পাতা:প্রবাসী (চতুর্দশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○げ করাইতেছেন। আজ প্যাকিংএর দিন, তাই ভোর হইতে প্রায় ৫০০ বাক্স চা প্যাক করা হইয়াছে, এখনও যে কত বাকী আছে তাহার শেষ নাই। কাজের তাড়নায় নীরদ বাবু খাওয়া দাওয়ার কথা ভুলিয়া গিয়াছেন। পাহাড়িয়া কুলীদের সঙ্গে সমানে কাজ করিতেছেন। এমন সময় হঠাৎ বড় সাহেবের বেহা আসিয়া বলিল “সেলাম বাবু, বড় সাব বোঙ্গাত হয়।” নীরদবাবুর প্রাণট। ছাৎ করিয়া উঠিল। না জানি কী,অনির্দিষ্ট বিপদ তাহার জন্য প্রস্তুত হইয়া রহিয়াছে। তা না হইলে এই অসময়ে সাহেবের কাছে ডাক পড়িবে কেন ? পাছে দেরী হয় এই ভয়ে সেই অবস্থাতেই বেহারার সঙ্গে বাহির হইয়া পড়িলেন । সাহেবের বাঙ্গালায় যাইতে যাইতে সাহসে ভর করিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন—“বেহার ! সাহেব কি করছেন ?" “আভি ত সাব বাহারমে খাড়া দেথা থা।” ব্যাপার কি কিছুই বুঝিতে ন পারিয়া তাবী অমঙ্গলের আশঙ্কায় মান মুখে ধীরে ধীরে বেহারার পশ্চাৎ পশ্চাৎ চলিতে লাগিলেন। বেহার বলিল “সাব ত আজ বহুৎ খাপ হ্যায় ।” “কেন ? তুমি কিছু শুনেছ কি ?” “হাম ত নেহি শুনা হয়, লেকিন বোলতা থা কি আফিসমে কাল বহুৎ হিসাবক গোলমাল হুয়াথ উসবাস্তে ।” নীরদবাবুর মাথায় বজাঘাত হইল। “এ্যা হিসাবের গোলমাল ?” “হঁ। বাবু ; ঐসৈ ত শুনা হয়—” ৯ সাহেবের বাঙ্গালায় আসিয়া নীরদ বাবু দেখেন সাহেব উগ্ৰমূৰ্ত্তিতে বারাণ্ডায় দাড়াইয়া রহিয়াছেন। - যথাসাধ্য দীর্ঘ সেলাম করিয়া নির্জীব নীরিহ বাঙ্গালী নীরদবাবু কুকুরের মত একদিকে দাড়াইলেন। সাহেব ডাকিলেন “নীরদবাবু!” *. যথাসাধ্য সন্মানসূচক স্বরে নীরদবাবু উত্তর, করিলেন “হুজুর ” সমস্ত ক্ষণ অবিশ্রাম খাটিয়া এ পর্য্যন্ত মুখে জল । পৰ্য্যন্ত দেন নাই, তাহার উপর এই অজানিত বিপদের আশঙ্কায় নীরদবাবুর কণ্ঠরোধ হইয়া আসিতেছিল। প্রবাণী—কান্তিক, ১৩২১ [ ১৪শ ভাগ, ২য় খণ্ড সাহেব ক্রোধগম্ভীর স্বরে পুনরায় বলিলেন “নীরদবাবু! তোমার একি কাজ ?” নীরদবাবু কিছুই বুঝিতে না পারিয়া যুপকাষ্ঠের ছাগশিশুর মত চুপ করিয়া দাড়াইয়া রহিলেন। উত্তর না পাইয়া সাহেব উত্তরোত্তর স্বর বৃদ্ধি করিতে লাগিলেন—“ক্যাশ হইতে কাল রাত্রে ৫৫৩ টাকা চুরি গিয়াছে। কে লইল শীঘ্র বল।” “পাচশ তিল্পায় টাকা চুরি গিয়াছে। সৰ্ব্বনাশ!" নীরদ বাবুর দম আটকাইবার জোগাড় । বাবুর এ অবস্থা দেখিয়া বুঝি সাহেবের দয়। হইল। অপেক্ষাকৃত নিম্নস্বরে বলিলেন—“আচ্ছ। তোমাকে"আমি জেলে দিব না, তুমি বল কে নিয়াছে।” নীরদ বাবু ওস্কমুখে শূন্ত দৃষ্টিতে সাহেবের দিকে চাহিয়া জীবনের সমস্ত বল সংগ্ৰহ করিয়া কোনো মতে বলিতে পারিল “সাহেব ! আমি জানি না।” ভালমানুষের কাল আব নাই দেখিয়া সজোরে মাটিতে বুট ঠকিয়া সাহেব বলিলেন-“সে আমিও জানি না । ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যদি ৫৫৩ টাকা ক্যাশে না মিলাইতে পার তবে শুধু তোমার চাকরী যাইবে না—তোমাকে জেলে দিব । যাও—এখন হইতে ২৪-ঘণ্ট। সময় দিলাম।” দাড়াইয়া থাকিতে দেখিয়। সাহেব পুনরায় গর্জন করিয়া বলিলেন “যাও ”, অৰ্দ্ধস্ফুট স্বরে নীরদ বাবু বলিতে যাইতেছিলেন "সাহেব—আমি—” ক্রোধান্ধ সাহেব তাহার পদতলস্থিত ভূমি বাঙ্গালীর মাথা মনে করিয়া পুনরায় সজোরে পদাঘাত করিয়া বলিলেন “আমি কিছু শুনিতে চাই না-যাও । বেহার !” • গত দিবস যখন হিসাব মিলান হয় তখন সাহেবের নিজের কাছে যে একখানা ৫৫৩-এ টাকার চেক ছিল সেখান তহবিলে রাখিতে ভুলিয়া গিয়াছিলেন। রাত্রিতে মদের আতিশয্যে যখন সাহেব জ্ঞানশূন্ত তখন মেমসাহেব সেখান সাহেবের পকেট হইতে দিব্য সরাইয়া রাখিয়াছিলেন। পরদিন প্রাতে সাহেবের যখন জ্ঞান হইল তখন দেখিলেন পকেটে চেক নাই। তহবিলে রাখিয়াছেন মনে করিয়া আফিসে গেলেন। সেখানে দেখেন