পাতা:প্রবাসী (চতুর্দশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৬৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৬২৮

সুন্দরী প্রণয়িনীরই প্রাপ্য—তাহ সম্রাট শাহানশা শাহজাহানের নহে, তাহা শিল্পী ওস্তাদ ইসা খায় নহে! সে পুজা তাহারই যিনি প্রাণ ভরিয়া ভালবাসিয়াছিলেন, যিনি প্রাণভর ভালবাসা পাইয়াছিলেন " . ষ্টভেন্স তাহার In India নামক পুস্তকে লিখিয়াছেন — “শাজাহান ! শাজাহান ! তোমার নাম তীব্র সুরার স্তায় অন্তরকে অভিভূত করিয়া ফেলে ! শাজাহান, তোমার বেগমের চরণকমল শ্বেতপাথরের মেঝেতে আপনাদের রূপ দেখিত, তাহাদের অঙ্গলাবণ্য শশমঙ্গলের টলটলে পারার উপর উপচিয়া পড়িত ! শাজাহান, তোমার আঙ্গুরিনা বাগে ময়ূর পেখম ধরিত ;–শষ্মন বুরুজে সুনহলী আঙিনায় তোমার প্রেমুসার প্রণয়লীলা চলিত । শাজাহান, আঙ্গুরিনা বাগ, শুনহল আঙিনা, শশ্বন বুরুঙ্গ শীশমহল—শুধু নামগুলিতেই মাদকভরা যাদুর কুহক জড়ানো আছে । লাল কালো পাপড়ির মাঝে বেলীর কুঁড়িটির মতো তাজমহল যখন দেখি তপন সৌন্দর্যের মেশায় ভাবের ভোরে মাথার মধ্যে ঝিমঝিম করিতে থাকে —মনে হয় যেন শাজাহান তাহার যুদ্ধবিগ্ৰহ, ঐশ্বর্য্য সম্পদ, শ্বেতপাথরের বাড়া আর মসজিদ, আনন্দ উল্লাস, দুঃথ বেদনা, প্রণয় পরিতাপ সমস্ত, লইয়া মনের মধ্যে মূৰ্ত্তি ধরিয়া উঠিয়াছেন।” উইলোবি বলেন—“চিত্রের বিষয়ট। তুচ্ছ, তাহার মধ্যে ভাবের প্রেরণ। যতটুকু থাকে সেইটুকুই সব। অষ্টরিঃ মন যত ঐশ্বর্যাশালী ও উন্নত তাহার সৃষ্টির মধ্যে তত বেশী সম্পদ দেখিতে পাওয়া যায়। রং বা পলস্ত্রা, সে ত শিল্পীর ভাবকে আকার দিবার ভাষা--- রঙে বা পলস্ত্রায় শিল্পীর রসসাধনা আকার পাইয়া উঠে। “তাজমহলের তোরণ পার হইলেই মনে হয় একটি স্বন্দরী তরুণ যেন ঘোমটা খুলিয়া আমার সামনে আসিয়া দাড়াইল। এই রমণীয় রমণীর ভাবটি শিল্পী ইমারতের মধ্যে আরোপ করিয়া রাখিয়াছেন । শোকপ্ত বাদশাহের প্রণয়িনীর সকল শ্রী ও মহিম। তাহার এই স্মৃতিমন্দিরে অমর হইয়া আছে । অমল শুভ্ৰ মৰ্ম্মর পাথরের জলবিন্দুর - ন্যায় টলটলে গম্বুজটি নীল আকাশ ও নীল যমুনার মাঝখানে শুক্তির মাঝে মুক্তার ন্যায় দিনের রাতের বিচিত্র প্রবাসী-চৈত্র, ১৩২১ [ ১৪শ ভাগ, ২য় খণ্ড s

তোরণের ফঁাকে তাজমহল । আলোকের বর্ণবৈচিত্রে ক্ষণে ক্ষণে প্রাণ পাইয়া সঙ্গীব হইয়াই থাকিতেছে। অরুণ-আলে। উষাকালে যখন তাহার উপর আসিয়া পড়ে তখন যেন মনে হয় নবোঢ়া তরুণী ফুলশয্যার প্রভাতে জাগিয়া উঠিয়া লজ্জায় আরক্ত হইয়। উঠিয়াছে! দুপ্রহরে সে সম্রাজ্ঞীর ন্যায় শান্ত গম্ভীর মহিমময়ী ! তারপর যখন সন্ধ্য। আসে তখন যেন বহুদিনমৃত সুন্দরীর আত্মার মতো তাজমহল সবুজ আলোর মধ্যখানে আকাশ বাতাস জুড়িয়া বসে, তাহার বিরহ যেন অন্তর বাfহর বিবশ করিয়া তোলে ! আবার যখন - চাদ উঠে, যখন জ্যোৎস্ব-ধারায় তাহার মুখে হাসি ফুটিয়া উঠে তখন আর দুঃখ থাকে না–এ যেন প্রেমময়ীর পরিপূর্ণ আনন্দের অপরূপ বিকাশ ! & “হিন্দু শিল্পী ভাবকে রূপ দিতে চিরকালই পটু। তাজমহল সেই প্রণয়ের রূপ, রমণীর ভাবরূপ !”