পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২য় সংখ্যা ] - - --- - - * হেসে বললেন—“আজ একজন নতুন লোক আসবে, তাই তোর একটা ভাল কাপড় বের করছি।” তখন . আমার পেট ক্ষিদেতে টে। টো করছিল, তাই পিসীমাকে খাবারের জোগাড় দেখার বদলে কাপড় নিয়ে টানাটানি করতে দেখে বড়ই রাগ,হ’ল। “সাজগোজের কথা পরে হবে। এখন চলো ত আমায় খেতে দেবে।" এই বলে’ বইগুলো দড়াম করে টেবিলে ফেলে কাপড় ছাড়তে আমার ঘরে ঢুকে পড়লাম। পেট ঠাগু হ’লে পিসীমাকে জিজ্ঞেস করলাম— তোমাদের নতুন অতিথিটি কে শুনি " পিসীমা তথম শতমুখে তার বর্ণনা আরম্ভ করে দিলেন—এমন রূপবান্‌ গুণবান বিদ্বান ছেলে আর ভূভারতে নেই ইত্যাদি । আমি কোন সাড়াশব্দ না দিয়ে চলে এলাম। ঘরে ঢুকে টেবিল থেকে একখান বই টেনে নিয়ে খাটে শুলাম। কিন্তু বইয়ের পাতা খুলতে না খুলতে শুনি পিসীমা বলছেন—“বই নিয়ে শুলি যে, কাপড় ছাড় বিনে ?" "এখন আর পারিনে পিসীমা, বেড়াতে যাবার আগে ছাড়ব ।” "দাদা ত আজ বেড়াতে যাবে না ।" "কেন ?" কেন কি ? বাড়ীতে লোক বেড়াতে এলে তাকে ফেলে’ কেউ বেড়াতে যায় ?” জল হোক, ঝড় হোক, শত কাজ ফেলে’ও বাবা প্রতিদিন-সন্ধ্যায় বেড়াতে বের হতেন। কিন্তু আজ সেই নিত্যকৰ্ম্মে বাধা দিতে আসছেন যিনি—সেই অপরূপ মাচুষটিকে দেখবার জন্য একটু কৌতুহল হ’ল। কিছুক্ষণ পরে উঠে পড়লাম—একটা সাদা ভইয়ালের রাউজ ও হেলিওটপ রঙের জরিপেড়ে সাড়ী পর্লাম— বেণী করে চুলে রিবন বধিলাম, জরির নাগর জুতা পায়ে দিলাম। তার পর জানলার কাছে চেয়ার টেনে “শালি” পড়তে বস্লাম। কিন্তু মন বসূল না —মন বড়ই চঞ্চল লাগছিল। অল্পক্ষণ পরেই আমার ডাক পড়ল বসবার ঘরে। কেমন যেন লজ্জা করছিল। কোনও রকমে পর্দা সরিয়ে মরীচিকা *3. ציטל ঘরে ঢুকে পড়লাম। বাবা আলাপ করিয়ে দিলেন–র্তার অনেক কালের এক মৃত বন্ধুর ছেলে, নাম সমরেশ রায়, কলিকাতায় থেকে এম্-এ পড়েন ইত্যাদি । আমি কোনও রকমে নমস্কার করে বসে পড়লাম। আগন্তুকের সঙ্গে বাবা গল্প করছিলেন। আমি ইত্যবসরে লোকটিকে দেখে নিলাম। রং ফর্স নয়, কিন্তু উজ্জল শ্যামবর্ণ, লম্বী চওড়া, বেশ পৌরুষব্যঞ্জক চেহারা। মুখের ভাবটি ভারি সুন্দর, খুব স্বপুরুষ না হ’লেও ভারি প্রিয়দর্শন চেহারা । বাবার সঙ্গে কে একজন দেখা করতে এলেন। "তোমরা গল্প কর, আমি এক্ষুনি আসছি” বলে বাবা উঠে গেলেন । আমি মহা বিপদে পড়লাম। কিন্তু সেই “নতুন মাস্থ্যটি” বেশ সপ্রতিভভাবে গল্প জুড়ে দিলেন। সুতরাং আমারও লজ্জা অনেকটা ভেঙে গেল। কথাবার্তায় সেদিন সন্ধ্যেটা" বেশ কেটে গেল । বাবা তাকে মাঝে মাঝে আসবার জন্য নিমন্ত্রণ করলেন । সেদিন রাত্তিরে শুয়ে শুয়ে সমরেশ-বাবুর কথাই ভাবছিলাম। বেশ ভালো লেগেছিল তাকেযদিও একদিনে মাহুষকে বিশেষ কিছুই চেনা যায় না। উনি প্রায়ই আমাদের বাড়ী আসতেন । ক্রমেই বেশ ঘনিষ্ঠত হ’ল—রোজই সন্ধ্যে হ’লে তিনি আসবেন আশা করতাম। বাবার মনের ভাব কতকটা বুঝতে পেরেছিলাম, সেজন্য একটু লজ্জাও করত । কিছুদিন পরে পিসীম ভাল করেই জানিয়ে দিলেন। আমি মুখে যদিও বললাম যে কিছুতেই বিয়ে করব না, কিন্তু মনে মনে কিছুতেই অস্বীকার করতে পারলাম না যে তাকে বেশ ভালে লেগেছে। অবিপ্তি তখনই যে খুব একটা ভালবাসা হয়েছিল তা নয়। আমি প্রথম দর্শনেই প্রণয়ে পড়া স্বীকার করিনে। তাকে খুবই ভালোবেসেছিলাম, কিন্তু একদিনে নয়, ক্রমে ক্রমে। প্রথম দর্শনে যেটা হয়, সেটা ভালবাস নয়, মোহ । যাক সে কথা । প্রেমতত্ব আলোচনা করবার দিন আমার ফুরিয়ে গেছে । বিয়ের কথা পাকাপাকি হ’য়ে গেল । ওঁর এক মামা ছাড়া আর কেউ ছিল না—তিনিও বিয়েতে মত দিলেন। পিসীমা বিয়ে দেবার জন্য ব্যস্ত হ’য়ে উঠলেন। কিন্তু বাবা বললেন—“আমার ত কুটা মেয়ে, তাকে