পাতা:প্রবাসী (চতুর্দশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১৮৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

> とや বাছাই করতে যেত। ভ্যাবাচ্যাক লেগে যেত না ?. দাড়ি আর চৌগোপ্পা চুমরে চারিদিকে আমিয-লোলুপ মার্জারের মতন অতগুলো পুরুষ প্যাটপ্যাট করে চেয়ে রয়েছে, তার মধ্যে দাড়িয়ে বাছাই কবৃব কাকে ? ভরে লজ্জায় সেদিকে তাকাতেই ত পারা যাবে না ! অথচ "তার প্রত্যেকে স্লোলুপ হয়ে আমার দিকে তাকিয়েই আছে । আমার ত মনে করতেই গা শিউরে ওঠে ! সত্যি ভাই, পুরুষগুলো কি বিচ্ছিরি করেই যে তাকায় ! আমি শেয়ালদা ষ্টেসনে টিকিট বিক্রী করবার একটা চাকরী পেয়েছি। সামান্য মাইনে। রোজ ত আর গাড়ী করে আপিসে যেতে পারিনে, কাজেই ট্রামে করে? আপিসে যেতে হয় । যেদিন ভাই প্রথম ট্রামে করে? আপিসে যাব বলে’ বেরুলাম, সেদিন মনের অবস্থা ষে কি হয়েছিল তা অন্তৰ্য্যামীই জানেন। ফণশীকাঠে চড়বার সময় মামুযের মন বোধ হয় এমনি করে ।—পায়ে পায়ে জড়িয়ে যাচ্ছিল, ঠোট শুকিয়ে উঠছিল, মুখ অকাবুণ লজ্জায় কেমন ক্ষণে ক্ষণে লাল হয়ে পড়ছিল, বুক স্কুরদুর করছিল। আমি জোর করে’ ত নিজেকে এক রকম টেনে নিয়ে গিয়ে ট্রাম থামবার থামের কাছে ফুটপাথের ধারে রাস্তার দিকে মুখ করে’ দাড়ালাম । পথিক পুরুষদের মধ্যে আমনি একট। চঞ্চলতার ঢেউ জেগে উঠল। ভাগ্যিস্ ভগবান মাখার পেছন দিকে চোখ দেননি। সামনে পেছনে পুরুষদের বাদরামি লক্ষ্য করতে হলে এঁকেবারে ক্ষেপে উঠতে হ’ভ। একদিকে যে অনেকখানি অদেখা থেকে যায় সেটা মস্ত বঁাচোয়া ! ট্রামে উঠেও কি ছাই নিস্তার আছে ? আমি ট্রামের পাদানে উঠ বামাত্রই ট্রামযাত্রী পুরুষগুলো অমনি উদ্‌গ্ৰীব হয়ে ওঠে, আমি কোনূ কামরায় না-জানি ঢুকি। পুরুষগুলো ভাই এমনই হস্তিকর জীব যে তাদের দেখে আমাদের গাম্ভীৰ্য্য রক্ষা করা দুষ্কর হয়ে ওঠে ; তার ওপর আবার ওরা নানান রকম ভঙ্গী করে লোক হাসায় যে কেন তা বলতে পারি নে। প্রথম নজরেই তাদের বিকট মূৰ্ত্তির বিচিত্র রূপ ভারি কৌতুককর মনে হয়। কারে মুখে গোপদাড়ির নিবিড় জঙ্গল, তার ভেতর চোখ দুটো বনবিড়ালের মতে ওত প্রবাসী—অগ্রহায়ণ, ১৩২১ [ ১৪শ ভাগ, ২য় খণ্ড পেতে বসে থাকে। কারে দাড়ি কামানো, শুধু গোপ জোড়া একজোড়া বর্ণটার মুতো মুখের দরজার মোট কপাট জোড়ার ওপর ঝোলানো রয়েছে, যেন কুনজর না লাগে। কেউ বা দাড়িগোপ সমস্ত টেছেছুলে নিৰ্ম্মল করে? আমাদের মুখের অমুকরণ করতে চায়—কিন্তু ও চtযাড়ে চেহারা শুধু দাড়িগোপ কামালেই বা মোলায়েম হবে কেন ? কাউকে কাউকে মন্দ দেথায় না বটে, কিন্তু অধিকাংশকেই মাকুন্দ মতন বি শ্ৰী লাগে । কারুর বা দাড়িগোপ দুই ছাটিয়া মাফিকসই করিয়া রাখা—তাদের তত মন্দ লাগে না । পুরুষ বেচারার দাড়িগোপগুলো নিয়ে ষেন মহা গণ্ডগোলে পড়ে গেছে, ঠিক করেই উঠতে পারছে না জঙ্গলমহাল রাখবে, ছাটবে, না কাটবে ! তারপরে মাথার টেড়িরই বা কত রকম রূপ ! তোলা, লতানে, ঢেউখেলানো, কেঁকড়ানো ; সি থি মাঝে, ডাহিন দিকে, বা দিকে ; কারুর সারা মাথায় টাক, সামনের দুটিখানি পাতলা চুলেই টাক ঢাকবার ব্যর্থ চেষ্টায় টেড়ির ক্ষীণ আভাস দেখা যায় ; কাহারে। মাথার সামনে টেড়ি, পশ্চাতে টিকি ! এই দৃশুটি দেখে আমার এমন হাসি পেয়েছিল যে অসভ্যগুলোর মধ্যে আমিও আর একটু হলে অসভ্য হয়ে পড়তুম। পোষাকেরই বা কত রকম বিচিত্রতা। ওরা এখনো ঠিক করতেই পারেনি কেমন সজ্জা ওদের ঠিক মানায়। কারো পূরে দপ্তর সাহেবী সজ্জা—কিন্তু পাঞ্জামাটা হয়ত সরুঙ্গে, কোটটা ঢলঢলে, টাইট। বাকী, কলারটা শার্ট ছেড়ে ঠেলে উঠে পড়েছে, হ্যাটটা কতককেলে পুরোণো ময়লা--তবু সাহেব সাজতে হবে । কারো ধুতির ওপর চাপকান, তার ওপর চাদর, মাথায় কিছু নেই ; কারে গায়ে কোট, কারো শার্ট, কারো পিরান। কারো জামা ঘামে তেলে একেবারে জরে উঠেছে, দুর্গন্ধে পাশের লোককে অতিষ্ঠ করে তুলছে, ছেড়ে ধুতে দেবার তাড়া নেই ; কারে জামায় কাপড়ে পানের পিক ছিটিয়ে পড়েছে, কানে-গোঞ্জ। দাতখোটা খড়কের মুখে চিবানো পানের কুচি জার ছোপ লেগে আছে। ওরই মধ্যে দুএকজনকে বেশ ভদ্রলোকের মতন, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন, দেখা যায়। কিন্তু তাদেরও দুটি শ্রেণী আছে—