পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১ম সংখ্যা] যতীন-ম:মা বলেন শীগগিরই ছেড়ে যাবে আর আমি উঠে’ বেড়াতে পারব কিন্তু আমার হাটুর জোর ফেবৃবার লক্ষণ কিছুই বুঝতে পারছিনে। দিন কয়েক হ’ল স্কুল খুলেছে, আজ ৬ই নভেম্বর, ঠিক এক বছর হ’লু প্রথম যেদিন স্বধাকে দেখি তার থেকে। গাড়ী এলে দেখলাম সেই হাসি-হাসি মুখ, আমাকে দেখেই যেন সে একটু চমকে উঠল। গাড়ী চলে গেলে পর আমি আয়নায় নিজের চেহারা দেখতে বসলাম, মনে হ’ল একটু রোগা হ’য়ে গেছি। মণ্ট কে বললাম, “আমার একটা পাঞ্জাবী বার করে* দাও ত ভাই” । সে জামা এনে দিলে পর দেখলাম গলাট ঢিলে লাগছে, কঁাধ ঝুলে পড়েছে, গায়েও বড় ঠেকছে । জামা পরেই রইলাম। যতীনমামা সেদিন যখন এলেন তখন আমার জর এসেছে তাকে জিজ্ঞাস করলাম, "যতীন-মামা আমি কি খুব রোগা হ’য়ে গেছি ?” তিনি অন্ত দিকে ফিরে’ বললেন, “ন। ত !" o কাকীমা পাশে বসেছিলেন, আমি তাকে বললাম, “তবে জামটো কি করে’বেড়ে গেল এত ?” যতীন-মামা কাকীমার দিকে গম্ভীর হ’য়ে চাইলেন, কাকীমা এসে আমায় আদর করে বললেন, “ন। বাব শীগগিরই তুমি সেরে উঠবে।” আজকাল আর বড় উঠে বসতে পারিনে, রোজ আর লেখাও হ’য়ে উঠছে না, এখন আয়নাটাই আমার সবচেয়ে বড় বন্ধু হ’য়ে উঠেছে। মণ্ট, আয়নাখানা রোজই সকালে জানলার ধারে টাঙিয়ে দেয় । আয়নায়ু আর আজকাল স্বধাকে রোজ দেখতে পাইনে, কোন দিন গাড়ীর চাকা দেখা যায়, কোন দিন গাড়ীর একেবারে শেষটুকু, তার পর কয়েকদিন স্বধাকে দেখতে পাই । আবার মাঝে-মাঝে শুধু কোচ বাক্সটাই দেখা पिश्। মণ্ট, বললে,“দাদাভাই, কৃষ্ণদের গাড়ীর ঘোড়াট বদলেছে, ভারি দুষ্ট এটা, কিছুতেই স্থির হয়ে দাড়াতে পারে না ।” একদিন একজন বুড়ে বঁাশী বাড়িয়ে ধাচ্ছে রাস্তা দিয়ে মন্ট কে বললাম ওকে ডাকুতে পারে ভাই ? মন্ট তাকে ডাকুলে,জািনলার ধারে সে দাড়াল, মণ্ট, তাকে বললে, "দাদাভাইএর অস্থখ, তুমি তাকে একটু বশী শোনাবে ?” স্বধা షాహి সে বললে, “কি হয়েছে পোকাবাবুর ?” মন্ট বললে,"সে অ’নক দিন হ’ল এক বচ্ছর দু বচ্ছর হবে, দাদা ভাইএর জর হয়েছে আর পায়ে কি হয়েছে, ডাক্তার মানা করেছে বিছান থেকে উঠতে, তুমি একটু বাজাও না, আমি পয়সা দেবো।” আমি শুনতে পেলাম, সে বললে, “আহ৷” । তার পর একটা ভাটিয়ালী স্বর বাজাতে লাগল দাড়িয়ে, প্রায় আধ ঘণ্টা পরে বললে, “আমি আজ আসি, আবার পরে আসব” মন্ট, একটা সিকি হাতে করে জানলা দিয়ে বাড়িয়ে বললে, “পয়সা নিয়ে যাও"। সে বললে “বাঁশী বিক্রি করি আমি, বাণীর স্বর ত বিক্রি কদিনে” । বলেই চলে’ গেল । এমনি করে’ই দিন চলেছে, ব:শীওআলা মাঝে মাঝে দশ-পনর দিন পরে-পরে আমায় বাণী শুনিয়ে যেতো । এমনি করে আরও প্রায় বছর খানেক কেটে গেল । আবার ৬ই নভেম্বর ফিরে এসেছে। স্বধাকে দেখলাম একখানা বাদামি-রংএর গায়ের কাপড় গায় দিয়েছে বোধ হ’ল । আয়নায় ভাল করে বুঝতে পারলাম না। এখন আমার রোজই সন্ধ্যায় জর আসে, চেষ্টা করলেও আর উঠে । বসতে পারিনে আজকাল । যতীন-ম:মা মাঝে-মাঝে ফুল নিয়ে আসেন আমি সেগুলি জানলার ধারে রেখে দিই । অনেকদিন পরে বঁাশীআলা বাণী শুনিয়ে গেল আজ সকালে, বড় টানা স্থর, আজ মনটা বড় দমে’ গেছে । রাস্তায় তখনো বঁাশীর স্বর চলেছে, সামূনের মেসে কে জানি এসরাজ বাজিয়ে গান ধরেছে— “দূরে কোথায় দূরে দূরে মন বেড়ায় যে ঘুরে ঘুরে’ যে বাণীতে বাতাস র্কাদে সেই বঁাশীটির স্বরে স্বরে” দিনের পর দিন চলেছে আমার জরও বেড়ে চলেছে । আমি ফুল ভালবাসি বলে’ আজকাল রোজই আমার জন্য ফুল আসে। মাঝে কয়দিন একটু ভাল ছিলাম, একটু বসতেও পারি। জানুয়ারী মাসের শেষ বোধ হয় তখন, একদিন কতকগুলি বালিশে ঠেস দিয়ে জানলার পাশে বসেছি সকালে । গাড়ী এসেছে কৃষ্ণাকে নিতে, স্বধাকে দেখলাম । আজ আর মাথায় লাল ফিতেও নেই, খোলা