পাতা:প্রবাসী (চতুর্দশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১৭৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

b&అ অষ্টম পরিচ্ছেদ মরুপ্রান্তে । শস্যশ্যামল বিস্তীর্ণ পঞ্চনদ প্রদেশের নিয়ে জনহীন, তৃণহীন, জলশূন্য, দিগন্তবিস্তৃত, বালুকাময় প্রান্তর ; প্রাচীন , কালে ইহারই নাম ছিল মরুমাড় । খৃষ্টাব্দের অষ্টম শতাব্দীর শেষভাগে দুৰ্দ্ধৰ্ম গুর্জর জাতি এই বিস্তৃত মরু প্রদেশের অধিবাসী ছিল । সেই সময়ে হ্রণাপর নামধারী গুর্জরগণ চিরতুষারাবৃত গান্ধীর হইতে নৰ্ম্মদাতীর পৰ্য্যন্ত সমগ্ৰ ভূখণ্ড অধিকার করিয়াছিল । দীর্ঘকাল আর্য্যাবৰ্ত্তবাসের ফলে বৰ্ব্বরগণ অর্য্যেসভ্যতা ও আর্য্যভাষা গ্রহণ করিয়া ক্রমশঃ কুরুবর্ষের রীতিনীতি বিশ্বত হইতেছিল। খৃষ্টীয় অষ্টম শতাব্দীর মধ্যভাগ হইতে মরুবাসী গুঞ্জয়গণ অত্যন্ত বলশালী হইয়া উঠে । তাহারা নিৰ্ম্মম নিষ্ঠুর মরুভূমিতে বাস করিয়া অত্যন্ত বলশালী ও কষ্টসহিষ্ণু হইয়া উঠিয়াছিল, এবং সে সময়ে উৰ্ব্বর পঞ্চমদবাসী গুর্জরগণ পদে পদে তাহাদিগের নিকটে পরাজিত হইতেছিল। মালবের নিকটবৰ্ত্তী মরুময় প্রদেশ হইতে গুর্জররাজগণ ক্রমশঃ সরস্বতী তীরস্থিত স্থার্থীশ্বর ও জাহ্নবীতীরবৰ্ত্তী সুদুর কান্যকুৰ্ম্ম পৰ্য্যপ্ত স্বীয় আধিপত্য বিস্তার করিয়াছিলেন, তখন গুজ্জররাজধানীর অপর নাম ছিল ভিল্লমাল । মরুভূমির দক্ষিণ সীমান্তে তিৰুমাল নগর অবস্থিত, বিশাল জনশূন্ত মরুভূমি যেস্থানে পৰ্ব্ব তমালায় শেষ হইয়াছে, সেই স্থানে পৰ্ব্ব তমালার সামুদেশে দুর্ভেদ্য দুর্গশ্রেণী-বেষ্টি ত গুজ্জর রাজধানী শোভা পাইত। গুর্জ ররাজধানী ক্ষুদ্র নগরী, দৈর্ঘ্যে এক ক্রোশ, ও প্রস্থে পঞ্চশত হস্ত মাত্র, কিন্তু ইহর চতুর্দিকে ভীষণদর্শন পাষাণ প্রাকার ও সুগভীর পরিখা, তোরণে তোরণে লৌহনিৰ্ম্মিত দ্বারক্রয় এবং তাহার পশ্চাতে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দুর্গ । নগরের উপরে শৈলমালার প্রতিশৃঙ্গে পাষাণনির্মিত দুর্গসমূহ দুরারোহ পৰ্ব্বতশিখরে অন্ধকার গুহা ও পাষাণ প্রাকারের দ্বারা পরস্পরের সহিত সংলগ্ন । পানীয় জলের অভাব না চইলে গুজ্জররাজধানী দুৰ্জ্জেয়, আৰ্য্যাবৰ্ত্তে ও দাক্ষিণাত্যে এই জনশ্রুতি ছিল । - {গ্ৰবাসী—অগ্রহায়ণ, ১৩২১ § [ ১৪শ ভাগ, ২য় খণ্ড A S SJMS JSJASAS A SAS SSAS SSAS SSAS SSAS • হেমস্তের মধ্যাহ্নে ভিল্লমালের নগরপ্রাকার হইতে তিন ক্রোশ দুরে একজন পথিক পথিপার্শ্বে খর্জুরকুঞ্জের স্বল্প ছায়ায় বিশ্রাম করিতেছিল। তাহার সম্মুখে দুইটি উষ্ট্র সুদীর্ঘ গ্রীবা অগ্নিবৎ উত্তপ্ত বালুকক্ষেত্রে সংলগ্ন করিয়া খর্জুরকুঞ্জের নিকটবৰ্ত্তী পঙ্কিল জলাশয় হইতে দীর্ঘকাল পরে পানীয় গ্রহণ করিতেছিল। উষ্ট্রের স্তায় কষ্টসহিষ্ণু পশু বিরল ; এই উষ্ট্র যখন মুদীর্ঘ গ্রীব ভূমিতে রক্ষা করিয়া বিশ্রাম করে তখন উষ্ট্রপাল বুঝিতে পারে সে তাহার সহিষ্ণুতার সীমান্তে উপনীত হইয়াছে। রৌদ্রদগ্ধ বালুকক্ষেত্র হইতে তীব্র তপ্তবায়ু ও শত শত স্বচীবৎ তীক্ষ্ণ বালুককণা আসিয়া পথিককে দগ্ধ করিতেছিল, সে ব্যক্তি বস্ত্রখণ্ড জলাশয় হইতে বারবার অর্ণ দ্র" করিয়া লইয়া মুখে ও মস্তকে জলসেক করিতেছিল। অদূরে তিল্পমালনগর, উষ্ট্রপৃষ্ঠে মাত্র দুইদণ্ডের পথ, কিন্তু তাহার পক্ষে প্রখর রৌদ্রে যাত্রা কর। অসম্ভব, কারণ তাহার বাহনদ্বয় তখন পথ চলিতে অশক্ত । পথিক অগত্যা খর্জুরকুঞ্জের ক্ষীণছায়ায় বসিয়া মরুমাড়ের অগ্নিবৎ পবন-হিল্লোলে শুস্তিদূর করিবার চেষ্টা করিতেছিল । তাহার পশ্চাতে জলাশয়ের সম্মুখে একটি প্রাচীন দেবালয়, তাহার একটি মাত্র প্রাচীর অবশিষ্ট আছে। মধ্যাহ্নকাল, সুতরাং জীর্ণ দেবালয়ের কোন স্থানে ছায়ার চিহ্নমাত্রও নাই । অকস্মাং পথিক পদশব্দ গুনিয়া পশ্চাতে চাহিয়া দেখিতে পাইল, জীর্ণ দেবালয়ের তোরণে একজন গৈরিকধারী সন্ন্যাসী দাড়াইয়া আছে । পথিক তাহাকে দেখিয়া চমকিত হইয়া উঠিয়া দাড়াইল, কারণ সে যখন জলাশয়ে আসিয়াছিল, তখন সেই স্থানে কেহ ছিল না । সন্ন্যাসী বস্ত্রমধ্য হইতে অলাবুপাত্র বাহির করিয়া ভিক্ষা চাহিল, কি স্তু পথিক মস্তক সঞ্চালন করিয়া জানাইল ষে সে ভিক্ষা দিতে পরিবে না। তখন সন্ন্যাসী কহিল, “অর্থ চাহি না, খাদ্য আছে ?” পথিক বিরক্ত হইয়। বলিল, “আমার নিকটে নাই, দুরে ঐ নগরে আছে।” সন্ন্যাসী হাসিয়া কহিল, “তাহ আমি জানি, সে কথা তোমাকে বলিয়া দিতে হইবে না। নগর এখনও এক প্রহরের পথ, সমস্তদিন কিছুই অহার হয় নাই, সেই জন্তই তোমার নিকট ভিক্ষা করিতেছিলাম। শিব শস্তে !