পাতা:প্রবাসী (চতুর্দশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Б8 যে ব্যক্তি রবীন্দ্রনাথের অন্যান্ত কাব্যগ্রন্থ পাঠ করিয়াছে, রবীন্দ্রনাথকে খৃষ্টান ভক্তকবিদের সঙ্গে তুলনা কর। তাহার পক্ষে অসম্ভব পৃষ্টান ধৰ্ম্ম ভক্তিধৰ্ম্ম হইলেও প্রাচীন হিব্রু ধৰ্ম্মের বহু সংস্কারকে সম্পূর্ণরূপে ছাড়াইয়। উঠিতে পারে মাই। এই জগৎ যে জগদীশ্বরের দ্বার। আবাস্য নহে, তিনি যে সূৰ্ব্বভূতান্তরাত্মাৰূপে ইহার অন্তরতর স্থানে প্রতিষ্ঠিত নাই--হিব্রুধর্মের ইহা এক মূল কথা । জগৎপতি থাকেন এক কল্পিত স্বৰ্গলোকে এবং এই জগৎঘন্ত্র তাহার হস্তের দ্বারা নিৰ্ম্মিত হইলেও, তাছা হইতে বিচ্ছিন্ন হইয়া পাপী মনুয্যের আবাসস্থান হইয়। অাছে। যদিচ খৃষ্ট মানুষকে উদ্ধার করিবার জন্য এবং স্বর্গে পুনরায় লইয়। যাইবার জন্ত পৃথিবীতে মানবরূপ পরিগ্রহ করিয়া অবতীর্ণ হইয়াছিলেন, তথাপি স্বৰ্গ এবং মৰ্ত্ত্যের ব্যবধান তাহার দ্বারা দূরীভূত হয় নাই । তিনি মধ্যস্থত। করিবার চেষ্টা করিয়াছিলেন এবং স্বৰ্গ হইতে অবতরণ করিবার জন্ত পৃথিবীতে তাহকে ক্রুশের ব্যথা বহন করিতে হইয়াছিল। সেই ক্রুশ তাহার সকল ভক্তের জন্য তিনি রাখিয়৷ গিয়াছেন ; ধেই পরখ দুঃখ স্বীকারের উপর স্বগের অধিকার লাভের সস্তাবনা নির্ভর করিতেছে । মানবের নিকটে ঈশ্বরের আত্মদন আনন্দের আt খ্রদান নহে, দুঃখের বলিদান—এই তত্ত্ব কোথায়, আর কোথায় উপনিষদের আনন্দাদ্ধোব ধধিমানি ভূতানি জায়ন্তে—আনন্দ হইতে সকল স্বষ্টির উদ্ভব – এই তত্ত্ব !—আমাদের শাস্ত্রে বলে, জগতের সঙ্গে ঈশ্বরের আনন্দের এক য়ুৰ্যোগ--জগৎ ঈশ্বরের আনন্দের দ্বারা পরিপূর্ণ। জগৎ সসীম, ঈশ্বর অসীম ; কিন্তু সসীমের মধ্যে অসীমের প্রকাশ । এই জগৎ তাহার ৬ানন্দ রূপ, অমৃতরূপ। আনন্দরূপমমৃতং যদ্বিভাতি । এ তত্ব খৃষ্টান ধৰ্ম্মশাস্ত্রে কুত্রাপি পরিলক্ষিত হয় না। সেই জন্য সসীম-অসীমের দ্বন্দ্ব সে দেশের ধৰ্ম্মশাস্ত্রে কিছুতেই নিরস্ত হইবার লহে । রবীন্দ্রনাথ আবাল্য উপনিষদের স্তন্তরসে পরিপুষ্ট ও বৰ্দ্ধিত—খৃষ্টীয় স্বৰ্গমর্ত্যের কল্পিত ব্যবধানের তত্ত্ব, মনুষ্যের আদিম পাপের তত্ত্ব এবং খৃষ্টের আত্মবলিদানের দ্বারা সেই পাপ হইতে উদ্ধারের তত্ত্ব র্তাহার কাছে অত্যন্ত স্কুল ও ভ্রান্ত ভিন্ন আর কি প্রতিপন্ন হইতে পারে ? সেই জন্য প্রবাসী—কান্তিক, ১৩২১ [ ১৪শ ভাগ, ২য় খণ্ড তাহাকে সেণ্টফ্রান্সিস্ অব অ্যাসিসি বা ঐ শ্রেণীর খৃষ্টীয় সাধকদিগের সঙ্গে তুলনা করা নিতান্ত অসঙ্গত হইয়াছে । উপনিষদের সঙ্গে বাইবেলের যেমন তুলনা চলে না, রবীন্দ্র নাথের সঙ্গে ফ্রন্সিস অব অ্যাসিসি বা মঠাশ্রয়ী খৃষ্টীয় কোন সাপকের তেমনিই তুলন। চলে না । আমি অবশু তুলি নাই যে, গ্রীক দার্শনিক প্লেটে ও প্ল'টনাসের ভাববাদ যেখানেই খৃষ্টধৰ্ম্মের সঙ্গে তত্ত্বে এবং সাধনায় মিলিত হইবার সুযোগলাভ করিয়াছে, সেখানেই খৃষ্টান ধৰ্ম্মতত্ত্ব এবং সাধন এমন একটি অভাবনীয় রূপ লাভ করিয়াছে যাহ। বাস্তবিকই বিস্ময় উদ্রেক না করিয়া থাকিতে পারে না । খৃষ্টধৰ্ম্মে ঈশ্বরের সসীম ও অসীম স্বরূপের যে দ্বন্দ্ব রহিয়াছে—ঈশ্বর তাহার শক্তিতে অনন্ত কিন্তু প্রেমে সান্ত, এই যে তাহার দ্বৈত খৃষ্টধৰ্ম্ম স্বীকার করিয়াছে,—ইহাকে অবলম্বন করিয়া এক নিগূঢ় তত্ত্বের উদ্ভব জন্মান দেশে ঘটিয়াছে। জেকব, বইমে, এই তত্ত্বের একজন প্রধান প্রতিষ্ঠাত ও ব্যাখ্যাত । জেকব বইমে, ইঙ্গক্রয়েঞ্চ প্রভূতি কোন কোন সাধকের সহিত আমাদের প্রাচ্য ভক্তিসাধকদিগের সোসাদৃশু এই জন্য দেখা যায় । কিন্তু মোটের উপর খৃষ্ঠায় সাধন বলিতে উৎকট পাপবোধ ও তাজনিত ব্যাকুলতা এবং মানবরূপী ভগবনু খৃষ্টের অনন্ত শরণাগতির চিত্রই মনে জাগে । তাহার সঙ্গে ভারতবর্ষীয় সাধনার সম্বন্ধ বড়ই 3%, 1 উপনিষদের স্তন্তরসে রবীন্দ্রনাথ বদ্ধিত হইয়াছেন এবং তঁহার কাব্যের মৰ্ম্মস্থলে উপনিষদের তত্ত্ব বিরাজমান একথ। বলিলে ও কেবলমাত্র উপনিষদ “গীতিমালো’র গানগুলির উৎস হইতে পারিত না। উপনিষদের শ্রেষ্ঠ ভাব আত্মাতে পরমাত্মাকে দর্শন ! “শাস্ত, দান্ত, উপরত, তিতিক্ষু, সমাহিত’ হইয়া সাধক আত্মন্সেবাত্মানং পশুতি, আত্মার মধ্যে সেই পরমাত্মাকে দেখিয়া থাকেন । জ্ঞানপ্রসাদেন বিশুদ্ধসত্ত্বস্তুতপ্ত তং পশুতে নিষ্কলংধ্যায়মান । জ্ঞানপ্রসাদে বিশুদ্ধসত্ত্ব হইলে ধ্যায়মান হুইয়া মানুষ তাহাকে দেখিতে পায়। উপনিষদ যেখানে সৰ্ব্বভূতের মধ্যে আত্মাকে দেখিবার কথা বলিয়াছেন, সেখানেও আত্মস্থ হইয়। যোগস্থ হইয়। নিত্যোহনি ত্যানাং সকল