পাতা:প্রবাসী (চতুর্দশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪র্থ সংখ্যা ] লোক প্রত্যহু দেড় কোটির উপর টাক। যুদ্ধের জন্য ব্যয় করিতেছে, কিন্তু সাড়ে একত্রিশ কোটি ,লাকের নিকট হইতে এক কালীন এক কোটির বেশী টাকা লওয়৷ অসম্ভব কেন হুইল, তাহার কারণ অনুসন্ধান করা, কৰ্ত্তব্য । কারণ আমরা সংক্ষেপে এইরূপ বুঝিয়াছি। প্রাচীন কাল হইতে এইরূপ রীতি চলিয়া আসিতেছে যে যখুনু কোন রাজা বা সেনাপতি বা সৈন্যদল যুদ্ধে জয়ী হইয়া কোন দুর্গ, নগরাদি দখল করেন, তখন তাহারা যুদ্ধের অব্যবহিত পরে বা কিছু পর পয্যন্ত পরাজিত রাজা, দুর্গপতি ও অপর ধনী লোকদের ধনসম্পত্তি যথাসম্ভব গ্রহণ করিয়া থাকেন। জে তারা ইv *ায্য পাওনা মনে করেন । অষ্টাদশ শতাব্দীতে এবং উনবিংশ শতাব্দীর মোটামুটি অৰ্দ্ধেক সময়ে এই রীতি অনুসারে ভারতবর্ষের ধনের কতক অংশ বিলাতে গিয়াfছল । তাঙ্গার পর এদেশে যখন হইতে সৰ্ব্বত্র শৃঙ্খলা ও শান্তি স্থাপিত হইয়াছে, তদবধি আর এ ভাবে ভারতবর্ষের অর্থ বিদেশে নীত হয় নাই । শিল্প ও বাণিজ্য দ্বারা দেশ ধনশালী হয়। বৰ্ত্তমান সময়ে ভারতবর্ষের প্রায় সমুদয় বাণিজ্য বিদেশীর হাতে ও তাহার অধিকাংশ ইংরেজের হাতে, এবং পণ্য দ্রব্য বিদেশে লইয়। যাইবার জন্য সমুদয় জাহাজ বিদেশীর, প্রধানতঃ ইংরেজের । ভারতবর্ষে কঁচোমাল হইতে নানাবিধ দ্রব্য উৎপাদনের জন্য যত কারখানা আছে, তাহার প্রায় সমস্ত ইংরেজের হাতে । দেশের মধ্যে জিনিষপত্র লইয়া যাইবার জন্য যে সব ষ্টীমার ও রেল গাড়ী চলে, তাহার অধিকাংশ মূলধন ইংরেজের, এবং তজনিত লাভ ইংলণ্ডে যায়। অতএব “বাণিজ্যে বসতে লক্ষ্মী” বলিয়। যে কথা আছে, তদনুসারে লক্ষ্মী ইংলণ্ডে বাস করিতেছেন । আমাদের উদ্যোগিতার অভাবে ও অন্যান্য কারণে আমরা তাহার মুখ দেখিতে পাইতেছি না। বাণিজ্যের নীচে কৃষি ; তাহা হইতে দেশের লোকে দু মুঠ খাইতে পায় । কৃষিজাত শস্ত প্রভূতি বিদেশে চালান দিয়া যে অর্থলাভ হয়, তাহার অধিকাংশ ইংরেজরাই পান ; কারণ ভারতের বহিবাণিজ্য উইদের হাতে । তাহার পর কথা আছে, “তদদ্ধং রাজসেবায়াং (” কিন্তু রাজকার্য্যের ষেগুলি হইতে খুব বেশী আয় হয়, তাহার একটিও ভারতবাসী পায় না। বাকী যেগুলিতে বেশী আয় হয়, তাহারও অতি অল্পসংখ্যক কাজে ভারতবাসীরা নিযুক্ত হয় । সুতরাং রাজসেবা দ্বারাও ভারতের লোকের খুব ধনশালী হইতে পারে না । শিল্পবাণিজ্যে ভারতবাসীরা যদি খুব উদ্যোগী হন, গবর্ণমেণ্ট যদি সে বিষয়ে খুব উৎসাহের সহিত সাহায্য করেন, উচ্চ উচ্চ রাজকাৰ্য্যে। যোগ্য ভারতবাসীদিগকে বিবিধ প্রসঙ্গ—মধ্য এশিয়ায় হিন্দুসভ্যতা & Øpፃ

যপ্পি গবর্ণমেণ্ট নিযুক্ত করেন, তাহা হইলে যুদ্ধের সময় সাম্রাজ্যের ব্যয় ভারতবর্ষ সাক্ষাংতবে তাহার লোকসংখ্যা অনুসারে দিতে পারে। এখনও ভারতবর্ষ খুব টাকা দিতেছে, কিন্তু তাহ। পরোক্ষভাবে । এইঞ্জস্য ষ্টেটুস্ম্যান তাহা দেখিতে পাইতেছেন না । যে সব ইংরেজ • বুদ্ধিমান এবং কতকটা ন্যায়পরায়ণ তাহারা স্বীকার করেন ধে বিলাত দেশট ক্ষুদ্র হওয়া সত্ত্বেও যে এত ধনশালী হইয়াছে, তাহার প্রধান কারণ ভারতবর্ষ। সত্য, আমরা ইংরেজদিগকে ধনী করিয়া দিয়াfছ বলিয়া অহঙ্কার করিতে পারি না ; কারণ ইহাতে আমাদের দানশীলতা বা অন্যবিধ কোন কুfতত্ব নাই । ইংরেজ নিজের পুরুস্কার দ্বারা বহুকাল যাবৎ এদেশ হইতে নানা উপায়ে অর্থসংগ্ৰহ করিয়া আসিতেছে । তাহা হইলেও যাহার ধনে ধনী, তাহাকে উপহাস করা অতি অশোভন । মধ্য এশিয়ায় হিন্দুসভ্যতা ভারতবর্ষের জ্ঞান, ধৰ্ম্ম ও সভ্যতা এশিয়ার নানা দেশে বিস্তৃত হইয়াfছল । তিববত, মধ্য এশিয়া, চীন, মঙ্গোfলয়া, জাপান, ব্রহ্ম, স্ত্যম, আসাম, কাম্বোডিয়া, জাভা, সুমাত্রা, প্রভূতি দেশে ও দ্বীপে হিন্দু সভ্যতার নানা চিহ্ন বিদ্যমান আছে । মধ্য এশিয়ায় অনেক নগর, গ্রাম, মন্দির, বিহার, মরুভূমির বালির নীচে চাপা পড়িয়াছে । ষ্টাইন প্রভূতি প্রত্নতাত্ত্বিক পর্য্যটকগণ এই সকল খনন করিয়া তাহার মধ্য হইতে অনেক মুৰ্বি, চিত্র ও পুথি আবিষ্কার করিতেছেন । সেই সকল আবিস্ক্রিয়া অবলম্বন পুৰ্ব্বক ফরাসী প্রত্নতাত্বিক সিলভেন লেতি মধ্য এশিয়ায় হিন্দু সভ্যতা সম্বন্ধে একটি প্রবন্ধ লিখিয়াছেন । তাহার বৃত্তান্ত বিশেষ করিয়া প্রাচীন কুচা রাজ্য ও নগরী সম্বন্ধে । মধ্য এশিয়া জগতের নানা জাতি ও সম্প্রদায়ের মিলনস্থান ছিল । হিন্দু, পারসীক, তুর্ক, তিববতীয়, বৌদ্ধ, ইহুদী, খৃষ্টিয়ান, ম্যানীকীয়, সকলেরই এখানে গতিবিধি ও অবস্থিতি ছিল । কুচা রাজ্য ও রাজধানী চীন-তুর্কিস্তানের মধ্যস্থলে কাশগার হইতে চীন দেশে যাইবার পথে তুর্কি ও চীনাদের রাজ্যের সীমান্ত প্রদেশে অবস্থিত ছিল । কুচা পুরাকালে প্রথমে আর্য জাতি দ্বারা আধুষিত ছিল । অন্ততঃ তাহাদের ভাষা আর্যা ছিল । উহার অধিবাসীর পিতাকে পাতত্ত্ব, মাতাকে মাতন্ত্ৰ, অষ্টকে অষ্ট বলিত। খৃষ্টীয় প্রথম কয়েক শতাব্দীতে কুচ। বৌদ্ধধৰ্ম্ম ও সভ্যতা এরূপ অধিক পরিমাণে গ্রহণ করিয়াছিল যে স্থানীয় সমগ্র সভ্যতা বৌদ্ধভাবাপন্ন হইয়া গিয়াছিল। সংস্কৃত ইহাদের ধৰ্ম্মসাহিত্যের ও ধৰ্ম্মকুষ্ঠানের ভাষা হইয়া যাওয়ায় সমুদয় মঠ ও বিহারে ইহা শিখান হইত ও ইহার চর্চা হইত ।