পাতা:প্রবাসী (চতুর্দশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১ম সংখ্যা ] ছলেন । মুর্শীদ কুলীখা ঠিকভাবে রাজস্ব ংগ্ৰহ করিতে লাগিলেন । যে-সব জমিদার ও জাগরদার এতদিন পর্য্যন্ত খাজনা আদায় করিয়া নিজে খাইত এবং বাদশাহকে ফাকি দিত, তাহার বিপদ দেখিল এবং নুতন দেওয়ানের বিরুদ্ধে নানা মিথ্যা নালিশ লিখিয়া বাদশাহের নিকট পাঠাইতে লাগিল। এমন কি কুমার আঞ্জীমূ-উশ-শানের মনও দেওয়ানের বিরুদ্ধে উত্তেজিত করিল। কিন্তু মুশীদ কুলী প্রভুভক্ত ও সাধুকৰ্ম্মচারী, তিনি দৃঢ়ভাবে রাজকীয় প্রাপ্য টাকা আদায় করিতে লাগিলেন এবং তাহ বাদশাহের নিকট পাঠাইতে লাগিলেন । তখন " দক্ষিণাত্যে দীর্ঘকালব্যাপী যুদ্ধের জন্য বাদশাহের ঘোর অর্থাভাব । এ পর্য্যন্ত বাঙ্গলার রাজস্বে তথাকার সরকারী খরচ চলিত না ; সুতরাং এরূপ প্রদেশ হইতে লক্ষ লক্ষ টাকল পাইয়া বাদশাহ অত্যন্ত সন্তুষ্ট হইলেন, এবং তাহার পর সব বিষয়েই দেওয়ানের কথা শুনিতেন এবং সুবাদারকে ধমকাইতেন। যুবরাজ দেওয়ানকে খুন করিবার চেষ্টা করেন, কিন্তু মুর্শীদ সে চেষ্টা বিফল করিয়া, ঢাকা ত্যাগ করিয়া মথসুস-আবাদ নগরে দেওয়ানী আফিস উঠাইয়া লইয়। আসেন, এবং পরে ঐ শহরকে মুশাঁদাবাদ নামে ভূষিত করেন । দিন দিন তাহার ক্ষমতা দাড়িতে লাগিল ; তিনি বঙ্গ উড়িষ্যা ব্যতীত বিহার প্রদেশেরও দেওয়ান, এমন কি সুবাদারের নায়েব অর্থাৎ প্রতিনিধি, নিযুক্ত হইলেন (১৭০৩)। আজীমূ-উশ-শান বিরক্ত হইয়া বাঙ্গলা ছাড়িয়া পাটনায় গিয়া বাস করিতে লাগিলেন, এবং যখন আঁওরাংজীবের মৃত্যুর পর সিংহাসন লইয়। যুদ্ধ বাধিল, তিনি নিজপুত্র ফরোখসিয়রকে প্রতিনিধি স্বরূপ ঢাকায় রাখিয়া দিল্লীর দিকে রওনা হইলেন। তখন মুশীদকুলী খ। বাঙ্গলায় সৰ্ব্বেসৰ্ব্বা হইলেন। মুঘল বাদশাহুদিগের ক্ষমতা হ্রাস হইবার ফলে তিনি কালক্রমে বাঙ্গলায় প্রায় স্বাধীনভাবে রাজত্ব করিতে লাগিলেন, কিন্তু কখনও দিল্লীশ্বরের ক্ষমতা অস্বীকার করেন নাই, এবং তাহার নিকট হইতে সাত হাজার অশ্বারোহী সৈন্তের নেতৃত্ব এবং মুতমন-উল-মুলুক্‌ আলা-উদ-দৌল। জাফর খাঁ বাহাদুর মুর্শীদ কুলীখার অভু্যদয় ২৫ আসদৃজঙ্গ * এই উপাধি ক্রয় করেন । ( মাসির-উলউমারা ) । ৩-এ জুন ১৭২৭ খৃষ্টাব্দে র্তাহার মৃত্যু হয়। বেভেরিজ সাহেব একটি ফাসী শ্লোক হইতে এই ঠিক তারিখটি উদ্ধার করিয়াছেন ( ১৮ জুলাই, ১৯০৮, এথেনিয়ম্ পত্রিক দেখুন )। ইয়ার্ট রচিত বাঙ্গলার ইতিহাসে যে মৃত্যুর বৎসর ১৭২৫ খৃঃ লেখা হইয়াছে তাহার ভিত্তি মাসির-উল-উমার এবং * রযাজ-উস্সালাতীন ; কিন্তু এ দুই গ্রন্থেই ভুল তারিখ দেওয়া হইয়াছে। মুর্শীদ কুলীখার বাঙ্গলার দেওয়ানীর প্রথম অংশে বাদশাহ আওরংজীব তাহাকে যে চিঠি লেখেন তাহার কতকগুলি আমার হস্তগত হইয়াছে। সম্রাটের শেষ বয়সের প্রিয় মুন্সী ইনএৎউল্লাকে দিয়া বাদশাহ যে-সব চিঠি লেখান তাহার দুই সংগ্রহ আছে—একের নাম “কালিমাৎ-ই-তইবাৎ", দ্বিতীয়ের “আহি কাম-ই-আলমগৗরী।” যতদূর জানা গিয়াছে শেষোক্ত গ্রন্থের দুইখানি মাত্র হস্তলিপি জগতে বিদ্যমান আছে—একখানি রোহিলখন্দে রামপুরের নবাবের, নিকট, অপর খানি খুদা বখশ পুস্তকালয়ে। এই দুখানি মিলাইয়। পাঠ উদ্ধার করিয়াছি। সব চিঠিগুলিই বাদশাহের হুকুমে মুন্সীর জবানীতে লিখিত । ( ফাসী পত্রের অনুবাদ ) ( > ) এই সময় বাদশাহ বাহির হইতে শুনিরছেন যে— ( ক ) এই মন্ত্রীবর খাসমহল ও অন্যান্য পরগনাগুলি ইজারা দ্বারা বন্দোবস্ত ( মুশথ খস ) করিতেছেন,—ঐ প্রদেশে ইজার শব্দ রাজস্বের জন্য দায়ী হওয়া [ অর্থাৎ ঠিক লওয়৷ ৷ অর্থে ব্যবহার হয়,—এবং ইজারাদারগণ দুর্কলের ও প্রজাগণের উপর নানাপ্রকার অত্যাচার করিতেছে। পরগনাগুলির আবাদ প্রায় লোপ পাইয়াছে, এবং যদি আর একবৎসর এই প্রকারে চলে তবে নিশ্চয়ই এজাগণ ধ্বংস হইবে ।

  • মুর্শীদ কুলীকে আপদ জঙ্গ’ উপাধি আরোপ করা মুদ্রিত ফার্সী ‘মাসির গ্রন্থের ভুল। উছার উপাধি ‘নদীরজঙ্গ’ ছিল।