পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২১০ জাতি যদি ভারতবাসীকে বাণিজ্যে স্ববিধ প্রদান করিতে চান, তাহা হইলে তাহাদিগকে ভারতবর্ষ হইতে যে যে জিনিষ বেশী পরিমাণে আমদানি হয় তাহার উপর আমদানী শুদ্ধ কমাইয় অথবা উঠাইয়া দিতে হইবে । ইংরেজ ভারতবর্ষ হইতে বেশী পরিমাণে আমদানি করেন তুল চামড়া পাট লাক্ষা চা চাউল রবার বীজ গম পশম এবং বিভিন্নপ্রকারের খনিজ-পদার্থ ইত্যাদি । ইহার মধ্যে পাট লক্ষণ ও চা ত কাৰ্য্যতঃ ভারতবর্ষের একচেটিয়া ব্যবসা । এই কয়টি জিনিসের উৎপাদনে ভারতবর্ষের সমকক্ষ পুথিবীতে আর কেউ নাই । লঙ্কাদ্বীপের চা পৃথিবীর অতি সামান্য অভাবই পূরণ করিতে পাবে । সুতরাং ইংরেজ ভারতীয় পাট লক্ষণ ও চায়ের উপর আমদানী শুদ্ধ কমাইয়া দিলেও ভাবতের বিশেষ লাভ নাই, আর না কমাইলেও ভারতবর্ষের কোনো ক্ষতি নাই । কারণ পুথিবীর বাজারে সকল জাতিই ভারতবর্ষেব চা পাট ও লাক্ষা ইত্যাদি কিনিয়া থাকে। ব্রিটিশ গভর্ণমেণ্ট, ভারতবর্ষের তামাক চা ও কাফির উপরে আমদানী শুল্ক কিছু কমাইয়াছেন । ইহাতে ভারতীয় তামাক ব্যবসায়ী ও কাফি-ব্যবসায়ী কিছু সুবিধা পাইতে পারে । কিন্তু ইংরেজের সহিত ভারতবর্ষের বাণিজ্যে কাফি ও তামাকের স্থান নগণ্য । ভারতীয় চায়ের উপর আমদানী শুদ্ধ কমাইয়া যে ইংরেজ ভারতের চায়ের আদর করিতেছেন বলিতেছেন, সেই স্ববিধ ও আদব না করিলেও ভারতবর্ষের কোনো ক্ষতি হইত না, কারণ পৃথিবীর বাজারে ভারতবৰ্ষই চায়ের প্রধান জোগানদীর । খাদ্যদ্রব্যের মধ্যে থাকিল গম ঘব ও চাউল । ইংরেজ যদি তাঙ্গার দেশে ভারতের গম যব ও চাউলের ব্যবসার সুবিধা করিয়া দিতে চাহেন, তাহা হইলে তাহাকে অন্যান্ত দেশ হইতে এই কয় জিনিসের আমদানির উপর শুদ্ধ বসাইতে হইবে অথবা শুন্ধের হার বাড়াইতে হইবে । ইহাতে বিলাতে খাদ্যত্রব্যের দাম বাড়িবার সম্ভাবনা । স্বাধীন-দেশের লোক পরাধীন ভারতবাসীর দরদে খাইয়া বাচিবার জন্য যে ষেণী পয়সা ব্যয় করিবে ইহা সম্ভবপর মনে হয় না । এইরূপে বিলাতের বাজারে ভারতবর্ষের প্রবাসী—জ্যৈষ্ঠ, ১৩৩১ [ ২৪শ ভাগ, ১ম খণ্ড কাচামালের স্ববিধ করিয়া দিতে যাইয়া ইংরেজ যদি অন্যান্য দেশ হইতে র্কাচামালের আমদানির উপর শুষ্ক স্থাপন করেন অথবা শুল্কের হার বৃদ্ধি করেন তাহা হইলে মোটের উপর বিলাতে কাচামালের আমদানী কমিয়া ঘাইয়া দাম বাড়িবার সম্ভাবনা । কিন্তু কাচামালের দাম বাড়িলে শিল্পজাত পণ্যদ্রব্য আর সস্তী থাকিবে না । ইহাতে ইংরেজের শিল্প-বাণিজ্যের সমূহ ক্ষতি স্বতরাং কাচামালের বেলাও ইংরেজ এষ্ট নূতন নীতি অবলম্বন করিতে চাহিবেন না। সাম্রাজ্যিক সুবিধা-নীতির প্রধান পাণ্ড চেম্বাবুলেন্‌ সাহেব ও বলিয়াছেন—“আমি জোরের সহিত বলিতেছি যে, আমি কাচামালের উপর শুষ্ক বসাইতে মারাজ ।” উপনিবেশগুলির সহিতও আমাদিগের রপ্তানীবাণিজ্যের অবস্থা এমন নহে যে আমরা এই নীতিতে কিছু লাভবান হইতে পারি । আমরা একে একে দেখিলাম এই নূতন নীতি অবলম্বন করিয়া ইংরেজ ভারতবর্ষকে কাৰ্য্যতঃ কোনো সুবিধা করিয়া পারেন না । এখন দেপা ধাক ইংরেজ এই নব-বিধানের ফলে আমাদের দেশে কি সুবিধা ভোগ করিতে পারেন । আমরা বিলাত হইতে যে-ষে জিনিস আমদানি করি তাহার মধ্যে প্রধান তুলার-তৈরা জিনিস, যেমন কাপড় ইত্যাদি, রাসায়নিকদ্রব্য, ঘর-বাড়ী তৈবা করিবার মাল-মশলা, চামড়ার-তৈরী জিনিস, লৌহনিৰ্ম্মিত দ্রব্য, বৈজ্ঞানিক যন্ত্রাদি, ইস্পাতনিৰ্ম্মিত দ্রব্য, স্বরা, মোটর-গাড়ী, কল-কব্জা, রবারের-তৈরী জিনিস, সাবান ও গন্ধদ্রব্য, মনোহারী জিনিস, পশমের তৈরী দ্রব্যাদি, সিগারেট ইত্যাদি । এই তালিকার কোনো কোনে জিনিস আমাদের স্বদেশী শিল্পের প্রতিযোগী । ভারতবর্ষের শিল্প-বাণিজ্যের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে এই প্রতিযোগিতা ক্রমশ: বাড়িবে ছাড়া কমিবে না । একটি ছোট চার গাছ যতদিন শক্ত না হয় ততদিন যেমন ইহাকে বেড়া দিয়া ঘিরিয়া চারিদিকের উপদ্রব হইতে রক্ষা করিতে হয়, তেমনি কোনো দেশের নূতন শিল্পকে চারিদিগের প্রতিযোগিতার হাত' হইতে মুক্ত কয়িয়া দিতে , না দিলে উহা টিকিয়া থাকিতে পারে না । জামাজিগের