পাতা:প্রবাসী (চতুর্দশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৯৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১ম সংখ্যা অনিত্যের মধ্যে র্তাহাকে নিত্যরূপে ধ্যান করিবার উপদেশই দিয়াছেন। উপনিষদের সাধনা এই অস্তমুখীন ধানপরায়ণ সাধনা, অধ্যাত্মযোগের সাধনা। উপনিষদের ব্রহ্ম— দুর্দশং গূঢ়মহুপ্রবিষ্টং গুহাহিতং। তিনি লীলারসময় রিশ্বরূপ, ভগবান নহেন। বৈষ্ণবের লীলাতত্বের আভাস উপনিষদের মধ্যে নানাস্থানে থাকিতে ด้trส, কিন্তু সেই তত্ত্ব উপনিষদের মধ্যে পরিস্ফুট আকার লাভ করিয়াছে একথা কোন মতেই বলা যায় ন! । লীলাতত্ত্বের কথা এই যে, বিশ্বের সকল সৌন্দর্য, সকল বস্তু, সকল বৈচিত্র্য, মানবজীবনের সকল ঘটনা, সকল উথানপতন সুখদুঃখ জন্মমৃত্যু --সমস্তই শ্ৰীভগবানের রসলীলা বলিয়া গভীরভাবে উপলব্ধি করিতে হইবে। ভগবান অনাদি অনন্ত নিৰ্ব্বিকল্প হইয়াও প্রেমে আস্তের মধ্যে ধরা দিয়াছেন ; সেই জন্যই তো কোথাও অস্তের আর অও পাওয়া যায় না। “সীমার মাঝে অসীম তুমি বাঙ্গাও আপন মুয়”। সকল সীমাকে রন্ধ করিয়৷ সেই অনন্তের বঁাশী তই নিরস্তর বাজিতেছে এবং তিনি বারবার জীবনের নানা গোপন-নিগূঢ় পথ দিয়া আমাদিগকে তাহার দিকে কত দুঃখক্লেশ কত আঘাত অভিঘাতের ভিতর দিয়া তাকর্ষণ করিয়া লইয়া চলিয়াছেন। সমস্ত জীবনের এই সুখদুঃখবিচিত্র পথ র্তাহারি অভিসারের পথ । এই পথেই তাহার সঙ্গে আমাদের মিলন ; এই পথেই .কত বিচিএরূপ ধরিয়! তিনি দেখা দিতেছেন । এই যে বিশ্ব ও মানবজীবনের সকল বৈচিত্র্যকে ভগবানের প্রেমের লীলা বলিয়া অনুভূতি, বৈষ্ণব ধৰ্ম্মতত্ত্বের ইহাই সার কথা । উপনিষদের যোগতত্ত্বে বেদান্তশাস্ত্র তৈরি হইতে পারে, কিন্তু তাহ হইতে কাব্যকলা সমুৎসারিত হয় না । বৈষ্ণবের লীলাতত্ত্বে অনুভূতির বিচিত্রত ও প্রসার এমন বাড়িয়া যায়, যে কাব্যকলাকে আশ্রয় করিয়া তাহ। আত্মপ্রকাশ না করিয়া থাকিতে পারে না । এই জণ্ঠ উপনিষদ হইতে আমরা দর্শনশাস্ত্র পাইয়াছি, কিন্তু বৈষ্ণব ভক্তিবাদ হুইতে কেবল দর্শন শাস্ত্র নহে, অপূৰ্ব্ব ভক্তিকাব্য সকলও সন্তাবিত হইয়াছে। কেবল বাংলাদেশের বৈষ্ণব কবিতার কথা বলিতেছি না, পশ্চিমের কাব্য ও গান গুলিও সংখ্যায়, বৈচিত্র্যে এবং রসগভীরতায় বাংলার গীতিমাল্য br? বৈষ্ণব কাব্যের চেয়ে কোন অংশে নূ্যন নহে, বরং অনেক বিষয়ে শ্রেষ্ঠ । আমরা সে সকল কাব্য ও গানের কত অল্প পরিচয় পাইয়াছি । জ্ঞানদাস, রবিদাস, কবীর, দাদু, মীরাবাই প্রভূতি ভক্ত কবিদের গানের যে দুএকটা টুকুর। কালের স্রোতে এখনকার ঘাটে আক্লিয়। লাগিয়াছে, তাহ শতদলের ছিন্ন পল্পবুে মতু জগন্ধে প্রাণকে বিধুর করিয়৷ দেয় । মানুষের অন্তরের ভক্তি যখন তাহার অনুরূপ ভাষা লাভ করিয়া আপনাকে ব্যক্ত করে, তখন সে যে কি অপূৰ্ব্ব জিনিষ হয় তাহ। এই উত্তরপশ্চিমের ভক্তিসাহিত্যে পরিস্কার দেখিতে পাওয়া যায়। রবীন্দ্রনাথ কেবলমাত্র উপনিষদের অধ্যাত্মযোগতত্ত্বের দ্বারা অনুপ্রাণিত নন এবং কেবলমাত্র বৈষ্ণবের লীলাতত্ত্বের দ্বারা ও অনুপ্রাণিত নন । এই দুই তত্ত্বই তাহার জীবনের সাধনায় জৈবমিলনে মিলিত হইয়া এক অপরূপ নূতন রূপ পরিগ্রহ করিয়াছে। তাহার ভক্তিকাব্যের এই নবরূপকে বিশ্লেষণ করিয়া তাহার কি পরিমাণ অংশ উপনিষদের এবং কি পরিমাণ অংশ বৈষ্ণবর্তীক্ততত্ত্বেঃ, তাহ। নির্দেশ করিতে যাওয়া ব্যর্থ চেষ্টা মাত্র । কারণ" બાડા નમના નર્મ-ગર્ભ છેઃ 4 히 যে জীবন হইতে প্রতিফলিত হইতেছে । সে জীবন আপনার অধ্যাত্ম পিপাসায় কোন রসকেই বাদ দেয় নাই—৩াহার মধ্যে সকল বিচিত্র রস মিলিয়া জুলিয়া এক অভিনব মূৰ্ত্তি গ্রহণ করিয়াছে। সেইজন্য বৈষ্ণব কাব্যের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের গীতাঞ্জলি বা গীতিমাল্যের છૂબર્માફ চলে না। ঐ কাব্য দুটির মধ্যে যে বৈষ্ণবভাব বহুল পরিমাণে নাই এমন কথা বলি না ; কিন্তু আরও অনেক জিনিস আছে যাহা বৈষ্ণব নয়, যাহা বৈষ্ণব ভাববীর সঙ্গে সঙ্গত হইয় তাহাদিগকে রূপান্তরিত করিয়া ফেলিয়াছে। আরও একটি কারণে রবীন্দ্রনাথকে ভারতবর্ষের প্রাচীন বৈষ্ণব বা ভক্তকবিদিগের সঙ্গে তুলনা করা চলেন । কেবল যে রবীন্দ্রনাথের মধ্যেই উপনিষদের অধ্যাত্মযোগতত্ত্ব এবং.বৈষ্ণব লীলাতত্ত্ব মিলিয়াছে এবং বাণীরূপ লাভ করিয়াছে তাহা নহে। কবীর দাদু প্রভৃতির মধ্যেও এই একই প্রক্রিয় লক্ষ্য করা যায়। সুফীধৰ্ম্ম,