পাতা:প্রবাসী (চতুর্দশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৯৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩য় সংখ্যা ] তাহাদের বাড়ী আমার দিদির বাড়ীর ঠিক লাগোয় ; তাহাদের সকলের সঙ্গে দিদির খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব ছিল । আমি তখন দিদির বাড়ীতেই থাকিয় পড়িব বলিয়। বঁকিপুরে গিয়াছিলাম । আমার মা অল্প বয়সেই মাত্র যান। তারপর এণ্ট,ান্স পরীক্ষণ আগেই বাবা ও মারা গেলেন, কিন্তু আমার খাওয়৷ পর বা লেখাপড়ার ব্যবস্থা করিবার মতো কোনে। কিছুই সঙ্গতি রাখিয়া গেলেন না । আমি এণ্টান্স পাশ করিলে দিদি আমাকে তাহার কাছে লইয়া গিয়া পড়িবার ব্যবস্থা করিয়া দিলেন। আমার ভগ্নীপতি বঁকিপুরে ওকালতি করিতেন । আর ইন্দুলেখার পিতা পতিতপাবন বাবু ছিলেন সেখানকার সবজজ । ইন্দুলেখাদের বাগানের ধারেই একটি পরে আমার বাস নির্দিষ্ট হইয়াছিল । পড়িতে পড়িতে হঠাৎ একটা গোলাপ ফুলের মার ধাইয়। চমকিয়া জানলার দিকে চাহিয়া দেখিতে পাইতাম দুইহাতে দুই গরাদে ধরিয়া ইন্দুলেখা খিলখিল করিয়া হাসিয়া কুটিকুটি হইতেছে। কোনে। দিন হঠাৎ একরাশ ফুহ ফুল ইন্দুলেথার হাসির মতে ঝরঝর করিয়া ঝরিয়া আমার দুইয়ের লেখা ঢাকিয়! আমার পড়া বন্ধ করিয়া দিত। কখনো সে চুপিচুপি আসিয়৷ পিছন হইতে চোখ টপিয়া ধরিয়া উচ্ছ,সিত হাসি চাপিতে গিয়া পৃক খুক শব্দ করিত ; আমি বলি তাম--“এচ জানকিয়াকে মাঈ, আঁখি ছোড়ি দে গে !”—আমনি সে হাত ছাড়িয়া দিয়া হাসিতে হাসিতে লুটাইয়া কেবলি বলিত—“কেমন ঠকিয়েছি । কেমন ঠকিয়েছি ! ওমা, আমি কি না-জানকিয়া কে মাঙ্গ !” এমনি একই ভুল আমি রোজই করিতাম, কিন্তু তাহীতেও তাহার হাসির কমতি কোনো দিনই হইত না ; আমার সহিত হন্দুলেখাগু ভাব বেশি করিয়া জমিয়। উঠিল তাহার চুরি করিয়া বাংলা মাসিকপত্র আর উপষ্ঠাস পড়িবার নেশায় । তাহার কৃপণ সবজজ বাপ মাসিকপত্র প্রভৃতি লইয়া বাজে খরচ করিতেন না ; প্রকাশু্যে উপন্যাস পড়া চোদ্দ বৎসবের মেয়ের মানাইত না ; এজন্য তাহার চুরির রশদ জোগাইতে হইত আমাকে । পোষ্টকার্ড o అసె • এমনি আনন্দে কয়েক বৎসর গেল । t আমি তখন পি-এ পড়িতেছি। শুনিলাম ইন্দুলেধার বিবাহের কথা হইতেছে । আমার মনে কেমন একট। ধাক্কা লাগিল, ভাবিতে লাগিলাম --ইন্দুলেখার বিবাহ এত সত্বর ! কিন্তু হিসাব করিয়া দেখিলাম ইন্দুর বয়স তখন ষোল পার হইতে চলিয়াছে। প্রবাদী বাঙালী বলিয়া ইহাব আগেই তাহার বিবাহ হইয়া চুকিয়া যায় নাই। যতই ইন্দুর বিবাহের কথা চারিদিকে শুনিতে লাগিলাম, ততই যেন আমার মনের কোথায় হtহণকার জমিয়। উঠিতে লাগিল । এখন আর ইন্দু আমার উপর পুষ্পবৃষ্টি করে না, এখন আর সে চোখ টপিয়া ধরিয়া হাসিয়া কুটিকুটি হয় না। সেদিনকার সেই এতটুকু ইন্দু অঙ্গ বিবাহের সস্তাবনায় গম্ভীর ভরিক্কি হইয়া উঠিয়াছে । একদিন আমি ইন্দুকে হাসিতে হাসিতে জিজ্ঞাসা করিলাম--ইন্দু, বিয়ের কোথাও কিছু ঠিক হল ? ইন্দু ছলছল চোখে তৎসনা ভরিয়া একবার অামার মুখের দিকে চাহিয়া সেখান হইতে চলিয়া গেল। আমি লজ্জিত ব্যথিত হইয় ফরিয়া আসিলাম। 'তাহার পর অণর কোনো দিন ইন্দূলেখার কাছে তাহার বিবাহের কথার উল্লেখ করিতে পারি নাই । বিবাহ হইবে ইন্দুলে ধার, কিন্তু আমার দিনের কাজ আর রাতের বিশ্রাম বন্ধ হইয়া আসিল । আমি আর ইন্দুর সহিত সহজ ভাবে দেখা করিতে পারি না। অনেক ভাবিয়া চিন্তিয়া আমার সহপাঠী বন্ধু অনাদির শরণ লষ্টলাম । অনাদি পতি তপা বন বাবুর সঙ্গে এ-কথা সে-কথার পর জিজ্ঞাসা করিল—ইন্দুর বিয়ের কোথাও কিছু কি ঠিক হল ? পতিতপাবন বাবু সঙ্গিলেন— ন হে, কিছু ত এখনো ঠিক করতে পারিনি । তোমাদের সন্ধানে ভালো পাত্র টাত্র আছে ? অনাদি দলিল---আমাদের মনমোহনের সঙ্গে বিয়ে দিন না । o পতিতপাবন বাবু আশ্চৰ্য্য হইয়া বলিয়। উঠিলেন—কে,