পাতা:প্রবাসী (চতুর্দশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫ম সংখ্যা ] ইংরেজী গল্পের গোটা ছবিটা চোখের সামনে আনা একপ্রকার অসম্ভব হইয়া পড়ে । কারণ যে-বয়সে ইংরেজী শিক্ষা ছেলেদের ধরান হয়, সে-বয়সে পদ, পদার্থ বা বাক্য সম্বন্ধে তাহাদের কোনও ছায়ালোকের অস্পষ্ট ধারণাও হয় না। প্রথম মাতৃভাষার সহজ বাক্য গুলির মধ্যে যদি পদগুলিকে পরস্পর সাজাইবার ক্রমের দিকে ছেলেদের মনোযোগ অাকর্ষণ করিয়া সেগুলির সহিত ছেলেদের একটা পরিচয় ঘনাইয়া না তোলা যায়, তবে বিদেশীয় ভাষার মধ্য হইতে সেগুলি চিনিয়া লওয়া বাস্তবিকই অত্যন্ত কঠিন ও নীরস হয়। যে ইংরেজী শব্দের বাংলাটি সে মুখস্থ করিতেছে, সেই বাংলা শব্দটির ছবিটি তার মনের সহিত পরিচিত হইবার পূৰ্ব্বে ইংরেজী শব্দটিও তাহার পক্ষে যেরূপ বাঙ্গাল শব্দটিও প্রায় তদ্রুপ হইয়া দাড়ায়, কাজেচ একরকম কলের মতন ইংরেজী শব্দ ও তাহার অর্থটি মুখস্থ করিয়া যায়। শব্দার্থের চিত্রটিই যদি চোখের সামনে না আসিল তবে বাক্যের চিত্র আসিবে কেমন করিয়া, আর বাক্যের চিত্রটি না আসিলে সম্বন্ধবাক্যাবলি বা গল্পটির চিত্র কোথা হইতে আসিবে । ইহা ছাড়া দ্বিতীয়তঃ আরও একটি অসুবিধার দিকৃ আছে, সেটি হচ্চে এই, যে, বিলাতী চিত্রগুলি আমাদের ছেলেদের পক্ষে বিশেষভাবে অপরিচিত ও অপরিজ্ঞাত, কাজেই শব্দার্থের যোজনা করিতে পারলেও গল্পের বর্ণনাগুলির তাৎপৰ্য্য আমাদের মনকে আকৃষ্ট করিতে পারে না, এবং আমাদের কল্পনাকেও কখনও উদ্বুদ্ধ করিতে পারে না। বরফের উপরে স্কেটিং করার একটা গল্প একটি ইংরেজের ছেলের কাছে অত্যন্ত পরিচিত ও সহজ, কিন্তু আমাদের ছেলেদের কাছে কেন, পরিণতবয়স্কদের পক্ষেও তাহার একটা সুপরিস্ফুট ছবি মনের সামনে আঁকিয় তোলা অত্যন্ত কঠিন ব্যাপার। কোনও একজন পিতাকে জিজ্ঞাসা কর, আপনার ছেলেকে এত কষ্ট করিয়া লেখাপড়া শিখাইতেছেন কেন ? তিনি উত্তর করিবেন, বড় চাকরী করিবে বলিয়া । কোনও শিক্ষককে জিজ্ঞাসা কর, তিনি কি নিয়মে ছাত্রদের পড়ান ? তিনি বলিবেন, যাহাতে বেশীসংখ্যক ছেলে পাশ হয় সেই অনুসারে । কোনও একজন শিক্ষার অাদর্শ (సెన ছুত্রকে জিজ্ঞাসা কর, সে কেন লেখাপড়া শিখিতেছে ? সে উত্তর কfরবে, পাশ কবিবার জঙ্গ্য"। " পাশ হইলে কি হঠবে ? চাকরী হইবে । যে-সমাজে চাকরী করিবার জন্যই সমস্ত শিক্ষাপ্রবাহ ছুটিয়াছে, সেখানে শিক্ষাটাও যে সেই রকমেরই হইবে তাহাতে আর অশ্চির্য্যের বিষয় কি ? ভূত্যজীবনের মহৎ আদর্শে যাহাকে উত্তরকালে জীবন গঠন করিয়া তুলিতে হইবে তাহাকে বাল্যকাল হইতেই মানুষ হইবার স্পৃষ্ঠা একান্তভাবে করিয়া ভূত্যোচিত আত্মবলিদান কায়মনোবাক্যে অভ্যাস করিয়া লইতেই হইবে । তাই জীবনের প্রথম হইতেই নির্দোষ স্বাভাবিক প্রবৃত্তিগুলিকে জোর করিয়া এমন করিয়া খৰ্ব্ব করিয়া দেওয়া হয় যে ক্রমশঃই বালকের সে প্রবৃত্তিগুলি শুকাইয়া আসিতে থাকে। কারণ কেবল যে জোর করিয়া কটমট শব্দের অর্থ মুখস্থ করান বা জোর করিয়া সহজ ও স্বাভাবিক বিষয়গুলি হইতে মনকে টানিয়। লষ্টয়া গিয়া কতকগুলি অপরিচিত ও অস্বাভাবিক বৈদেশিক রীতিনীতি দৃষ্ঠ প্রভৃতির কল্পনা করিবার নিস্ফল চেষ্টায় মনকে ক্লান্ত ও পীড়িত করিয়া ফেলিতে হয়, তাহ নয় ; সৰ্ব্বপ্রকারের আমোদ, বাজে বই পড়িয় রস উপভোগ করা, নানা বিষয়ে কৌতুহল নিবৃত্তির শিশুসুলভ চেষ্টা, এ-সমস্তই যাহাতে ষথসিস্তব বর্জিত হয় সে বিষয়ে শ্রেয়স্কামী অভিভাবকবর্গের তীক্ষুদুষ্টির কখনই অভাব হয় না। কারণ ছেলের স্বাভাবিক বৃত্তিগুলিকে তার আপনার জীবনের চারিদিকে সুন্দর করিয়া ফোটাইয়া তোলা ত আর শিক্ষার উদ্দেশ্য নয়, শিক্ষার উদেঙ্গ কিসে তাহার সমস্ত জীবনের গতিটা চারিদিক হইতে গুটাইয়। অনিয়া একমাত্র পাশকেন্দ্রের দিকে তাহাকে প্রেরিত বা ধাবিত করা যায় । আমোদ আহলাদ কিছুর দিকে মন যাইতে চাহিবে না, কোনও প্রকারের রস অস্বাদের জন্য জিহব। লালায়িত হইবে না, কোনওরূপ সঙ্গীতবাদ্যের দিকে শ্ৰেfএবৃত্তি উন্মুখ হইবে না, কোনও সুন্দরদৃষ্ঠ দেখিবার জন্য চক্ষু ও মন নাচিয়া উঠিবে না। এইরূপে সব সময় সমস্ত ইঞ্জিয় হইতে সমস্ত জীবনীশক্তিকে প্রত্যাহার করিয়া পাশান্তকুল চিস্থায় কেবলমাত্র পাঠ্যপুস্তকের দিকে চক্ষুতারক। স্থির করিয়া রাখিয়া বর্জন