পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২২8 আমার দৃঢ় প্রত্যয় জন্মিয়াছে, আদিকালে হিন্দুসমাজে জাতিভেদ ছিল না, নব নব সত্য গ্রহণ করিবার জন্য হিন্দু সমাজের দ্বার অবারিত ছিল । পরবর্তী কালে প্রচলিত জাতিভেদের অধীনতা, মামুষের বিবেক-বিরোধী শাস্ত্রের অধীনতা এবং রাজনৈতিক অধীনতা হিন্দুসমাজে যে জড়ত আনয়ন করিয়াছে, তাহার জীবনস্রোত যেরূপ অবরুদ্ধ করিয়াছে, তাহাতেই সমাজ এমন ধ্বংসের মুখে চলিয়াছে। নমঃশূদ্ৰজাতির মন হিন্দুসমাজের উৎপীড়নে যখন ধৰ্ম্মান্তর গ্রহণ করিবার জন্য চঞ্চল হইয়া উঠিয়াছে, তখন সকল আবর্জনা-বজ্জিত হিন্দুধৰ্ম্মের পবিত্র সরল সুন্দর রূপ তাহাদের সম্মুখে উপস্থিত করা আমি অতিশয় প্রয়োজন বলিয়া মনে করি । কোন শাস্ব যদি মানবের প্রকৃত কল্যাণের বিরোধী হয় সেই শাস্ত্রকে অগ্রাহ করিতে হইবে । তাহাতে থাটি হিন্দুধৰ্ম্ম বিনষ্ট হইবে না। আবর্জনা-মুক্ত হইয়া তাহণ উজ্জল ও শক্তিশালী হুইয়া উঠিবে। আমার শ্রদ্ধেয় বন্ধু শ্ৰীযুক্ত সত্যানন্দ বস্ব এম্-এ, বি-এল মহাশয় এবং সঞ্জীবনী-সম্পাদক শ্ৰীযুক্ত কৃষ্ণকুমার মিত্র মহাশয় সিরাজগঞ্জের নমঃশদ্রদিগের নিকট যাইতে আমাকে উৎসাহিত করিলেম । আমি আমার পুত্ৰ শ্ৰীমান রবীন্দ্রনাথ ও আমাদের সমিতির পরিচালিত যশোহর মালিয়াট রামমোহন রায় মপা ইংরেজী স্কুলের হেডমাষ্টার আমার একুস্তি স্নেহভাজন শ্ৰীমান বনমালী গোস্বামীকে সঙ্গে লইয়া এপ্রিল রাত্রিকালে সিরাজগঞ্জ যাত্রা করি । সিরাজগঞ্জের ষ্টেশনমাষ্টার শ্রদ্ধেয় বন্ধু শ্ৰীযুক্ত প্যারীমোহন দাস মহাশয় আমাকে লিখিয়াছিলেন, আন্দোলন-কেন্দ্র সিরাজগঞ্জের নিকটবৰ্ত্তী জামতৈল ষ্টেশন হইতে তিন মাইল দূরে । আমি ও শ্ৰীমান বনমালী ১২ই এপ্রিল উষাকালে জামতৈল ষ্টেশনে নামিলাম এবং শ্ৰীমান রবীন্দ্রনাথকে কংগ্রেস কার্যালয়ে ও হিন্দুসভায় যাইয়া আন্দোলনের সংগ্ৰহ করিতে সিরাজগঞ্জে পাঠাইয়া দিলাম । জামতৈল হইতে আমরা পদব্রজে তিন মাইল পথ চলিয়া সর্বাপেক্ষ নিকটবর্তী নমঃপূদ্র-গ্রাম গোপালপুরে উপস্থিত হইয়া, তারিণীচরণ সরকার নামক এক সম্পূর্ণ অপরিচিত নমঃশূদ্র গৃহস্থের আতিথ্য গ্রহণ করি । ১১ই তথ্য প্রবাসী জ্যৈষ্ঠ, రిరి 参 ঢুকিতে দেয় না, কেন ? [ ২৪শ ভাগ, ১ম খণ্ড তারিণীচরণ মধ্য-বয়স্ক লোক, ছাত্রবৃত্তি পৰ্য্যস্ত অধ্যয়ন করিয়াছিলেন, এখন কৃষিকৰ্ম্মেই নিযুক্ত আছেন। আমাদের আগমনের উদ্দেশ্য জানিতে পারিয়া তিনি সাদরে আমাদিগকে বাসস্থান ও অন্ন দান করেন ' গোপালপুর ও অন্যান্য বহু নমঃশূদ্র-গ্রাম ভ্রমণ করিয়া এবং নিম্নলিখিত সীতানাথ সরকার-প্রমুখ বহু নমঃশূদ্রের সঙ্গে কথাবাৰ্ত্ত কহিয়া আমরা সিরাজগঞ্জের নমঃশূদ্রআন্দোলনের সম্বন্ধে যে তথ্য সংগ্ৰহ করিতে পারিয়াছি তাঙ্গ নিম্নে বর্ণনা করিলাম । গোপালপুর ইইতে মাইল দুই দূরে বানিয়াগাতি নামে নমঃশূদ্র গ্রাম । এই গ্রামে সাতানাথ সরকার নামক এক প্রভাবশালী নমঃশদ্রের বাস । তাঙ্গার বয়স অল্পমান ৫ ও ৫৫ বৎসর । তিনি স্বাধীনচিত্ত এবং স্বজাতির কল্যাণকামী মাতুয। লেখাপড় তিনি অতি সামান্তই জানেন, তাঙ্গার সাংসারিক অবস্থা তেমন উন্নত নষ্টে । তাহা অপেক্ষা অধিক অর্থশালা ও অধিক শিক্ষিত বহু নমঃশদ্র ঐ অঞ্চলে আছে। কিন্তু স্বাধীনচি ইতা , মানসিক দৃঢ়ত-বলে তিনি ঐ অঞ্চলের নমঃশদ্রের নেতৃস্থান অধিকার করিয়াছেন । গামে গামে ঘুরিয়া দেখিয়াছি, এই নেতৃত্বের মূলে শ্রদ্ধার ভাগ অতি অল্পই আছে । সীতানাথ সরকারকে শ্রদ্ধা করে অতি অল্প লোকে, কিন্তু অল্পাধিক ভয় করে সকলেই। নমঃশূদ্ৰজাতি অশিক্ষিত বলিয়। তাতাদের মধ্যে ব্রাহ্মণ-ভীতি অত্যধিক, কিন্তু সীতানাথ ব্রাহ্মণের প্রতি নিতান্তই বাতরাগ। তিনি ব্ৰাহ্মণকে বে-দম প্রতার করিয়া জলে চুল।ইয়া একবার ছয়মাস কারাদণ্ড ভোগ করিয়াছিলেন । তিনি বলেন, নমঃপূদ্রগণ হিন্দু নয়, হিন্দু তইলে উচ্চ শ্রেণীর হিন্দুগণ তাহাদের জলস্পশ করে না, তাহাদিগকে পোপানাপিত দেয় না, তাঙ্গদের কুপ হইতে জল উঠাইতে দেয় ন, বিড়াল-কুকুরকে ধরে ঢুকিতে দেয়, তাহাদিগকে ঘরে নিম্ন শ্রেণীর তথাকথিত মুসলমানের দুষ্পবৃত্তির আক্রমণ হইতে প্রবল নমঃশূদ্রজাতি বাহুবলে উচ্চশ্রেণীর হিন্দুগণের মান ইজ্জত রক্ষণ করিতেছে কিন্তু হিন্দুরা ত নমঃশুদ্রদের প্রতি ফিরিয়াও চায় না । তাহীদের উন্নতির জন্য তাহাদিগের মধ্যে শিক্ষা