পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২য় সংখ্যা ] মাধবী উত্তেজিত হইয়৷ আরক্তখে বলিল, “কিন্তু সে-রকম দাম নিতে ত কেউ প্রস্তুত নেই! এর ক্ষতি, পূরণ আমন করে’ হয় না। আপনাকে কিছু করতে হবে * না। যা করবার, আমরাই করব!" তাহার পর হরেশ্বরের দিকে চাহিয়া বুলিল, “দাদা, এর জন্যে একট। প্রায়শ্চিত্ত হওয়া উচিত । কাল তোমাতে-আমাতে একটা প্রায়শ্চিত্ত করব।” স্বরেশ্বর মৃদ্ধ হাসিয়া বলিল, “এ-ব্যাপারটাকে তুই অমন ক’রে দেখ ছিস কেন মাধবী ? দেখিস, এর ফল সবশেষে ভালই হবে। এতখানি ছাই আর ধোয়া কখনও বৃথা যাবে না।” প্রবলবেগে মাথা নাড়িয়া মাধবী বলিল, “সে ভাল ফল যখন হবে, তখন হবে । উপস্থিত আমাদের বাড়ীতে সে এতখানি চবুকার স্বত পুড়ল তাব একটা প্রায়শ্চিন্ত হওয়া চাই ।” “কি প্রায়ুশ্চিত্ত করতে চাস বল ?” ক্ষণকাল চিন্তা করিয়া মাধবী বলিল, “কাল আমরা নিরন্থ উপোষ করে সমস্ত দিন চর্ক কাটুব ।” “বেশ ; তাই হবে ।” স্বরেশ্বরের দিকে চাঙ্গিয় বিমানবিহারী বলিল, “অপরাধ করলাম আমি, আর তোমরা করবে প্লায়শ্চিত্ত ?” স্বরেশ্বর স্মিতমুখে বলিল, “অপরাধ করেছ বলে যদি সত্যি-সত্যিই ধারণ হ’য়ে থাকে তা হ’লে তুমিও যা হয় একটা কিছু "প্রায়শ্চিত্ত কোরো। আর তা যদি না হ’য়ে থাকে ত এই যে মৌখিক ভদ্রতাটুকু প্রকাশ করলে তার দ্বারাই তোমার নিষ্কৃতি হোক ৷” কতকট। মাধবীর উপস্থিতির জন্য এবং কতকটা অনির্দিষ্ট আশঙ্কার আতঙ্কে বিমানবিহারী তাহার মৃত্নাবরুদ্ধ আক্রোশকে পিঞ্জরাবদ্ধ পশুর মতন মনের মধ্যে চাপিয়া রাখিয়া গৃহে ফিরিয়া গেল। রাত্রে বহু বিলম্বের পর যে নিদ্রা অবশেষে আসিল, দুঃস্বপ্নের দ্বারা তাহা অবিরত খণ্ডিত হইতে লাগিল, এবং যে অগ্নি বহু পূৰ্ব্বে স্বরেশ্বরের বাটীতেই নিভিয়া গিয়াছিল স্বপ্নের মধ্যে তাহ বারম্বার প্রজলিত হইয়া শতগুণ ধূম উদগীর্ণ করিতে রাজপথ ২৩৩ লাগিল। বিমানবিহারী সভয়ে দেখিল সেই ঘূর্ণায়মান ধূম-কুণ্ডলীর মধ্যে পড়িয়া স্বমিত্র অসহ যন্ত্রণায় ছটফটু করিতেছে, এবং তাহার স্ববর্ণ-সদৃশ মুখমণ্ডল ধূম-প্রভাবে তাম্রবর্ণ ধারণ করিয়াছে ! অক্ষুট আৰ্ত্তনাদ করিয়া বিমানবিহারী জাগ্রত হইয়া দেখিল কক্ষমধ্যে দিবালোক প্রবেশ করিয়াছে। উপস্থিত বিপদ হইতে পরিত্রাণ পাইয়। প্রথমটা সে নিঃশ্বাস ফেলিয়া লাচিল, কিন্তু পরমুহূৰ্বেই সমস্ত কথা স্মরণ করিয়া একটা গভীর অপ্রসন্নতায় তাহার চিত্ত মলিন হইয়া উঠিল । আহার করিতে বসিয়া দুই-চারি গ্রাস খাওয়ার পর সহসা বিমানবিহারীর মনে পড়িল যে তাহারই জন্য মাপবী ও সুরেশ্বর উভয়ে অনাহারে দিন যাপন করিতেছে। মনে পড়িবামাত্র তাহার কণ্ঠদেশ যেন ধীরে ধীরে অবরুদ্ধ হইয়া আসিল, মুখের মধ্যে যে পাদ্য ছিল তাহ আর কিছুতেই কণ্ঠ দিয়া নমিতে চাহিল ন! ! দুই-চারিবার অল্প ও ব্যঞ্জন নাড়িয়া-চাড়িয়া বিমান আতার ছাড়িয়৷ উঠিয় পড়িল । দূর ইষ্টতে স্বরম। দেখিতে পাইয়ু ছুটিয়া আসিয়৷ জিজ্ঞাসা করিল, “ঠাকুরপো না পেয়ে উঠে পড়লে যে ?” বিমান মুছ হাসিয়া বলিল, “গলায় বড় লাগছে, বউদি।" “তবে একটু দুধ গরম করে’ এনে দিই, থাও।” “জল পর্য্যস্ত থাবার উপায় নেই!” চিন্তিত হইয়। হুরমা বলিল, “কি হয়েছে গলায় ? ঘ-টা হয়নি ত ? ডাক্তার দেখালে না কেন ?" বিমান তেমূমি অল্প হাসিয়া বলিল, “দর্কার নেই, কাল নাগাং ভাল হ’য়ে ধাঁকে ’’ কাছারীতে বিমানবিহারীব ধমকে আবৃদালী-চাপরাশীর দল সক্ষপ্ত হইয়া উঠিল, আমূলার হাকিমের মূৰ্ত্তি দেখিয়া পলাইয়া পলাইয়া বেড়াইতে লাগিল এবং উকিল-মোক্তারদের সহিত বিমানের কথায়-কথায় অকারণে কলহের স্বষ্টি হইতে লাগিল । যে ক্রোপের প্রায় সমস্তটাই চাপ থাকিয়া মাঝে-মাঝে অতি সামান্য অংশ এইরূপে প্রকাশ পাইতেছিল, তাহা