাব্দীর রামায়ণ বা রমিয়াড" নামে কেবল একটা নক্স লিখিয়াছিলেন। জ্যোতিবাবু তখন অনেক বিষয়েই লিপিতেন। প্রথম বর্যের “ভারতী’তে রবিবাবু ও অক্ষয়বাবুর লেখাই বেশী প্রকাশিত হইয়াছিল। “ভারতী" তে রবিবাবুর “মেঘনাদবধ’ কাব্যের সমালোচনা ও কবিতা প্রথম বাহির হয় । অক্ষয়বাবু তখন বঙ্গসাহিত্যের সমালোচনা এবং হৃদয়-ভাবের সূক্ষ্ম বিশ্লেষণ করিয়া প্রবন্ধাদি লিখিতেন, যেমন “মান ও অভিমানে কি প্রভেদ ?” ইত্যাদি । লোকের এসব খুবই ভাল লাগিত। ভারতীর দ্বিতীয় বর্ষ হইতে শ্ৰীমতী স্বর্ণকুমারী দেবীর রচনায় পত্রিকার অনেক পৃষ্ঠা পূর্ণ হইতে আরম্ভ করিল । অক্ষয়বাবুর কথায় জ্যোতিবাবু বলিলেন “অক্ষয় এম-এ বি-এল পাশ করিয়া এণ্টনি হইয়াছিলেন । বিধাতার বিড়ম্বন আর কি ! তাহার মত শিশুর ন্যায় সরল, বিশ্বাসপ্রবণ, ভাবুক এবং আসল কবি মানুষ কি কখনও সংসারকার্যে উন্নতি লাভ করিতে পারে ? তিনি সেক্সপীয়রে বড় ভক্ত ছিলেন ; বাড়ীর কয়েকটি ছেলেকে তিনি সেক্সপীয়র পড়াইতেন; কিন্তু পড়াইতে পড়াইতে নিজেরই চক্ষুজলে উtহার বক্ষস্থল ভাসিয়া যtষ্টত । তিনি যেখানে বসিতেন, সে জায়গাটা চুরুটের ভুক্তাবশেষ ছাই এবং দেশলাইয়ের কাঠিতে একেবারে পরিপূর্ণ হইয়া উঠিত। কোনও কল্পনা যদি কখনও উtংrর মাথায় একবার ঢুকিত, তবে সেট। বাহির হওয়া বড়ই মুস্কিল