পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৬২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১ম সংখ্যা ] হয়, আচ্ছা—বলিয়া তিনি তাহার শিয়রের বালিশের তল হইতে ক্যাশ বাক্সটি খুলিয়া নয় আনা পয়সা বারদুই-তিন ভালো করিয়া গনিয়া আল গোছে অজিতের হাতে ফেলিয়া দিলুেন | অজিত একবার ধীরে ধীরে জিজ্ঞাসা করিল, রমেশদাদা কোথায় ? তার সঙ্গে একুবার— না, না, তার সঙ্গে আর দেখা করে’ কাজ নেই। তিনি বেরিয়ে গেছেন, রাস্তায় দেখা হয়, ত হবে । এই বলিয়া ঘন-ঘন হাত নাড়িয়া তিনি তাহাকে সেস্থান পরিত্যাগ করিবার ইঙ্গিত করিলেন । অজিত সিড়ি বাহিয়া নামিয়া আসিয়া বাহিরে রাস্ত ধরিল । তাহার চোখের স্বমুখে সমস্ত কলিকাতা শহরটাই তখন ছলিতেছিল ; asع. 肇 峯 藩 来 বৈশাখী বৈকালে কাল-বৈশাপীর উন্মত্ত ঝঙ্কা পৃথিবীর উপর ঝাপাইয় পড়ে, ঘন-তমসায় চারিদিক সমাচ্ছন্ন হুইয়া যায়, উতল-কলরোলে বাদল নামে,—মনে হয়, বুঝি বা এই ঝঙ্কার দাপটে সব ভাঙ্গিয়া চুরমার হইয়া গেল, বাদলের প্লাবনে বুঝি বা আজ সৃষ্টি ভাসিয়া যায়, কিশ্ব কাহাকেও কিছু বলিতে হয় না, কিছুই করিতে হয় না, দেখিতে-দেখিতে সমগ্র বিশ্বপ্রকৃতি চোখের স্বমুখে আবার শাস্ত-মুন্দর হইয়া ফুটিয় উঠে. 来 攝 轉 臺 কালীঘাটের কাছাকাছি ভবানীপুরের একটি বাড়ীতে অজিত একটি ছেলেকে পড়াইত, -একটা চাকুরীও নাকি সে পাইয়াছিল । সেদিন সকালে ছেলেটিকে পড়ানো শেষ করিয়া ধ্বংস-পথের যাত্রী এরা— (సి অজিত বাহির হইতে যাইবে, এমন সময় দরজার নিকট এক ভিখারিনী আসিয়া দাড়াইল, হাতে একটি মাটির পাত্র, মুখে একটা শরের কাঠি । ছাত্রটি বলিয়া দিল, ও রোজ এমুনি করে ভিক্ষে করে মাষ্টার-মশাই, কথা কয় না, ও মৌনী । কিন্তু অজিত তাহাকে দেখিয়াই চিনিল। এ সেই অতসীর মা । এই অসহায়া উপায়হীন নারীর মিথ্যা অভিনয়কে সে আজ অবজ্ঞা করিতে পারিল না—তাহার হাতে প্রবঞ্চিত হইবার গৌরবটুকুর জন্য লালায়িত হইয়াই অজিত যেন তার পকেট হইতে একটি টাকা বাহির করিয়া তাহার মাটির পাত্রে ফেলিয়া দিল । অতসীর মা এতক্ষণ হেঁটমুখে দাড়াইয়াছিল, কিন্তু তাহার ভিক্ষাপাত্রের উপর টাকা দেখিয় সে চমকিয়া উঠিল। অভাবের তাড়নায় মিথ্যার মুখোস পরিয়া দ্বারে-দ্বারে যে প্রবঞ্চনা করিয়া বেড়ায়, তাহাকেও আশাতিরিক্ত দান যে করিতে পারে, সে-দাতার মুখখানি কেমন, তাহাই একবার দেখিবার জন্য সে মুখ তুলিয়া চাহিল,—কিন্তু অজিত তখন তাড়াতাড়ি রাস্তায় নামিয়া পড়িয়াছে বলিয়া ভালো দেখিতে পাইল না। তাই সে-লোকটিকে একবার অতর্কিতে দেখিয়া লইবার জন্তই অতিশয় সঙ্কোচে সে তাহার পিছু-পিছু চলিতে লাগিল । কিয়দুর গিয়া অতসীর মা তাহাকে চিনিতে পারিল কিন্তু চিনিবামাত্র তাহার শীর্ণ হাত দুইটা থর্থর করিয়া কঁপিয়া উঠিল,—মাটির পাত্রটি হাত হইতে মাটিতে পড়িয়া যাইবার জো হইল, তাড়াতাড়ি সেটিকে দু-হাত দিয়া চাপিয়া ধরিয়া সে মুখ ফিরাইয়া বিপরীত দিকে বাড়ীর পথ ধরিল । চোখ-দুইটা তখন তাহার জলে ছল ছল করিতেছিল।