পাতা:প্রবাসী (চতুর্দশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪র্থ সংখ্যা ] চোখে মুখে ছড়িয়ে পড়ছে, তার সেসবদিকে দৃকপাত নেই। প্রকৃতির এই রুদ্রমূৰ্ত্তি দেখে তার প্রাণ তখন অপার আনন্দে উচ্ছ,লিত হয়ে উঠেছে। তার কোন বন্ধুবান্ধব তাকে সে অবস্থায় দেখতে পেলে টেনে বাড়ীর মধ্যে নিয়ে গিয়ে তার গা মাথা মুছিয়ে দিত। প্রকৃতিদেবীর, এই প্রিয় সন্তানটিকে সকলেই পাগল বলে স্নেহ যত্ন করত। সে যেন একটি শি গু, সকলের আদর যেন তাকে অভ্যর্থনা করবার জন্যেই উৎসুক হয়ে থাকে ! ( 9 ) কাৰ্ত্তিক মাস, এ মাসটিতে যমুনা তীরে বড় জাকজমক । মাসভোর যমুনার ঘাটে মেলা বসে। এ মাসে প্রত্যহ যমুনায় স্বন করা মহা পুণ্যের কাজ, তাই স্নানার্থী নরনারীর ভিড় হয় খুবই । স্নাতদের কপালে, বুকে, বাহুতে, সৰ্ব্বাঙ্গে নানা চিত্রবিচিত্র চন্দনের ছাপ এ কে দেবার জন্যে ঘাটিয়াল ঠাকুরর মহা আড়ম্বরে স্বানের ঘাটে সে কে বসেছেন। এ মাসটি তাদের বেশ লাভজনক । স্নানার্থীদের মধ্যে নর অপেক্ষা নারীর সংখ্যাই বেশী। সুন্দরীর মানে নেবে নানারঙ্গে কিছুক্ষণ জলে ডুবে থেকে সিক্ত বস্ত্রে ঘাটে উঠছে, তার পর গা মাথা মুছে শুষ্ক বস্ত্র পরে ঘাটিয়াল ঠাকুরদের কাছে সি দুর ও চন্দনে সুশোভিতা হয়ে তাদের দক্ষিণাদানে সপ্তষ্ট করে ঘাট থেকে ফিরে আসছে । সঙ্গে সঙ্গে হাসি গল্পেরও বিশ্রাম নেই। একদল যাচ্ছে, আর-একদল আসছে। জনতার বিরাম নেই । ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের চেচাচেচি, রমণীদের হাস্যকৌতুক, ফেরওয়ালাদের ইণকাইকি, আর অসংখ্য ভিক্ষার্থীদের অবিশ্রান্ত কলরবে মেলাস্থল সৰ্ব্বক্ষণ সরগরম হয়ে অাছে। একদিন যমুনাতীরে মেলা দেখবার জন্যে আমীর ও জামীর দুই বন্ধুতে গিয়েছিল। তারা উভয়ে নানাস্থানে ঘুরে ঘুরে অনেক দৃপ্ত দেখে বেড়াচ্ছিল আর আপনার হাস্য-পরিহাস করছিল। ক্রমশ যখন বেল! বেশী হল তখন তার স্বানের ঘাট থেকে অনেক দুরে যেয়ে তীর থেকে সশব্দে জলে ঝাপিয়ে পড়ল আর দুজনে মিলে সাতার দেওয়ানার কবর 8&ዓ দিয়ে জলের ভিতর লাফালাফি করে জল তৃেলিপাড় করে তুললে। কখনও যদি তাদের গায়ের জল পাশ্বস্থিত কোন স্ত্রীলোকের গায়ে লাগছিল তখন সে বিরক্ত হয়ে তাদের গালাগালি দিলে তাদের উচ্চহস্ত আরও উচ্চতর হয়ে উঠছিল। প্রায় দুঘণ্টাকাল এই রকুমে কাটিয়ে অবশেষে তার তীরে উঠল। আমীর গলা ছেড়ে গান ধরে যুগ্ধ মেলার জনতা ঠেলে বাড়ী ফিকৃছিল, হঠাৎ আমীরের উচ্চকণ্ঠের মধুরসঙ্গীত থেমে গেল। সে চলতে চলতে হঠাৎ থমকে দাড়িয়ে গেল আর নিম্পন্দভাবে ঘাটের দিকে চেয়ে রইল । জামীর তার এই ভাবান্তরের কারণ না বুঝতে পেয়ে তার দৃষ্টি অনুসরণ করে দেখলে যেখানে ঘাটিয়াল ঠাকুরর রমণীদের ললাটে নানাছাদে চন্দন-রেখা অঙ্কিত করছেন সেখানে অপূৰ্ব্ব দৃপ্ত ! একটি চম্পকবর্ণ গৌরী ষোড়শী স্নান শেষ করে দাড়িয়ে আছে আর তার বযীয়সী সঙ্গিনী দুজন তখন পাণ্ডাঠাকুরদের সাহায্যে অলকা তিলক! কাটছে । কিশোরীর নিরুপম সৌন্দর্য্য আমীরের হৃদয়ে অপূৰ্ব্ব ভাবের সঞ্চার করে তুলেছিল। তার সেই এলোচুলের রাশ পিঠের ওপর ছড়িয়ে পড়েছে, একখানি আশমানী রংএর শাড়ী সেই সুগেীর কোমল তমুখানি বেষ্টন করে তার স্বাভাবিক শোভা যেন আরও বাড়িয়ে তুলেছে । সে অন্যমনস্কভাবে যমুনার কালে। জলের দিকে চেয়ে দাড়িয়ে ছিল। অামার সেই দিকে চেয়ে চেয়ে আর দৃষ্টি ফেরাতে পারলে না। তার মনে তখন কি ভাবের উদয় হচ্ছিল, কি সে দেখছিল তার কিছুই জ্ঞানচৈতন্য ছিল না। শুধু সে মন্ত্রমুগ্ধের মত তার দিকে চেয়ে ছিল, আর তখন তার মনের ভিতর থেকে কে যেন ডেকে ডেকে বলুছিল “তুমি যাকে খুজে বেড়াতে সে এই ! সে এই ! সে এই !" যুগযুগান্তর পুৰ্ব্ব হতে তার প্রাণ যাকে চাচ্ছিল আজ এই কিশোরীকে দেথবামাত্রই যেন তার মনে হল এই সেই মানসী সুন্দরী ! আঙ্গ তার অজ্ঞাতে তার যৌৰন জেগে উঠেছে! হৃদয়ের মধ্যে যে প্রেম এতদিন স্বপ্নভাবে ছিল আজ কোন সোনার কাঠির স্পর্শে তা সহসা জেগে উঠেছে ! হৃদয়ের এই অপূৰ্ব্ব নবভাবের পুলকে স্পন্দনে উত্তেজনায় আমীর তখন বিভোর । জামীর তার বন্ধুর এই নিম্পদভাব