পাতা:প্রবাসী (চতুর্দশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪র্থ সংখ্যা ] — অমন ছেলে মরাই ভালো ! নকুড় ব্যথিত হইয়া বলিল—রায় মশায়, আপনি অক্লেশে যে কথা বলতে পারলেন, আমি বাপ হয়ে তা কি কখনো মনে করতেও পারি ?...আপনার অভিলাষ যদি বিলেত যেত... কৃষ্ণগোবিন্দ হো হো করিয়া এমন ভাবে হাসিয়া 'উঠিলেন যেন এমন অসম্ভব কথা কে কখনো বলে নাই বা শুনে নাই। তিনি বলিলেন— অভিলাষ বিলেত যাবে ? তেমন বংশে তার জন্ম নয়। ধরে নাও সে যদি যায়ই, তবে সেদিন থেকে সে আর আমার কেউ নয় : ইহা শুনিয়া নকুড় আহত পিপীলিকার ন্যায় মরীয় হইয়া কৃষ্ণগোবিন্দকে দংশন করিবার জন্য বলিল— আচ্ছা দেখা যাবে, ছেলে না যাক, জামাই ত বিলেত গেছে, মেয়ে-জামাইকে কেমন ত্যাগ করতে পারেন ! কৃষ্ণগোবিন্দ ক্রুদ্ধ হইয়া উঠিয়া বলিলেন–মিথ্যেবাদী ! মেচ্ছ ! তুমি কি সবাইকে নিজের ছেলের মতন পেয়েছ ? হরেকৃষ্ণ গোস্বামীর ছেলের নামে এমন অপবাদ দিচ্ছ, তোমার জিভ খসে যাবে না ?... নকুড় দুৰ্ব্বলের বিজয়ের ক্রুর হাসি হাসিয়া বলিল-- দুঃখিত হলাম রায় মশায়, জিভ খসবে না, আমি মিথ্যে কথা বলিনি। গায়ের অপর লোকে মেচ্ছ বলতে পারে, আপনার মুখে আর ও কথাটা শোভা পাচ্ছে না। আপনার মেয়ে এখনো আপনার বাড়ীতে রয়েছে! আপনি হলেন গিয়ে সমাজপতি, আপনি এখন নিজেকেও একধরে করুন ; আমি একঘরে হয়েছি, আপনাকে দলে পেলে তবু দুঘরে হয়ে থাকব! কৃষ্ণগোবিন্দ রাগে লজ্জায় অপমানে থমথম করিতেছিলেন। নকুড় নিজের জয়ে উৎফুল্ল হইয়। হাসিতে হাসিতে বলিল—রায় মশায়, এখানে এসেই যখন শুনলাম যে মাওড়া কায়স্থের মেয়ের চুমু খেয়েছেন বলে আপনি আপনার গিরির প্রায়শ্চিত্তের ব্যবস্থা করেছেন, তখনই বুঝেছিলাম যে আমার একঘরে হওয়া রদ হবে পী । তবু আপনার অপেক্ষায় বসে ছিলাম আপনাকে এই মুখবরটা শুনিয়ে যাবার জন্তেই। শচীদুলাল বড় ভালো ছেলে, আমায় গিয়ে বিশেষ সহানুভূতি জানালে, বজাহত বনস্পতি రిన> আপনার বেশই একটু নিন্দে করলে, তারপর আমায় বল্লে যে, “খুড়োমশায়, এখন কাউকে বলবেন না, শুধু আপনাকে চুপিচুপি বলছি, আমিও যে বিলেত যাচ্ছি, আমার টিকিট পর্যন্ত কেন হয়ে গেছে।" আমি বল্লাম, “ঠা বেশ বাবা বেশ । যাও ধাও, তুমি গেলে আমার পঞ্চব তবু একজন চেনাশোনা সঙ্গী হবুে।” এতদিনে সে বোধ হয় বিলেত পৌছে গেছে । আমি মনে করলাম মুখবরটা আপনার কাছে চেপে রাখা আর ঠিক নয়, তাই আজ শুনিয়ে গেলাম...... কৃষ্ণগোবিন্দ হুঙ্কার ছাড়িয়া বলিয়া উঠিলেন—কে আছিস রে ? এই ভট্চাযটার কান ধরে এখান থেকে বাৰ্ব্ব করে দে ত... নকুড় বক্রবৃষ্টিতে ক্রুর হাসি ভরিয়া কৃষ্ণগোবিন্দকে fবদ্ধ করিয়া সেখান হইতে চলিয়া গেল । কৃষ্ণগোবিন্দও আর সেখানে তিষ্ঠিতে পারিলেন না। একেবারে হনহন করিয়া অন্দরের দিকে চলিয়া গেলেন । বাড়ীর মধ্যে আসিয়াই ডাকিলেন—তুলসী ! বাপের আদরের মেয়ে তুলসী, বাপের ডাক শুনিয়া হাসিমুখে তাড়াতাড়ি ঘর হইতে বাহির হইয়া আসিয়— কেন বাবা ?—বলিয়। থমকিয় দাড়াইল । তাহার মুখের হাসি মিলাইয়া গেল ; সে জন্মিয় অবধি বাপের এমন উগ্র ভয়ঙ্কর মূৰ্ত্তি কখনো দেখে নাই ; তিনি কাহারে উপর খুব ক্রুদ্ধ হইলে নিত্যকিশোরী তাড়াতাড়ি তুলসীকে তাহার কাছে អាម៉ាឌ দিতেন, তুলসীকে দেখিলে তিনি অতিবড় ক্রোধও তুলিয়া কণ্ঠাকে হাসিমুখে তুলসী তুসী মঞ্জর প্রভৃতি কত নামে ডাকিয়া আদর করিতেন। কৃষ্ণগোবিন্দ গম্ভীর স্বরে বলিলেন—তুলসী ! শচী বিলেত গেছে ? তুলসী পিতার ক্রোধের কারণ বুঝিতে পারিল ! পরম অপরাধীর মতে মাথা নত করিয়া সে দাড়াইয়া রহিল । —এ খবর তুমি যখন জেলেছিলে তথনই আমায় জানাওনি কেন ? e তুলসী অতি মৃদুস্বরে মাথা নত করিয়াই বলিল—উনি আমায় বারণ করেছিলেন ।* কৃষ্ণগোবিন্দ ক্ষণকাল চুপ করিয়া থাকিয়া বলিলেন