পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২২৬ হিন্দুসভার পক্ষ হইতে শ্ৰীযুক্ত সত্যচরণ শাস্ত্রী, রামকৃষ্ণ মিশন হইতে শ্ৰীযুক্ত করুণানন্দ স্বামী, সত্যমাতা নামে কাশীর একজন সন্ন্যাসিনী, মান্দ্রাজের ব্যায়াম ও ব্রহ্মচৰ্য্য প্রচারক অধ্যাপক নাইডু এবং সিরাজগঞ্চের ও পাশ্ববৰ্ত্তী গ্রামসমূহের বহু উচ্চশ্রেণীর নমঃশূদ্র-প্রধান এই সভায় উপস্থিত হইয়াছিলেন। নাইডু ভদ্রলোক ও বহুস পাক মহাশয় সভাপতির পদে পুত হইয়াছিলেন । প্রমত্ত হরিংকীৰ্ত্তনের পর সভার কায্য আরম্ভ হয় । অধিকাংশ নমঃশদ্র-প্রধান সেই সংকীৰ্ত্তনে ভক্তির সঙ্গিত যোগ প্ৰমত্তভাবে মৃত্য করিয়াছিলেন । সভায় দূরাগত প্রায় সকলেষ্ট এণ্ড নিকটবর্তী স্থানেরও অনেকেই বস্তৃতা করিয়াছিলেন । আমার সঙ্গী নমঃশূন্ম শ্ৰীমান বনমালী গোস্বামী ও সুন্দর বকৃত করিয়াছিলেন । বক্তৃতা দিবার অ ভ্যাস না থাকিলে ও সভাপতি মহাশয়ের অঙ্গুরোধে আমাকেও কিছু বলিতে হইয়ছিল । উচ্চশ্রেণীর হিন্দুগণ নমঃশদ্রদিগকে আচরণীয় করিয়া অবশ্যই লইবেন, কিন্তু নমঃশূদ্ৰগণ শুধু তাহাতেই যদি তৃপ্ত হন তবে তাহাদের কোনই উন্নতি হইবে না ; নমঃশদ্রদিগের মধ্যে শিক্ষা-বিস্তার, স্বাস্থ্যের ও সমাজের উন্নতি, কুযি ব্যাঙ্ক - স্থাপন, চলুক। তাহাদের সর্বপ্রকার উন্নতি-সাধন করিতে হইবে, আমরা এইসকল কথাই বলিয়ছিলাম। বক্তৃতার পর উপস্থিত ব্রাহ্মণ কায়স্থাদির মধ্যে * অনেকে নমঃশদ্রাদির প্রদত্ত জলপান এবং সন্দেশ বাতাস। প্রভৃতি অ{হার করেন । স্থানীয় ব্রাহ্মণ কায়স্থদিগের মধ্যে কেহ কেহ তাদের জল গ্রহণ করেন নাই কিন্তু তাহারাও নমঃশুভূদিগকে আচরণীয় করিবারই পক্ষপাতী বলিয়া প্রকাশ করিলেন । ক্রমে ক্রমে সমাজস্থ সকলকে সম্মত করিয়া তাহারা ৭ নমঃশূদ্রদিগকে জলাচরণীয় করিয়া লইবেন, এইরূপ মত প্রকাশ করেন। অদূরবর্তী স্থলবসন্তপুরের যুবক-জমিদার শ্ৰীযুক্ত শিবেশচন্দ্র পাকুড়াশী, এম্-এ, বি-এল, মহোদয় সভায় উপস্থিত হইয়াছিলেন। তিনি হৃদয়বান্‌ পুরুষ । সভাভঙ্গের পরে তাহার নেতৃত্বে পরিচালিত ভক্তিবিগলিত সংকীৰ্ত্তন শুনিয়া বড়ই মুগ্ধ হইয়াছিলাম। তিনি আশা করেন, " স্থলবসন্তপুরের ব্রাহ্মণসমাজ দ্বারাও শু তাতেব প্রচলন, এইসকল উপায়ে প্রবাসী—জ্যৈষ্ঠ, ১৩৩১ [ ২৪শ ভাগ, ১ম খণ্ড ক্ৰমে ক্রমে নমঃশূদ্রদিগকে আচরণীয় করিয়া লইতে পারিবেন। এইরূপ ২৪ ঘণ্ট। সভাসমিতির উপর আমার বিশেষ আস্থ না পাকিলেও এই সভ দ্বারা একটি উত্তম মঙ্গলকৰ্ম্মের স্বত্ৰপাত হইল বলিয়। মনে হয় । সৰ্ব্ববাদি সম্মতরূপে না হইলেও, এই যে নমঃশদ্রদের জল পাবনা অঞ্চলে আচরণীয় হইতে আরম্ভ হইল, আমার মনে হয়, নানা ঘাত-প্রতিঘাত সহিয়৷ হিন্দুসমাজে তাহ! স্থায়ী ভাবেই আচরণীয় হইয়৷ থাকিবে । নমঃশদ্রগণ যদি আত্মোন্নতি সাধনে মনোযোগী হন, তবে ক্রমে আরও চলিবে এবং সুদূর ভবিষ্যতে বিবাহ দিও চলিবে আশা করি । সভার পরদিন নান স্থান হইতে আগত সকলেই চলিধ{ গেলে আমরা আমাদের প্রকৃভ কায্য আরম্ভ করিলাম। গোপালপুর হইতে ১৫ মাইলের মধ্যে ৫০।৬০টি নমঃশদ্র গ্রাম । নমঃশদ্রের বাস । এই অঞ্চলের নমঃশদ্রদিগের মধ্যে ধৰ্ম্ম, শিক্ষা সমাজ ও অর্থনৈতিক অবস্থ জ্ঞাত হইবার জন্য এইসকল গ্রামে অন্ততঃ পনের হাজার সমস্ত অঞ্চলটি ঘুরিয়া দেখিতে ইচ্ছা করিলাম। এখন পদব্রজে ছাড়। এই অঞ্চলে ভ্রমণেব আর অন্য উপায় নাই । ভাল রাস্তাঘাট নাই ৷ অদিকাশ স্থলে কৰ্ষিত বন্ধুর ক্ষেত্রের উপর দিয়| শূন্যপদে চলিতে হয় । চৈত্র-বৈশাখের রৌদ্রে মুত্তিক অতিশয় উত্তপ্ত হয়। একটি মাটিকুলেশন পাশ-করা নমঃশূদ্র যুবক আমাদের সঙ্গী হইল। তাঙ্গকে লইয়। আমরা উষাকালে ভ্রমণে বাহির হইতাম । পথে খত নমঃশদ্র গ্রাম পড়িত তাহাতে কিছুকাল ঘসিয়া গামের তথ্য স” গ্রহ করিতাম, মিশনারীদিগের কার্য্যের বিবরণ শুনিতাম এবং মধ্যাঙ্গে কোন নমঃশদ্র-গৃহে অতিথ্য গ্রহণ করিতাম ; অপরাঙ্কে পুনরায়ু এই প্রণালীতে পথ চলিতাম। রাত্রিকালে কোন বদ্ধিষ্ণু নমঃশূদ্র গ্রামে উপস্থিত হইয়। গ্রামের প্রধান নমঃশূদ্রদিগকে আহবান করিতাম। বহুলোক উপস্থিত হইত। শুক্লপক্ষের জ্যোৎস্ব রাত্ৰি— উঠানে বসিয়া তাহাদের লইয়া রাত্রি ১২টা, ১টা পৰ্য্যস্ত ধৰ্ম্ম, সমাজ ও শিক্ষা বিষয়ে আলোচনা করিতাম । তাহারা অতিশয় আগ্রহের সহিত আমাদের কথা শুনিয়াছে, আমাদের কার্য্য প্রণালীর সমর্থন করিয়াছে