পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৬ “স্থধা” কাকাবাবুর কাছে আমি মানুষ হয়েছি। আমার মা ও বাবা যখন মারা যান, তখন আমি খুব ছোট, তার পর কাকীমার কাছেই আমি মায়ের আদরে বড় হয়ে উঠেছি। আমার খুড়তুতো ভাই মন্ট, আমার চেয়ে বছর সাতেকের ছোট। তার সঙ্গে আমার খুব ভাব । তখন আমার বয়েস চোদ্দ বছর হবে, থার্ড ক্লাসে পড়ি, আমায় ম্যালেরিয়ায় ধৰ্বলে, বেশ কিছু দিন ভুগে উঠলাম। স্কুল ছেড়ে দিতে হ’ল, কিছুদিন চুপচাপ বাড়ীতেই বসে’ রইলাম। মাস-তিনেক পরে একটু ভাল হ’লে পর গরমের সময় আমারা জাম্তাড়া গেলাম চেঞ্জে। বেশ স্বন্দর জায়গা জামৃতাড়া আমার শরীর বেশ সেরে উঠতে লাগল। মাস দুই পরে আমাদের কলকাতা ফেরবার কথা হ’ল, আমি কাকাকে বললাম, “আমাকে কাকাবাবু এখানের বোর্ডিং-স্কুলে রেখে যাওনা, শরীরও ভাল থাকৃবে, পড়াও হবে।” আসল কথা আমার ভয় কবৃছিল—কলকাতায় ফিরলে ফের জরে পড়ব । দু-তিন দিন কিছুই ঠিক হ’ল না, কাকাবাবু রাজি হলেন কিন্তু কাকীমা কিছুতেই রাজি নন। অনেক বুঝিয়ে তবে তাকে রাজি করে শেষে আমি স্কুলে ভৰ্ত্তি হ’লাম। আমি বোর্ডিংএ যাবার চার-দিন পরে কাকার কলকাতা চলে’ গেলেন। ষ্টেশন থেকে তাদের তুলে দিয়ে বোর্ডিংএ ফেব্ৰুবার সময় ভারি খারাপ লাগছিল। ক'দিন মনটা খারাপ ছিল খুবই । তার পর আস্তে-আস্তে মন বসে’ এল । বেশ সুন্দর জায়গ৷ এই জাম্ভাড়া ! খুব খোলা আর দূরে-দূরে আমাদের বোর্ডিং-এর এক-একটা বাড়ী । দূরে সব পাহাড় দেখা যায়, আমার বেশ ভালো লাগত। দিনে খুব গবম হ’ত, কিন্তু বিকালটা ভারি চমৎকার লাগত। ক্রমে বর্ষা এসে পড়ল। বর্ষার দিনগুলি আরও ভাল লাগত। বিকালে রোজই খেলা হ’ত, সেদিন আমাদের ঘরের ছেলেদের সঙ্গে অন্ত-এক ঘরের ছেলেদের ফুটবল-ম্যাচ খেলা সবে স্বরু হয়েছে, খানিক পরেই ভয়ানক ঝড় আর বৃষ্টি এল । খেলার উৎসাহে প্রবাসী—কাৰ্ত্তিক, ১৩৩১ [২৪শ ভাগ, ২য় খণ্ড বৃষ্টিতে ভিজেই খেললাম। রাত্রে ভয়ানক জর হল। স্কু বাড়ীর শেষ ঘরখানাতে হেডমাষ্টার মশাই থাকতে তিনি আমায় তার ঘরে নিয়ে গেলেন। তিনদিন প। জর একটু কমূল, কিন্তু আমার দুই হাটুর জোর যেন চে গেল। দিন-সাতেক পরে জর একবারে ছেড়ে গেল, কি পায়ের জোর আর ফিরে’ এল না। আসানসোল থেে বড় ডাক্তার এলেন, বললেন, বেশ কিছু দিন শুয়ে থাকৃে হবে । শুয়ে-থাকা ছাড়া এ অসুখের আর অন্ত কো চিকিৎসা নাই। আমার ভারি কান্না পেলে কাকীমা কথা মনে পড়ে', তিনি ত আমায় নিয়ে ধে:ে চেয়েছিলেন, আমিই জোর করে রইলাম। আমি যে ঘরে শুয়ে থাকৃতাম, ঠিক তার পাশে হা বস্ত সপ্তাহে দুদিন, কত লোক আস্ত হাটে । ছো একটি ছেলে আসত বঁাশী বিক্রি করতে । সাওতালী স্থ কিছুই বুঝতাম না, কিন্তু ভারি মিষ্টি লাগত। ইচ্ছে করত বঁাশী বাজাতে শিখি। যতক্ষণ সে বঁাশী বাজাতে কত কথাই মনে পড়ত। সব চেয়ে মন্ট, আর কাকীমা কথা মনে পড়েই খারাপ লাগত। আমার ঘরের সাম্নে দিয়ে রাস্তাটা পশ্চিমে চলে গেছে কতদূরে সেই বঙ্গিনাথ পৰ্য্যস্ত । আমার মনে হ’ত যদি আমার অস্থখ না হ’ত, তা হ’লে বড় হ'লে এই রাস্তা দিয়ে সেই আগেকার কালের মত হেঁটেই বদিনাথ বেড়াতে খেতাম। সারা দিনই শুয়ে থাকৃতাম । এইরকম করে’ পনের দিন কেটে গেল । তার পর হেডমাষ্টার মশাই কাকাবাবুকে চিঠি লিখলেন, আমাকে কলকাতায় নিয়ে যেতে চিকিৎসার জন্ত । কাকাবাবু এলেন আমায় নিয়ে যেতে, সে দিনও হাটবার ; সেই ছেলেটি বঁাশী বাজাচ্ছিল, আমাকে ঠিক তার দোকানের পাশ দিয়ে পান্ধী করে’ ষ্টেশনে নিয়ে চলল। সে ভারি করুণ স্বরে বাণী বাজাচ্ছিল। মন বড় খারাপ হ’য়ে গেল, মনে হ’ল একেবারেই বিদায় নিয়ে যাচ্ছি, আর বোধ হয় আসা হবে না এখানে । ‘ষ্টেশনে আমায় তুলে দিতে এসেছিলেন হেডমাষ্টার মশাই আর আমার ঘরের ছেলেরা । মাত্র মাস তিনেক ছিলাম এখানে তবু ছেড়ে যেতে ভারি কষ্ট হচ্ছিল। বাড়ী এসে ঠিক রাস্তার ধারের ঘর খানাতে আমার