পাতা:প্রবাসী (চতুর্দশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫ম সংখ্যা ] জগৎ, জীবজগৎ, অপর দিকে আবার তেমনই অতি বিশাল মনোজগৎ পড়িয়া রহিয়াছে। মানুষ মানুষের সঙ্গে মিশিয়। মানুষের মতন•হইয়া চিরন্তন মনুষ্যসমাজের সমস্ত সংস্কারগুলি প্রচ্ছন্ন ভাবে আপনার মধ্যে লুকাইয়। রাখিয়াই জন্মগ্রহণ করিয়াছে । তাহার চিত্তের প্রতি-তরঙ্গের উপুর জগতের সমস্ত চিন্তাতরঙ্গ আসিয়া মুহুর্মুহু আঘাত করিতেছে, এবং সেই তরঙ্গাঘাতেই অদৃশুপরিণামে অনন্ত সাগরের মধ্যে তাহার জীবনের স্রোত বহিয়া চলিয়াছে । মাতুষ যেমন মাকুষকে চারিদিকে ঘেরিয়া রাখিয়াছে, এমন আর কিছুই নহে। কাজেই একদিকে যেমন গ্রহনক্ষত্রখচিত অনন্ত আকাশের ছায়াতলে কাননকুন্তলা শস্যশ্যামল ফলপুষ্পপেশল পৃথিবী আপনাকে অনবরত প্রাণিসংঘে মুখরিত করিয়া অনন্তকাল একই রঙ্গমঞ্চে ক্রীড়া করিতেছে, অপর দিকে ঠিক তেমনই বিবিধ চিন্তা ও ভাবছটার বিচিত্র মণিরঞ্জিত অগণ্য পণ্যবীথিকায় ক্ষিপ্ৰ হাস্যের সচ্ছল সম্পদে দীপ্ত ভাষার প্রভাসিত গৌরবে চিন্তাকুটিল ললাটের কান্তকোমল মুখচ্ছবিতে দীপ্ত ও পুলকিত হইয়া চিত্তভূমির সুদীর্ঘ তটকে আরও দীর্ঘতর করিয়। টানিয়া লইয়া চলিতেছে । এই দুই তটের মধ্য দিয়াই মানুষের জীবনলহরী পুণ্যপুত আনন্দের আলোকচ্ছটায় নাচিয়া চলিতেছে । এই দুইয়ের কাহাকেও তাহার উল্লঙ্ঘন করিবার ক্ষমতা নাই । কাজেই মামুষের বিশ্ব বলিলে একদিকে যেমন বহিঃপ্রকৃতি বুঝি, অপরদিকে তেমনি অগণ্য মঙ্গুষ্যের চিত্তসাগরের বিরামহীন অনন্ত লীলাবৈচিত্র্য বুঝি । কাজেই বিশ্বের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হইতে হইলে একদিকে যেমন মহিমময়ী প্রকৃতির বিচিত্র বর্ণে ও গন্ধে আপনাকে অসুরঞ্জিত ও অtঘাত করিয়া তুলিতে হইবে, অপর দিকে তেমনি সমস্ত মনুষ্যজগতের সঙ্গে মিশিবার মতন করিয়া আপনাকে কোমল করিয়া গঠন করিয়া তুলিতে হইবে। বিশ্বের এই উভয়দিকের সঙ্গে একটা সরস সম্বন্ধ সংস্থাপন করাই মতুযjজীবনের উদ্দেশ্য । এই উভয় দিকের সন্মিলনে যে একটি অতি বৃহৎ ব্রহ্মস্বরূপ ভূমী পদার্থ পরিনিম্পন্ন অবস্থায় বৃক্ষ ইব স্তব্ধো দিবি তিষ্ঠত্যেকঃ হইয়া রহিয়াছে, তাহার সহিত আপনার যথার্থ পরিচয় শিক্ষার আদশ সংসাধিত হইল । やうo ○ লাভ করিয়া সহজ সুলভ মাধুর্য্যে তাহারই বিধানের মধ্যে একান্তভাবে আপনাকে সমাহিত করিয়া তুলিয় তাহার সহিত আপন অন্তর্নাড়ীকে যুক্ত করিয়া হাদয়কে রসপ্রবণ রসপ্রচুর করিয়া তুলিতে পাক্সিল্লেই মানুষের আনন্দের মধ্যে তাহার চরম শিক্ষা, চরম সফলতা, চরম" যুক্তি পিতামাতার সানন্দ হইতেই মানুষের স্থ ষ্ট, তাহার নিজের অনন্দের মধ্যেই তাহার জীবন এবং বিশ্বের আনন্দের মধ্যেই তাহার তুমানন্দবিশ্রাম — “আনন্দাদ্ধেব থধিমানি ভূতানি জায়ন্থে, তেন জাতানি জীবন্তি, তৎপ্রয়াস্ত্যভিসংবিশন্তি ।” কিন্তু এই আনন্দ বা রসের চরম স্থানটি মানুষের জীবনের বাস্তবিক আদর্শ হইলেও তাহা কোনও অবস্থতেষ্ট জ্ঞানের আবরণকে উল্লঙ্ঘন করিয়৷ যাইতে পারে না। যেমন একটি ছোট ফল যখন পরিপাকের সফলতা লাভের জঙ্গ ক্রমশঃ বাড়িতে থাকে, তখন তাহার উপরের ছাল বা খোসাটিও তাহার সঙ্গে সঙ্গেই বাড়িতে থাকে, কিন্তু আগে বহিরের ছাল বাড়িল, না আগে ভিতরের ক্রল বাড়িল তাহার নির্ণয় করা যায় না, উভয়েই যেন অপেন আপন সীমা ও সামঞ্জস্যের অথণ্ড গণ্ডীর মধ্যে থাকিয়া বাড়িয়া চলিতে থাকে ; একট। স্বাভাবিক ও লিদোষ আদর্শ-জীবনের শিক্ষার মধ্যেও ঠিক তেমনি করিয়াই জ্ঞানুের সঙ্গে-সঙ্গেই আওরস্থ ধাতু পরিস্ফুট হইতে থাকে। যে শিক্ষায় জ্ঞানই বাড়িয়া যায় কিন্তু রসধাতু তাহার সঙ্গে অনুবৰ্ত্তন করিতে পারে না, সে শিক্ষ। যেমন শুষ্ক ও সারবিহীন, যাহাতে রসই বাড়িয়া চলে কিন্তু জ্ঞান তাহার সঙ্গে বাড়ে না, সে শিক্ষণও তেমনি শিথিল । উভয়ের সঙ্গে এমন একটি সম্বন্ধ অবিচ্ছিন্নভাবে রাখিতে হইবে যাহাতে উভয়ে একযোগে একইভাবে বাড়িয়৷ চলিতে পারে । কোনও একটির অকালপরিপাক, অথবা অসমঞ্জ পরিপাকে সমস্ত ফলটিই অযোগ্য কটু ও তিক্ত হইয় পড়ে । বিশ্বের উভয়ারতনকতা হিসাবে, শিক্ষাকেও যদি বহির্জাগতিক ও মনোজাগতিক হিসাবে দুইভাগ করা যায়, তাহা হইলে বহির্জাগতিক শিক্ষার প্রথমেই যেমন বালককে বাহিরের জগতের সম্বন্ধে কিছু কিছু করিয়া