পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১ম সংখ্যা ] e একটা হেস্ত-নেস্ত করতেই হবে, আর অসহ্য হ’য়ে পড়েছে !" ( e ) দোল-পূর্ণিমার রাত্রি। মানজন হলুমান মাহতোর বাসার সামনে প্রকাও অশ্বথ-গাছটার তলায় পঞ্চায়েং বসিয়াছে। মাঝখানে একটা তাড়ির কলসী, গোটাকতক কাচের গেলাস ; চারিদিকে সমাজের বিজ্ঞেরা বসিয়া । মুণরার বিচার হইবে সে বিধিমত একপাশে করজোড়ে দাড়াইয়া। বেজায় গোলমাল হইতেছিল। নেশাচড়াইয়া হাতদুটা তুলিয়া হলুমান মাহতো সকলকে চুপ করাইল, তাহার পর একটু-একটু জড়িতকণ্ঠে বলিল, “সুন্দর, অব ভাই সবকে সাম্নে বোল কাহে তু লছি-মাইকে লহমে হাত চড় হয়লে রং, P• স্বনরা তেমনি ভাবে চুপ করিয়া রহিল, না রাম না গঙ্গা–কিছুই বলিল না। হলুমান তাগাদ দিল, “কত, কহ, হোআ ।” তখন স্থির পরিষ্কার-কণ্ঠে মুনরা বলিল, “উ হুমনিকে ...মইরাক্ল বা”, অর্থাং আমার স্ত্রী ও । কথাটাতে সভাতে চৈ-হৈ পড়িয়া গেল এবং “মারো ছারামজাদাকে, “পিটো বদমাইসকে” গোছের কয়েকটা অশুভসূচক ভাঙ্গা-ভাঙ্গা কথা বেশী-বেশী শোনা যাইতে লাগিল। কয়েকট। ছেলে দাড়াইয়া উঠিয়া শক্ত জমিটার উপর নিজের-নিজের লাঠি ঠুকিয়া তাহাদের উৎকট অভিমত জ্ঞাপন করিল । বিজ্ঞেরা বোধ হয় কথাটা তেমন হৃদয়ঙ্গম করিতে পারিল না, তাই এক-এক চুমুকে বুদ্ধিট। একটু চাঙ্গা করিয়া লইল । মুন্নার নেশাট একটু বেতরং হইয়া পড়িয়াছিল। টলিতে টলিস্ত্রে দাড়াইয়া বলিল, “হারামজাদ, তোর জিভট উপড়ে নেবো এখনি—" একজন তাহাকে ঠাণ্ডা করিয়া বসাইয়া দিল । হলুমান মুনরাকে বলিল, “নেশ করে তোর আজ মতিগতি ঠিকৃ নেই, আমি টের পাচ্ছি। বুঝে-হঝে’ কথা বলবার চেষ্টা করিসূ ভাইদের সামনে—” মুনরা মাথাটা সিধা করিয়া বলিল, “মৃনরা তাড়ি থেয়েছে একথা কেউ বলতে পারে না। গলায় আমার “কলতলার কাব্য’ ミ> বৈষ্ণবের কণ্ঠী-- সেটা দেখে’ ও ও-কথাটা বলা ধৰ্ম্মকে গাল দেওয়া হয়েছে। আমি ঠিকই আছি, আর লছিয়া যে আমার স্ত্রী একথাও খাটি—” মুন্না আবার ঠেলিয়া উঠিতেছিল, পাশের একজন লোক হাতটা চাপিয়া ধরিয়া বসাইয়া দিল এবং এক গেলাস ভৰ্ত্তি করিয়া বলিল, “ধর, মাথা একটু ঠাণ্ড কর, এটা ঘাবড়াবার সময় নয় ।” স্বনরা বলিল, “আমি সমস্ত কথা বলে’ যাচ্ছি, মুন্নাকাক্কা মিলিয়ে দেখুন ঠিক্‌ কি না, আর লছিয়াও ত সামনে আছে, কিছু-কিছু তারও মনে থাকতে পারে।” লছিয়ার নামে মুন্নার সিক্ত মনে স্নেহুট বোধ করি উদ্বেলিত হইয়া উঠিল, তাহাকে ডাকিয়া বলিল, “লচ্ছি, আমার কাছে এসে বোস তুই, দাড়িয়ে-দাড়িয়ে যে ননীর পা-দু’টো তোর ভেঙে যাচ্ছে, সে আর আমি প্রাণ ধরে দেখতে পাচ্ছি না—” নাক সিটুকাইয়া লছিয়া বলিল, “বেশ আছি আমি, আর আদর দেখাতে হবে না ; তাড়ির গন্ধের মধ্যে গিয়ে বসতে পারিনে। যত সব মাতাল বসেছে, বিচার হতু , উকুনের পাশ ।” মুন্ন প্রাণ খুলিয়া হাসিয়া ফেলিল এবং অন্য মাতব্বরের ! যোগ দিল । একজন হাসির মধ্যে হঠাৎ থামিয়া বলিল, “লচ্ছি-মাই আজ বড় চটে আছে, ছেলেটাকে জবরদস্ত সাজা দিতে হবে ।” স্বনার প্রতি হুকুম হইল, “বল কোর কি বলবার আছে ?” মুনরা বলিতে লাগিল, “আমাব প্রকৃত নাম মোস্টীলাল, সুন্দর নয় ; বাড়ী আমাৰ বালিয়া জেলায় গজরাজপুর গ্রামে । বাপের নাম ছিল সন্তোগী—” মুহূৰ্ত্তের মধ্যে মুন্নার ভাবটা বদলাইয়া গেল, নামট শুনিয়াই সে উঠিয়াছিল, আস্তে-আস্তে স্থনরার সামনে গিয়া একেধারে মুথের কাছে মুথ লইয়া গিয়া দুই মিনিট ধরিয়া নিরীক্ষণ করিয়া বলিল, “লচ্ছি, আয় দেখি, দেখ দেখি ; তুই কি কিছু চিনতে পারিস্ ? আমার যেন মনে হচ্ছে—” লছিয়াও মাথার কাপড়টা তুলিয়া দিয়াছিল, গালের