পাতা:প্রবাসী (চতুর্দশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩য় সংখ্যা ] g তথাপি আমাদের মনে যে ভয় হয় নাই, এমন কথা বলিতে পারি না । একটি “গোরা’ এবং একটি অচলায়তনই আমাদিগকে চঞ্চল করিয়া তুলিবার পক্ষে যথেষ্ট হইয়াছে। আমরা একজন লোকের বিদ্রোহের আগুন নিভাইতে অক্ষম—দেখিতে দেখিতে সে ‘আগুন ছড়িয়ে গেল সব খানে।’ যদি আমাদের ভাগ্যে অনেক ইবসেন, অনেক ধার্ণার্ডশ, অনেক মেটারলিঙ্ক জুটিতেন তবে আমাদের বোধ হয় একটি ঘরও অবশিষ্ট থাকিত না । কিন্তু এখন হইতে আমাদের জানা উচিত, যে, এ আগুন ক্রমশঃ ব্যাপ্ত হইতে থাকিবে । কারণ এ প্রাণের আগুন । বৃহৎভাবের তৃতীয়নেত্রের স্ফুলিঙ্গ হইতে ইহার জন্ম । কথা হইতেছে এই যে, একালের এই বিদ্রোহের পরিণাম কি হইবে তাহাই যে প্রশ্নের বিষয় । ইউরোপেই বা কি হইবে এবং এদেশেও যদি তাহা আমদানি হইয়া থাকে, তবে এখানেই বা কি হইবে ? আমরা যে আধ্যাত্মিক হিসাব থতেন করিয়া চলি, কাকত্রগত্তির হিসাবও যে আমাদের বাদ যায় না—সেইজন্ত পরিণামের কথা চিন্তা না করিয়া হঠাৎ এই বিপ্লবের তরঙ্গে আমরা নৌকা ভাসাই কেমন করিয়া ? সমস্ত বাধী মত, বাধা আচার, বাধা ধৰ্ম্ম, বাধা ভাব ও সংস্কার—তিরোহিত হইলে শুধু এই বিপ্লব কি কিছু গড়িতে পরিবে ? কৈ, তোমার বার্ণার্ডশ, মেটারলিঙ্ক, ইবসেন তো গড়ার কোন কথাই কয় না—তাহার। জগৎটাকে চূর্ণ করিয়া অণুপরমাণুর অনন্ত বিশ্লেষণে বিশ্লিষ্ট করিয়া দিতে চায় । এই পৃথিবী যখন স্বল্প হইতেছিল তথন কত তুষারবঙ্গ, কত অযুৎপাত, কত ভূমিকম্প ঘন ঘন ইহাকে আলোড়িত করিতেছিল । সেই সময়ে বড় বড় হিমাচল আদিস ককেসাস উথিত হইয়াছিল, সেই সময়ে তুহিনবিগলিত জলরাশির খাত গভীর হইতে গভীরতর হইতেছিল—মহাদেশ ও মহাসমুদ্র সকলের সংস্থান তৈরী হইতেছিল। সেই প্রলয়ের মুখে ৰথন স্বষ্টি চলিতেছিল, তখন যদি কেহ বিধাতাপুরুষ বিশ্বকৰ্ম্মাকে গিয়া প্রশ্ন করিত—প্ৰভু, এ পৃথিবীর পরিণাম কি হইবে ? তিনি হাসিয়া বলিতেন—তাহ জানিবার প্রয়োজন নাই। তুমি দেথিয় যাওনা ! পরিণাম ভাল বই মন্দ হইবে কেন ? প্রাচীন ও নবীন সাহিত্য e ৩১৩ j আমরা কেন স্বভাবের চেয়ে কৃমিতাকে বেশি বিশ্বাস করি । মানুষ এক সময়ে যাই। গড়িয়াছে, তাহাই যে চিরকাল মানুষের পক্ষে কল্যাণকর হইবে একথা যখনি মনে করি তখনি আমরা স্বভাবকে একেবারেই নস্যাৎ করিয়া দিই । এ বিদ্রোহ যে স্বভাবের নিয়মে আপনি চলিতেছে—ইহাকে দমন করিতে গেলে আমরাই প্রতিহত হইব—-একথা কিছুতেই মনে થાનિtઈમારિ ના રાશિમા বলি—এ ঢেউ থামাইতেই হইবে—কারণ ইহা সাবেককে চূর্ণ করিতেছে। যেন সাবেকই আমার সব, আর হাল অামার শক্রপক্ষ । আমাদের দেশে প্রতিভার যে সংজ্ঞা দিয়াছে, তাত। আমার কাছে অত্যন্ত আশ্চর্য্য বলিয়া বোধ হয় । প্রতিভাকে বলিয়াছে নব-নবোন্মেষশালিনী বুদ্ধি । যে বুদ্ধির নূতন নূতন উন্মেষ হয় তাহারই নাম প্রতিভা। যে বুদ্ধি মনের মাথার চুল পাকাইতে বসে, তাহার গায়ের চামড়া শিথিল করিয়া দেয়, তাহার দৃষ্টিশক্তিকে ক্ষীণ করে, তাহার কৰ্ম্মশক্তিকে স্বাস করে—সে বুদ্ধি প্রতিভা নামের যোগ্য নয় । এইজন্ত প্রতিভার পরিচয়ষ্ট হইতেছে অক্ষয় যৌবনে । * * * যে সাহিত্যে যথার্থ প্রতিভার আবির্ভাব হয় সে সাহিত্যে এই যৌবনের যৌবরাজ্য কায়েম । এই যৌবনই যে নূতন নূতন পরীক্ষাকে উপস্থিত করে, বিপ্লব বাধায়, সংগ্ৰাম করে এবং জয়ী হয় । জ্ঞানবৃদ্ধের। ইহার উপর রাগ করে রাগু করুক, কিন্তু যৌবনের কাজ যদি কোন সমাজে বাধা পায় তবে সে সমাজে যে পচ ধরিয়া যাইবে, বিনাশের ক্রিয় শুরু হইবে । আমাদের দেশে অনেকদিন পর্যান্ত বুদ্ধের একাধিপত্য করিয়াছে। সেইজন্য আমাদের দেশে তত্ত্বজ্ঞানের যথেষ্ট চর্চা হইয়াছে—আমরা সকলেই তত্ত্বকথা বলিতে এবং শুনিতে অতিরিক্তমাত্রায় ভাল বাসিয়াছি। শুধু তত্ত্ববুদ্ধির হাতে সমস্ত রাজ্যের ভার সমর্পণ করিলে সে বুদ্ধি সমস্ত রাজ্যটাকে দেখিতে দেখিতে একটা প্রকাণ্ড কয়েদখান বা পাগলাগারুদ বানাইয়া বসে । সকল কালেই দেখা গিয়াছে যে যুক্তির খেলার ক্রিয়-প্রতিক্রিয়ার যবেণযুঝির পর্ব শেষ হইলেই, শেযকালে