পাতা:প্রবাসী (চতুর্দশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৭৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৫৬ R. করদ রাজ্য । যদি ইংলণ্ড তুর্কিসৈন্যদিগকে মিশরের ভিতর. দিয়া ত্রিপলীতে যুদ্ধ করিতে যাইতে দিত, তাহা হইলে ইতালীর ত্রিপলী আক্রমণ করিতে সাচস হইত না । কিন্তু ইংলণ্ড, মিশরের ভিতর দিয়া তুর্কিসৈন্য যাইতে দিবে না, এইরূপ পরিষ্কার প্রতিশ্রুতি দেওয়ায়, এবং লর্ড কিচ - নার ঐ প্রতিশ্রুতি রক্ষার জন্য কঠোর উপায় অবলম্বন । করায়, ইতালী তুরস্কের সহিত যুদ্ধে জয়লাত করে ও ত্রিপলী অধিকার করিতে সমর্থ হয়। ইংলণ্ড, একমাত্র ইংলণ্ডই, ইতালী কর্তৃক ত্রিপলীজয় সস্তব করিয়াছিল! ওএগল বলেন, ইহার ফলে ইংলণ্ড ও ইতালীর মধ্যে একটি অলিথিত বন্দোবস্ত হইয়াছে। জামেনীর ব্যবসা দখল করা একটা কথা উঠিয়াছে যে এখন যুদ্ধের দরুন জার্মেনীর সস্তা জিনিয সব বাজারে আসিতেছে না ; এই সুযোগে সেই রকমের জিনিয সব প্রস্তুত করিয়া বাজার দখল করিয়া বসা কৰ্ত্তব্য । কথাটা শুনিতে বেশ । কিন্তু দখল করিবে কে ? আমির দখল করিতে পারি, ইংরেজ পারে, মার্কিন পারে, জাপানী পারে, আরও কত জাতি পারে । যাহার কলকারখানা, নিপুণ কারিগর, অভিজ্ঞ কারখানা-পরিচালক ও মূলধন পাইবার যত সুবিধা হইবে, সেই তত সহজে বাজার দখল করিতে পরিবে। গবর্ণমেণ্ট যাহার যত সহায় হইবে, বাজার দখল করা তাহার পক্ষে তত সহজ হইবে । ইংরেজের উপর নিজের দেশের শ্ৰীবৃদ্ধি সাধন করিবার ভার আছে, এবং ভারতবর্ষের রাজকাৰ্য্য নিৰ্ব্বাহের ভারও আছে । অধিকন্তু ভারতবর্ষের বাণিজ্যও প্রধানতঃ ইংরেজের হাতে । এ অবস্থায় ইংরেজ, ভারতবর্ষের বাণিজ্যক্ষেত্র হইতে যেখানে যেখানে জার্মেনী বেদখল হইয়াছে, তথায় নিজেদের অধিকার বিস্তারের চেষ্টা করিবে, ন ভারতবাসীকে দখল করিতে চেষ্টা করিবে, তাহ। ইংরেজরাই স্থির করিবে । তাহীদের নিৰ্ব্বাচন আমাদের সুবিধা অসুবিধার অনুযায়ী হইবেই, এরূপ আশা করা যায় কি ? ইতিমধ্যেই জাপান নিজের অধিকার কতকটা বিস্তার করিয়া ফেলিয়াছে। ইংলণ্ডে ভারতবর্ষ অপেক্ষা মূলধন, উদ্যোগ, কারখানাপরিচালন করিবার লোক, দক্ষ কারিগর, সবই বেশী আছে । তাহার উপর গবর্ণrমণ্টও সকল রকমে আন্তরিক সাহায্য করিতেছেন। একটি দৃষ্টান্ত দিতেছি। পূৰ্ব্বে নানাদেশে উদ্ভিদ ও প্রাণীদেহ হইতে নানারকমের রং তৈরী হইত। যেমন আমাদের দেশে নীলের গাছ হইতে নীল রং হইত, এখনও সামান্ত পরিমাণে হয় । জার্মেনীতে রাসায়নিক উপায়ে সৰ্ব্বপ্রকারের রং প্রস্তুত প্রবাসী—পৌষ, ১৩২১ [ ১৪শ ভাগ, ২য় খণ্ড হওয়ায় উদ্ভিজ্জ ও জৈব রঙের চলন খুব কমিয়া গিয়াছে । ইংলণ্ড য শিল্পে এত উন্নত দেশ, সেখানেও রং আমদানী হইত জার্মেনী হইতে। এখন যুদ্ধের জন্য তাহ বন্ধ হওয়ায় ইংলণ্ডকে নিজে রং প্রস্তুত করিতে হইবে। পূৰ্ব্বে রয়টার কোম্পানী তারে এই সংবাদ দিয়াছিল, যে, এই উদ্দেশ্যে ইংলণ্ডে একটি কোম্পানী দ্বারা এক কারখানা স্থাপিত করিবার চেষ্ট হইতেছে, এবং গবর্ণমেণ্ট নিজে মূলধনের কিয়দংশ যোগাইবার জঙ্গ কোম্পানীর অংশ খরিদ করিবেন। এক্ষণে সংবাদ আসিয়াছে যে, গবর্ণমেণ্ট ঐরূপে সাহায্য করা ছাড়া অধিকন্তু ২,২৫,০০,০ • ০ দুইকোটি পচিশলক্ষ টাকা মূলধনের মৃদ যাহাতে অংশীদারেরা পায় তজ্জন্ত জামীন বা অঙ্গীকারবদ্ধ রহিবেন। অর্থাৎ যদি প্রস্তাবিত রঙের কারখানায় লাভ না হয়, তাহা হইলে গবৰ্ণমেণ্ট নিজে অংশীদারদিগকে তাহীদের মূলধনের স্থদ দিবেন। ইংলণ্ডের মত ধনী, উদ্যোগী, শিল্পনিপুণ দেশে যখন এইরূপ সরকারী সাহায্য, অঙ্গীকার ও উৎসাহদানের প্রয়োজন রহিয়াছে, তখন ভারতবর্ষের মত দেশে যে শতগুণ অধিক সহায়তা অবিশুক, তাহ বুঝিতে খুব বেশী বুদ্ধির দরকার হয় না । কিন্তু এরূপ সাহায্য কি পাওয়া যাইবে ? পাওয়া না গেলেও হাল ছাড়িয় দিলে চলিবে না। গবর্ণমেণ্টের সাহায্য ব্যতিরেকেও বাংল। দেশেই অন্ততঃ দুটি কিঞ্চিৎ বড় রকমের কারখানা দাড়াইয়াছে। বোম্বাই অঞ্চলে অনেক আগে হইতেই অনেকগুলি দাড়াইয়াছে। সুতরাং আশা আছে । অতীত গৌরব যেমন অন্যান্য অনেক বিষয়ে তেমনি শিল্পেও আমরা ভারতবর্ষের অতীত শ্রেষ্ঠতার গৰ্ব্ব করিয়া থাকি । কিন্তু এই কথা ভাল করিয়া আমাদের স্মৃতিপটে মুদ্রিত থাকা উচিত, যে, যাহার অতীত যত গৌরবময়, তাহার বর্তমান থান দশা তত বেশী লজ্জাকর । অতীত গৌরবের স্মৃতি যদি আমাদিগকে নিজেদের মহত্বসম্ভাবনায় দৃঢ়বিশ্বাসী করিয়া আমাদের চেষ্টাকে দ্বিগুণিত না করে, যদি উহা কেবল আমাদিগকে অলস অকৰ্ম্মণ্য বাচাল অহঙ্কারী করিয়া তোলে, ৩বে সে স্মৃতি যত শীঘ্ৰ লোপ পায়, ততই মঙ্গল ! আমেরিকায় যে-সকল কাফ্রি নিগ্রে। দাসত্বে বিক্রীত হইত, তাহীদের ও তাহাদের সন্তানদের অতীত গৌরব ছিল না বলিয়া কি তাহার) উন্নত হইতে পাfরতেছে না ? তাহাদের মধ্যে ৫০ বৎসরের চেষ্টাতেই অনেক ধাৰ্ম্মিক, শিক্ষাব্রতী, বৈজ্ঞানিক, সাহিত্যিক, শিল্পী, বক্তা জন্মিয়াছে ।