পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রবাসী—কাৰ্ত্তিক, ১৩৩১ مb মুগ্ধ ছিলেন । তাহা হইলেও মহেশ্বরী যখন প্রথম এই বাগীর ছেলেকে গৃহে স্থান দিলেন, তখন একটা অতৃপ্তি ও উত্তেজন অতি নম্রভাবে প্রত্যেকের মনকে ক্ষুব্ধ করিয়া তুলিতেছিল। কিন্তু যখন সকলেই দেখিতে পাইলেন, এই নিষ্কাম রমণী—আপনার নিষ্ঠাটুকু পুর্ণমাত্রায় বজায় রাখিয়া নিঃসহায় ছেলেটিকে কেমন মানুষ করিয়া তুলিতেছেন, তখন অধিকাংশই আপন-আপন মনের প্লানি ভুলিয়—শতমুখে আবার তাহার প্রশংসা করিতে লাগিলেন । অবশু অধিকাংশ কেন, সকলেই করিতে পারিতেন, কিন্তু পৃথিবীতে সকলের প্রশংসা পাইবার মত পুণ্য কাজ কিছুই নাই । বালকের অজ্ঞতার ফলে প্রথম-প্রথম মহেশ্বরীর কাজ চতুগুণ বাড়িয়া ধাইত । মহেশ্বরী হরত পূজায় বসিয়াছেন, --সে মাকে চমকৃ দিব:র জন্য চুপি-চুপি ধরে ঢুকিয়া পিছন ইষ্টতে তাহাকে জড়াইয়া ধরিয়াছে ; তখন পূজার উপকরণ ফেলিয়া দিতে শুইত, স্নান করিতে ইষ্ঠত, এবং নূতন করিয়া সকল সামগ্ৰী সংগ্ৰহ করিয়া লইয়। আবার *তাহাকে পূজাম্বু বসিতে হইত। নানা কাজে প্রায়ই শৈলবাল সময়-সময় বিরক্ত হইতেন— স্বশ্বেন্দু মাঝে-মাঝে তর্জন-গর্জন করিতেন--কিন্তু মহেশ্বরীর একটুও ক্লান্তি বা বিরক্তি ছিল না । তিনি হাসিমুথেই বলিতেন, “ একে কেন বকবিকি করছিস ; বালকের স্বভাব বালকের দ্বারাই প্রকাশ পায় । ও-কি এই বয়সে তোদের মত বুঝে-মুঝে’ চলবে? তবে আর সংসারে ছেলে-মান্তযের ঠাই থাকৃত না ।” বয়োবৃদ্ধির সঙ্গে-সঙ্গে কানাইলাল যখন8একটু বুঝিতেস্বঝিতে শিথিল, তখন তাহার মনে সৰ্ব্বদা এই প্রশ্ন উঠিত,—কেন সে রান্না ঘরে—পূজার ঘরে ঢুকিতে পায় না ? সে ছুইলে জলটুকু কেন ফেলিয়া দিতে হয় ? কেন তাহার খাওয়া সন্দেশ পলাইকে দিতে পারা যায় না ? বলাই ছুইলে কোনো জিনিস ফেলা যায় না, তাহার এটো সন্দেশ কানাই অনায়াসে খায়, তবে তার বেলা সবই উন্ট কেন ? শৈলবালা এবং স্বখেন্দুই তাহাকে বেশী সঙ্কোচ করিয়া চলিতেন । কিন্তু যাহাকে সে ভালোবাসে তাহার সমস্ত রাগটা গিয়া পড়িত সেই এইরূপ ঘটিত । [ ২৪শ ভাগ, ২য় খণ্ড মহেশ্বরীর উপরে। সে ইচ্ছা করিয়াই তাহার ফুল গুলি ছুইত, কাপড়খানি টানিয়া-টানিয়া ছিড়িয়া দিত মহেশ্বরী বলিতেন, “বাব ! এমন করিতে নাই ।” সে সকল কথা তাহার কর্ণে পৌছাইত না । তাহা দুষ্টমি দিন-দিন বাড়িয়াই চলিত। সকলের খুঁটিনাf ছুই-ছুই-এর ধাক্কায় শিশুর অভিমান যত ফুলিয়া-ফুলিয় উঠিত, মার উপর আক্রোশে তাহা ততই প্রকাশ পাইত । বলাই-এর সঙ্গে তাহার প্রায়ই ঝগড়া বাধিত । সে কোন-কোন দিন আঁচড়াইয় তাহার রক্তপাতও করিয় দিত। কানাই ছিল হৃষ্টপুষ্ট, দুষ্ট ঘোড়ার মত, বলাই তাহার সঙ্গে পারিয়া উঠিত না । শৈলবালা ছেলের লাঞ্ছনায় মুখে কিছু না বলিলেও মনে-মনে এই পরের ছেলেটার উপরই রাগ করিতেন। কানাইকে বলিলে শাশুড়ীকেই বলা হয়, এই ভয়ে বধূর রাগ মনেই জমা কিন্তু মুখেন্দু মাঝে-মাঝে মিষ্ট মুথে জননীকে তাহার ত কাহাকে ও সমাহ থাকিস্ত । দশ-কথা শুনাইয়া দিতেন । করিয়া চলিবার বালাই ছিল না । দর-দালানে আলনার উপর স্বথেন্দুর জামা-কাপড় থাকিত । তাহার জামার পকেটের ভিতরটা কানাইলালের কাছে একটা রহস্যাগার ছিল। তার লুন্ধদুষ্ট সৰ্ব্বদাই স্থযোগ খুজিত কি করিয়া উহার ভিতরট একবার লুট করিয়া আসা ধায় । একদিন সুবিধা পাইয়৷ সে জামার পকেট হইতে স্বথেন্দুর সোনার ঘড়িটি উদ্ধার করিয়া লইয়া বাহিরে রকের উপর আসিয়া বসিল । অনেকক্ষণ পৰ্য্যস্ত এপিঠ-ওপিঠ করিয়া দেখিল, কান পাতিয়া টিকৃটিক্‌ শব্দ শুনিল । কিন্তু ঐ শব্দ কেন হইতেছে, কেমন করিয়া হইতেছে, কাচের আবরণের আড়ালে বসিয়া কে কথা কহিতেছে, জানিবার আগ্রহে ঘড়িটা সে রকের উপরে আছড়াইয়া চুৰ্ণবিচূর্ণ করিয়া, ভিতরটা ভালো করিয়া, দেখিবার উপায় করিয়া লইল । ঠিক সেই সময়ই কি কাজে স্বথেন্দু তথায় উপস্থিত হইলেন। তিনি বালকের হস্তে র্তাহার মূল্যবান ঘড়িটিকে এইরূপে রূপান্তরিত হইতে দেখিয়া রাগে আগুন হইয়া উঠিলেন । মুহূৰ্ত্তে র্তাহীর যেন কাণ্ডজ্ঞানস্থদ্ধ লোপ পাইল। উঠানে দরুমার জন্য বঁাশ চাছা হইতেছিল ; সেখান হইতে এক