পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8Հ প্রবাসী—কাৰ্ত্তিক, ১৩৩১ [২৪শ ভাগ, ২য় খণ্ড হিসাব পাওয়া গেল। স্বকান্ত আর প্রশ্ন করিল না, মনে করিল রেবার খরচের সার্থকতা আছেই। ঠিক এমুনি সময়ে রেবা আসিয়া একগাছ মালা আলগোছে স্বকাস্তের গলায় পরাইয়া দিল। উত্তরে স্বকান্ত বাকী মালাই বীরদপে রেবার গলায় পরাইয়া দিতে যাইতেছে, এমন সময় রেবা বাধা দিয়া বলিল, “আ৷ করে। কি, করে। কি, একটা পরিয়ে দাও, অতগুলি নয় ।” স্বকাপ্ত হতভম্বভাবে বলিল, “কিন্তু অতগুলি দিয়ে কি হবে ?” "ওগুলি দেয়ালে টাঙিয়ে দেবো।” ততক্ষণে ফুলের গন্ধে সদ্যঃস্নাত স্বকাস্তের মাথা খুলিয়া গিয়াছে। সে বলিল, “রেব, আমার মাথায় একটা চমৎকার মৎলব এসেছে।” “কি মৎলব, বলো ত ?” “বলছি, কিন্তু তার আগে ঐ মোমবাতিগুলি তুমি কি কাজে লাগাবে বলে ।” রেবা হাসিয়া বলিল, “এটা বুঝলে না 7 রাত হ’লে মোমবাতিগুলি টেবিলের চারদিকে, জালিয়ে দেবো । আলো, ঘরের চারদিকে, মেজেতে, পাতার উপরে ও ফুলদানিতে পড়ে’ স্বন্দর দেখাবে।”

  • বেশ, বেশ । কিন্তু এস আজ রাতে আমরা রীতিমত বন্ধু-ভোজ করিয়ে কালিদাসের সম্মানটা শেষ করি।”

“বন্ধু ভোজ করিয়ে ?” “দোষ কি ?” “আমরা যে গরীব ।” “রেব, এস আজ একদিন আমরা ভুলে যাই যে আমরা গরীব। আর বেশী লোক ত নিমন্ত্রণ করব না।” “কতজন ?” “এই ধরে ৭৮ জন।” “না। ঠিক ৫ জন । “কেন ?” “আমাদের আর ৫ট। মালা বাকী আছে।” জুকান্ত ও রেবা দুজনে দুজনের দিকে চাহিয়া হাসিল । ৫ জন বন্ধুকে নিমন্ত্রণ করাই ঠিক হইল । রেবা নিজের ও স্বকাস্তের গলার মালা ছু-খান খুলিয়া তার বেশীও নয়, কমও না ।” লইয়া অন্যগুলির সহিত জলে ভিজাইয়া রাখিল । স্বকাৰ দুঃখিত-স্বরে বলিল, “খুলে নিলে ?” “আবার রাতে সকলে মিলে পর্ব, কি বলছ ?” “তুমি নিষ্ঠুর ” রেবা মুকাস্তকে ভ্যাঙাইয়া চলিয়া গেল । সেদিন সারাদিন ধরিয়া স্বকাস্ত ও রেবা রাতে উৎসবের আয়োজনে ব্যস্ত রহিল। আয়োজন বেশী নহে তাদের সামর্থ্যের মত। তবু যেন ফুরাইতে চায় না কত কল্পনা-জল্পনা, কত হাসি ও তর্ক এবং কত মীমাংস বিহীন নালিশ যে দিনটার ভিতর বহিয়া মধুর করিং তুলিল, বলা যায় না। তারা আজ পয়লা আষাঢ়কে ও পয়লা আষাঢ়ের এক কবিকে সঙ্গে-সঙ্গে অভিনন্দন করিতে যাইতেছে ব্যাপারটা অত্যন্ত তুচ্ছ । বিশাল জগতের মধ্যে :ে তারা, কতখানি তারা ? তারা আষাঢ়কে না ডাকি:ে বা কালিদাসকে না মানিলে জগতে কোথাও এতটুকু ক্ষংি কারো হয় না। এ-কথা স্বকান্ত-রেবা কি জানে না তারা কি জানিয়া শুনিয়া ছেলে-মাজুষি করিতেছে না ? রেবা দৃঢ়তার সহিত বলিতে পারে না। স্বকা স্বনিশ্চয় নয়। সে কতকটা রেবার উৎসাহের তেৱে চলিয়াছে। এবং সেজন্ত লজ্জা অনুভব করিতেছে। মজা হইল এই যে শেষকালে রাত্রিটাই প্রধান হইয় দাড়াইল । অন্ততঃ স্বকাস্তর কাছে । সে আগ্রহের সহিৎ রাত্রির ঘটনার জন্ত প্রতীক্ষা করিয়া রহিল। রেবা কাছে সমস্ত দিনটাই কিন্তু পবিত্র, পয়লা আষাঢ় খ কালিদাসকে সম্মান করিবার দিন ! আজিকার দিন অং সমস্ত দিনের মত নহে, সে যেন আজ কোথাও ফাৰ অনুভব করিতেছে না । ক্রমে রাত্রি আসিল, মোমবাতিগুলি জলিয়া উঠিল সৰ্ব্বত্র মোমবাতির আলো প্রতিফলিত হইয়া ঘরের মধে মধুর বর্ণ ও গন্ধের সমাবেশ হইল। যথাসময়ে স্বকাস্তে পাচজন বন্ধু থাইতে আসিল । রেব সকলের সামনে বাহির হয় । স্বতরাং কোন গোলযোগ হইল না । :ে নিজ হাতে সকলকে এক-একখানি মালা তুলিয়া দি এবং হাসিমুখে চাহিল।