পাতা:প্রবাসী (চতুর্দশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૨૭ চলিতে লাগিল। যতখানি নদী, বালুকারাশির বিস্তৃতুিও ততখানি । গ্রীষ্মকালে নদী প্রায় অৰ্দ্ধেক শুকাইয়। গিয়াছে । বাঙ্গলাদেশে নদীর ধারে পলিমাটির এলং বালির উপর যে সকল শস্ত জন্মে নাইলনদীর ধারে ও সেইসমুদয় দেখিলাম । তরমুজ, শসা, পেয়াজ, মটরশুটি, কুমড়া ইত্যাদি নানাপ্রকণব শাকশজীর চাষ হইতেছে । মেষ ও ছাগলের পাল চরিতেছে। গর্দভ ও ষ্ট্রের পৃষ্ঠে লোকেরা যাতায়াত করিতেছে । মধ্যে মধ্যে গোধূমক্ষেত্র ও খেজুরবন । এখানে ভূমির এত উর্বরতা শক্তি যে সামান্ত চাষেই অতিঘনসন্নিবিষ্ট উদ্ভিদের উৎপত্তি হয় । চাষের অবস্থা দেখিয়। বোধ হইল নাইলের পলিমাটিতে বিঘায় প্রায় ২০২৫ মণ গোধূম উৎপন্ন হইয়া থাকে । পঞ্জাবের খালের সমীপবৰ্ত্তী জমি এবং যুক্তপ্রদেশের গঙ্গার কি নারা ব্যতীত এই পরিমাণ শস্য, ভারতবর্ষের আর কোথাও বোধ হয় জন্মে না । বরাবর উত্তরদিকে চলিলাম । নাইলের একটা খাল রাস্তায় পড়িল । আখের ক্ষেতের ভিতর দিয়া একট। ছোট রেলপথও দেখতে পাইলাম । চিনির কলের জন্য এই রেল প্রস্তুত হইয়াছে । আমাদের রাস্তায় কুশের ঘাসও দেখা গেল । স্থানে স্থানে দেখিলাম— কুস্তকারের। বড় বড় মাটির ভাড় তৈয়ারা করিতেছে । কুপ হইতে জল তুলিবার জষ্ঠ পারস্যচক্রে এই-সকল ভীড় ব্যবহৃ৩ হইয়া থাকে। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্ৰ ইটের পাঞ্জাও মাঠের মধ্যে দেখা গেল । পূৰ্ব্বদিকে লাথিয় পাহাড়ের পাদদেশে পুরাতন অট্টালিকার বহু ধ্বংসাবশেষ গাড়া হইতে দেখিতে পাহলাম । আমরা প্রথমেই এখানে নামিলাম না । পাহাড়ের ভিতরকার একট। নবনিৰ্ম্মিত রাস্ত দিয়া আমরা ইহার অপরদিকে যাইতে লাগিলাম । দুই পাশ্বে উচ্চ পৰ্ব্বতগাত্র । সৰ্ব্বত্র শ্বেত অথবা ঈধৎলাল লাইমষ্টোন পাথর । রাস্তা প্রস্তরময় ৷ পাহাড়ের গায়ে একটি তৃণ ও জন্মে না । কোন স্থানে একট। ঝরণাও নাই। চারিদিক্ রৌদ্রে পুড়িয়া যাইতেছে । আমরা একটা অগ্নিকুণ্ডের ভিতর দিয়া চলিতেছি বোধ হইল । প্রবাসী—পৌষ, ১৩২১ [ ১৪শ ভাগ, ২য় খণ্ড নাঙ্গলের অপর পারে যেখানে কাৰ্ণাকে য়ামন-মন্দির, আমরা পশ্চিম পারের ঠিক সেই স্থানে এই রৌদ্রতপ্ত পাৰ্ব্বত্য উপত্য কায় প্রবেশ করিয়াছি । বিন্ধ্যপৰ্ব্বত বা দাক্ষিণাত্যের শৈলমালার গায় এই পৰ্ব্বতশ্রেণী। আমর পাহাড়ের ভিতর দিয়া দক্ষিণদিকে চলিতে লাগিলাম । চারিধারের প্রস্তর চর্ণ ও পৰ্ব্বতগাত্র দেখিয়া মনে হইল ইহার কদমে অতুIৎকৃষ্ট বাসন প্রস্তু গু হইতে পারে । প্রায় আধঘণ্ট। এই পথে আসিয়া বিবান-এলু-মুলকে উপস্থিত হইলাম। প্রাচীন ফ্যারাও-সম্রাটগণের এখানে অসংখ্য কবর পর্বতগহবরে লুকায়িত রহিয়াছে। এই পৰ্ব্বতের পাদদেশেই বহু উত্তরে কইরোর সন্নিকটে সাক্কার, অাবুসির ও গঙ্গার পিরামিড ও অন্যান্য সৌধসমূহ বিরাজি ৩। সেইগুলি অতি পুরাতন । মিশরের প্রথম সপ্তদশ রাজবংশীয় নরপতিগণ কবরের জন্য পিরমিড, নিৰ্মাণ কfরতেন । কিন্তু অষ্টাদশ বংশীয়গণের আমল হইতে পিরামিড রচনা স্থগিত হইয়াছে । তখন ইষ্টতে পৰ্ব্বতের ভিতর গুহ। খনন করিয়া তাহার মধ্যে শবরক্ষা করিবার রীতি প্রচলিত হইয়াছিল। বিবান এল্‌মুলকে অষ্টাদশ, উনবিংশ ও বিংশ রাজবংশের ফ্যারাও দিগের সমাধি রহিয়াছে । সুতরাং এই স্থানে ১৫০ • খ্ৰীঃপূৰ্ব্ব যুগের পরবওীকালের গৃহনিৰ্মাণ, শিল্পকলা, ভাস্কৰ্য্য ও চিত্রাঞ্চন দেখিতে পাওয়া যাইবে : কাল দেখিয়াছি—অপরপারে কাণাক ও লুক্সরের সৌধশ্রেণী । সেহ-সমুদয়ে দ্বাদশ রাজবংশীয়কাল হইতে আরস্ত করিয়। পরবত্তী যুগের শিল্পজ্ঞান এবং বাস্তুবিদ্যার পরিচয় পাইয়াfছ । তাহাতে প্রাচীন মিশরীয়fদগের কল্পনাশক্তির বিপুল তা, বিশালত। এবং নিভীকতা দেখিয়। fবস্থিত হইয়াছি। আজ তাহাদের সৌন্দর্য্যজ্ঞান, মাধুৰ্য্যবোধ, ললিতকলা, এবং রং ফলাহবার ক্ষমতা ইত্যাদি দেখিয়া মুগ্ধ হইলাম । গিরিগহবরে গৃহনিৰ্ম্মাণ এবং চিত্রাঙ্কন দেখিবামাত্র দক্ষিণাত্যের কালি তাঞ্জা, অজস্তার কথা মনে পড়িল । গোয়ালিয়ারের লস্করদুগেও এইরূপ সুচিা এত গহবরগুহ দেখা গিয়াছে। ভারতবর্ষের সেই গৃহগুলি মঠের জন্য, বিহারের জল্প, ও বিদ্যালয়ের জন্য নিৰ্ম্মিত হইয়াছিল।