পাতা:প্রবাসী (চতুর্দশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৭৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

७२ সীমারেখাগুলিও দিয়াকলম করা। একটা মাহবের মাথায় একটা পাৰাঁর চফুটুকু মাত্র অবশিষ্ট আছে—তার কারণ বা উদ্দেশু্যের বিষয় জাম্বার কারে প্রয়োজন হ'লেও জানবার উপায় নেই ! এ রহস্য চির কালই অজ্ঞাত থাকৃবে ! ৫ম চিত্রে একটি মহিলা আসন-পিঁড়ি হ’য়ে বসে আছেন ; কতকগুলি গায়ক ও বাদক নৃত্যগীতে মেতে আছে। এই ছবিটির রেখা এবং অঙ্কনচাতুর্য্য অজণ্টার নিকৃষ্ট চিত্রের লীলায়িত তুলিকার সঙ্গে প্রায় মেলে। অজণ্টার মৃত্যগীতোৎসবের একটা ছবির সঙ্গে খুবই সাদৃশু আছে। তবে সেটির মত উৎকৃষ্ট ছবি এটি একেবারেই নয় । ফল কথা, রামগড়ের সমস্ত ছবির মধ্যে এই ছবিটিতেই একমাত্র শিল্পীর তুলির টানের পরিচয় পাওয়৷ যায়। ৬ষ্ঠ, ৭ম খণ্ডের ছিত্রগুলি ক্রমেই অদ্ভূত ও অস্পষ্ট আকার ধারণ করেচে। চৈত্য মন্দিরের মত কতকগুলি প্রাচীন গৃহের চিত্রও কয়েকটি স্থানে আছে। আদিম যুগের রথের চিত্রের নমুনাও কয়েকটি স্থানে পাওয়া যায়। প্রাচীন ভারতের এবং প্রাচীন গ্রীসীয় রথের একটা অত্যাশ্চৰ্য্য মিল দেখতে পাওয়া যায়। এথানকার চিত্রেও অবগু অন্যথা হয়নি। তবে দুভাগ্যবশত কোন দেশের রথের অনুকরণ করেচে সে বিষয় স্থির মীমাংসা করার শক্তি আমার নেই; অতএব সে ভার প্রত্নতত্ত্ববিদের হাতেই ন্যস্ত রইল। অজণ্টার ভিত্তি গাত্রের এবং ছাদের নীচের চিত্রগুলি যেমন গোবর মাটি তুষ প্রভৃতি দিয়ে পাথরের দেওয়ালের উপর একটা উচু ও সমতল জমা তৈরী ক’রে তার উপর আঁকা এখানকার চিত্রগুলি সে রকম কোন একটা বিশেষ ভাবে পট-ভূমি তৈরী করে বা সযত্নে আঁকা হয়নি। মাত্র সাদা, কালো এবং লাল এই তিনটি বর্ণ ছাড়া কোন বর্ণ ই চিত্রগুলিতে নেই। কয়েকস্থলে পীত বর্ণ দেখা গেলেও সেগুলি লাল গৈরিকেরই প্রাচীন অবস্থা ভিন্ন আর কিছুই নয়। কালের আবর্তে লালের রক্ত শোষণ ক’রে পীত ক্লিষ্ট ক’রে তুলেচে ! আমি পথের কথায় পূৰ্ব্বে যে সাদা মাটির বিষয় উল্লেখ করেচি চিত্রের সাদা রং সম্ভবত সেই রকম মাটি থেকেই উৎপন্ন। কেন না, এই স্থানে পাহাড়ের উপর রামগড় মন্দিরের নিকটেই তীর্থযাত্রীদের তিলক মাটির জন্তে ব্যবহার করবার উৎকৃষ্ট প্রবালী- কাৰ্ত্তিক, ১৩২১ [ ১৪শ ভাগ, ২য় খণ্ড সাদামাটি একটি গুহাভ্যন্তরে প্রচুর পাওয়া যায়। ঘন গৈরিক রঙের পাথর পর্বত প্রদেশে বিরল নয়। মসীকৃষ্ণ বর্ণ প্রস্তুত করা রামগড়ের অরণ্যবাসীদের পক্ষে খুবই সহজ । কেন না, হরিতকীভষ্ম থেকে প্রাচীন কালে খুব উৎকৃষ্ট কালী তৈরী হ'ত। রামগড়ের বনকে হরিতকীকানন বল্পেও অত্যুক্তি হয় না। স্পষ্ট বোঝা যায় রং দিতে বা প্রস্তুত করতে কোনোটাতেই অজন্টার শিল্পীর মত এখানকার শিল্পী দক্ষ ত নয়ই, বরং নিতান্ত অপটু পটুয়৷ বলেই বিশ্বাস জন্মে। খালি সাদা রং পাহাড়ের অসমতল তরঙ্গায়িত পাথরের গায়ের উপর লেপন ক'রে ছবি আঁকার জমী তৈরী আর তারই উপর অবলীলাক্রমে আঁকাও হ’য়েচে । মোটের উপর, রামগড়ের চিত্রে একটা নিৰ্ব্বিচার উৎসাহ এবং সাহসের পরিচয় পেয়ে আমরা ভারি একটা আনন্দ অনুভব করেছিলুম। লছ মন বেঙ্গরা, যোগীমারা, সীতাবেঙ্গর প্রভূতি ছাড়া আরো অনেকগুলি স্বাভাবিক গুহকে বাসোপযোগী করে বাটালী দিয়ে কেটে তৈরী করা হয়েচে, এবং কতকগুলি স্বাভাবিক অবস্থায় আছে। এক একটি গুহায় সহসা প্রবেশ করা দুরূহ। কতকগুলিতে প্রবেশ করার আশা একেবারেই ত্যাগ করতে হয়েছিল। একটা স্বাভাবিক গুহ আছে তার বাইরেট একেবারে একট। ঠিক চোখের মত হুবহু দেখতে। বৌদ্ধ গুহার সঙ্গে রামগড়ের গুহাগুলির কোন সাদৃশু নেই বা বৌদ্ধ আমলের কোন চিহ্নও কিছুই নেই। আমরা প্রায় দু মাস শিবিরনিবাসে সেথানে অবস্থান করে, পেণ্ড,ারোড ষ্টেশনে ফেরবার পথে অপর একস্থানে একটি প্রাচীন কীৰ্ত্তির ধ্বংসাবশেষ দেখতে গিয়েছিলুম। এটি একটি রাজপুতদের মন্দির। ভিতরে কোন প্রতিমাই নেই। রামগড়ের সতীস্তম্ভের চেয়ে ভাল অবস্থার কতকগুলি স্তম্ভ মাটিতে এখানে সেখানে পোতা আছে । এ গুলি যে সতীস্তস্ত তা তার কারুকার্য্য দেখলেই জানা যায়। এ স্তস্তের উৰ্দ্ধদেশে একটী অলঙ্কার শোভিত গ্ৰীহস্ত এষং অধোদেশে অশ্বারোহিমূৰ্ত্তি সম্ভবত রাজপুতের প্রতিমূৰ্ত্তি। এই স্থানটি পৰ্ব্বতের অত্যুচ্চ উপত্যকায় অবস্থিত। পথের অন্যান্যস্থানের দৃপ্ত অপেক্ষা