পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Wッ প্রবাসী—কাৰ্ত্তিক, ১৩৩১ না, বলিলেন, “আমি তখন স্নান করতে গিয়েছিলাম । এসে দেখি ছেলেটি ঐখানে বসে আপনমনে খেলা করছে ; এ-ছাড়া আর কোনো খবর আমি জানিনে ৷” মহেশ্বরী যখন পূজা শেষ করিয়া বাহির হইলেন, তখন স্বপেন্দু আসিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “ মা ! নবীন গেল কোথায় ? এখানে ছেলেটাকে ফেলে গেল নাকি ?” মহেশ্বরী পুত্রের অভিপ্রায় বুঝিতে পারিয়া ভাবিলেন, –এই শিশুকে লইয়া তাঙ্গার অনেক ভোগই ভুগিতে হইবে । তিনি হাসিয়া নরম-স্বরে বলিলেন, “ই বাবা ! আমিই রেখে দিয়েছি।” স্বখেন্দু ভ্রুকুটি করিয়া কহিলেন, “তোমরা আগুপিছু ভেবে ত কোন কাজ করবে না। ঐ দুধের বালক, ওকে নাওয়াতে-খাওয়াতে হবে ; শুতেও ত পারবে না এক, এ-সব কি করে’ চালাবে ?” মহেশ্বরী তেমনি শান্তস্বরেই কহিলেন, “বাব ! আমাদের যে সব সময় আগু-পিছু দেখতে নেই। ত একটা আশ্রয় চাই । যিনি তোদের খাইয়ে-পরিয়ে মুহিষ করেছেন—একে-ও তিনি মাহ্য করবেন।” স্বপেন্দু একটু উগ্রস্বরেই কহিলেন, “তুমি দিবারাত্র পূজা-আহ্নিক নিয়ে আছ —একটা বাগদীর ছেলে—যার নাড়ী-নক্ষত্তর জ্ঞান হয়নি, তা’কে তুমি মানুষ করবে ?” মহেশ্বরী কfহলেন, “বাবা । মানুষ যখন অসহায় ক’য়ে পড়ে, তখন তার সহায় হ’তে হ’লে বিচার-আচার চলে না । শুধু মর্য্যাদার খাভিরে নিরাশ্রয় আত্মাকে আত্মা থেকে পৃথক্ করে আপনাকে বৃথা একটা তৃপ্তি ও স্বস্তির মধ্যে ডুবিয়ে রাখতে বলিস্নে বাবা!” মৃগেন্দু কহিলেন, “তুমি সোজা কথায় বলে, তুমি ত৷ হ’লে ঐ বাগদীর ছেলেটাকে নিয়ে তুলতে চাওঁ ?" نتي - تقييم একাকার করে” মংে শ্বরী কঙ্গিলেন, “ত চাইনে, তা করবও না । কিন্তু মনে ঐ রকম একটা বিকার থাকাই দোষের । ভতরের চেয়ে বাইরের দিকে কেন অযথা অতটা জোর দিস ? তুই দেখিস, ওকে বঁচিয়ে তুলতে আমার জা’ত খোয়াতে হবে না । বাগদীর ছেলে বলেই এমন স্থযোগ ছেড়ে আতঙ্কে পিছিয়ে যেতে বলিস্ ? ধ্যাখ, স্বখেন ! [২৪শ ভাগ, ২য় খণ্ড আমার জাতকে আমি যেমন বঁচিয়ে চলি, সেইরূপ অপর একজন তার নিজের জা’তকেও বাচিয়ে চলে, সেজন্য কেহ কারও মানি করে না । যার যেটুকু পেতে বাধে না, সেটুকু না পেলেই বিচ্ছেদ ঘটে, দুয়েরই বলক্ষয় হয় ।” অগত্যা মুখেন্দু একটুকু স্বর নামাইয়। কহিলেন, “কিন্তু তুমি বুঝতে পারছ না মা ! ওকে নিয়ে তোমাকে কতটা অস্থবিধের মধ্যে পড়তে হবে।” মহেশ্বরী কহিলেন, “তা বুঝবার দরকার নেই ত বাবা ! সে বুঝতে গেলে সেবাধৰ্ম্ম চলে ৱা । ওর যে সেবা পাবার একান্তই দরকার । এখানে নিজের অসুবিধার চেয়ে ওর স্ববিধাটাই বেশী বড় করে দেখবার কথা । আর তাও বলি, ওকে বিমুখ করলে শুধু জাতি নিয়ে কতটা পুণ্য সঞ্চয় হবে ?" মহেশ্বরীর সঙ্গে পারা গেল না । তর্ক ফেলিয়া স্বথেন্দু আর-কিছু না বলিয়া চলিয়া গেলেন। তাহার মাতার নিরলস সেবাবৃত্তি আজ কিছু নূতন নহে। স্থতরাং তিনি ইহাতে আশ্চৰ্য্য হইলেন না, কিন্তু এই অস্পৃত শিশুটিকে লইয়া তাহার শুদ্ধাচারিণী বিধবা জননী যে কিরূপে ঘরকন্না করিবেন, তিনি তাহা ভাবিয়া পাইলেন না । - ছেলেটির দেহের সন্ধিস্থলগুলিতে ময়লা জুমিয়া চাপ বাধিয়া গিয়াছিল। স্থথেন্দু চলিয়া গেলে মহেশ্বরী উঠানে একখানা চৌকী পাতিলেন, ঘড়া ভরিয়া জল আনিলেন, নূতন গামছা বাহির করিলেন । তার পর ছেলেটিকে লষ্টয়াসাবান দিয়া রগড়াইয়া-রগড়াইয়া মাজিয়াঘষিয়া, তাহাকে পরিষ্কার করিয়া স্বান করাইয়া দিলেন। চিরুণী দিয়া মাথার তিন-পুরু ময়লা তুলিয়া, কেশ রচনা করিয়া কপালে একটি খয়ের-টিপ পরাইলেন এবং কাজললতা লইয়া চোখে কাজল দিয়া দিলেন। ছেলের চেহারা একেবারে বদলাইয়া গেল। মহেশ্বরী পুত্রবধূকে ডাকিয়া গৰ্ব্বভরে কহিলেন, “শৈল ? বের হয়ে একবার দ্যাথ !” মহেশ্বরীর কন্যাসন্তান না থাকায় পুত্রবধূর নাম ধরিয়া ডাকিয়া সে-সাধ পূর্ণ করিতেন। শৈলবালা