পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কয়লার কেরামতি “কয়লা ধুলে ময়লা যায় না”। অনেককাল ধরিয়া এই ঋষি-বাক্যটি কয়লার প্রতি অধথা অশ্রদ্ধ ও অবহেলা প্রদর্শন করিয়া আসিতেছে । কিন্তু পাশ্চাত্যের আধুনিক রাসায়নিক ঋষিরা এই কুংসিত কালে কয়লার বঙ্গিরাবরণ মোচন করিয়া তার অন্তর হইতে যে বিচিত্র তথ্য-রসের ধারা আবিষ্কার করিয়াছেন তাহাতে পূৰ্ব্বোক্ত প্রবাদবাক্যটি মিথ্যা প্রমাণ হইয়৷ গিয়াছে। - এই কয়লার সঙ্গে বৰ্ত্তমান মানব-সভ্যতা ওতপ্রোতভাবে সংশ্লিষ্ট । কয়ল। প্রভূত পরিমাণে আল্‌কাতর ( dont tar ) প্রস্তুত হয়। আর সেই আলকাতর হইতে রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় একদিকে ধেমন হাজাররকমের নয়ন-বিমোহন রঞ্জন-দ্রব্য সম্ভার ( lye-stufts ) ধাহ! শরতের নীলাকশি, বসন্তের বিচিত্র প্রস্বন-রাশি, নানাবিধ চিত্তরঞ্জন মৃগন্ধি (sconts and মানবের কল্যাণকারী ভেষজাদি নিয়ত প্রস্তুত হইতেছে, অপরদিকে তেমনি ধ্বংসেব শেল-সম মারাত্মক বিস্ফোরক প্রভৃতি জিনিষ৭ তৈরি হইতেছে। এই যে মুরণাপন্ন রোগীর শিখরে শিশিভরা ঔষধ, এই যে পুঞ্জীভূতমরণ-বটিক ডিনামাইট্র, এই যে পারিজাতগন্ধী পরিমল-রাশি, এমন কি এষ্ট যে নীরস-লেখনী-প্রক্ষিপ্ত মসীধারা, এর এক-একটি অণু-পরমাণু হয়ত লক্ষ লক্ষ বৎসর পূৰ্ব্বে অদৃষ্ঠা কাৰ্ব্বনিক এ্যাসিড ভাবে এই পৃথিবীর আকাশে বাতাসে বিরাজ করিত। তার পর উদ্ভিদ তাহাকে স্বৰ্য্যকিরণের সাহাধ্যে আহাৰ্য্য-রূপে গ্রহণ করিয়া নিজের দেহ পুষ্ট করে। তার পর একদিন প্রকৃতির ধ্বংসের লীলা স্বরু হয়। বড় বড় অরণ্যানী এই আবর্তনে পড়িয়া ভূগর্ভে চাপ পড়ে ও পৃথিবীর আভ্যন্তরীণ তাপের প্রভাবে অঙ্গারে পরিণত হয়। আর সেই অঙ্গরই আমাদের কালে কয়লা ! o এই’ত গেল কয়লার জন্মের ইতিহাস । শুভতে perfumes ), 3 খনিজ কয়লা হইতে কোকু কয়লা ( coke ) ও গ্যাস ( coul gas ) তৈরি হয়। বড় বড় লৌহ-নিৰ্ম্মিত গ্যাস-নিষ্কাশক-নল-যুক্ত পাত্রে কয়লা খুব উত্তপ্ত করা হয় ; এরূপ করিবার সময় পাত্রের ভিতরে বায়ুর প্রবেশ রোপ করিয়৷ দেওয়া হয় । তাপের প্রভাবে উক্ত কঁাচ কয়ল। নানাবিধ পদার্থে রূপান্তরিত হয় ; তন্মধ্যে প্রধান কোক কয়ল, দূরীভূত ক্ষরিন বায়ু (liquid ammonia), Riottie 3 (coal tar) & কোল গ্যাস। অতঃপর নানাবিধ রাসায়নিক প্রক্রিয়া দ্বারা এগুলিকে পৃথক্ ও শোধন করা হয়। কোক্‌ কয়ল ও গ্যাস্ জালানীরূপে আলোক উৎপাদনের জন্য ও অন্যান্য বহু প্রয়োজনীয় কার্য্যে ব্যবহৃত হয় । এমোনিয়াকে গন্ধক দ্রাবক ( Sulphuric acid ) দ্বার এমোনিয়ম সালফেটু নামক একপ্রকার লবণজাতীয় পদার্থে পরিণত করিয়া অতি উত্তম সার-(inulur() রূপে ব্যবহার করা হয়। একটা কথ। এখানে বলা আধশ্বক যে, কোকু কয়ল। ৪ গ্যাসের পরিমাণ প্রয়োজনাতুরূপ বদ্ধিত করা কিংবা কমান যায় । কম তাপে কোকের পরিমাণ ও উচ্চ তাপে গ্যাসের পরিমাণ অধিক श्ध्र । আজ এই আলকাত রাকে অবলম্বন করিয়া পৃথিবীর নানা দেশে নানা বিরাট কারখানা গড়িয়া উঠিয়াছে, কোটি কোটি টাকা, লক্ষ লক্ষ নর-নারী এই উদ্দেশ্যে নিয়োজিত হইয়াছে। এক কথায় বৰ্ত্তমান মানব তাহার ঐহিক স্বথের অনেকখানির জন্য কালো-আলুকাতরার নিকট ঋণী। কিন্তু এমন একদিন ছিল যখন “কোক্‌ কয়লা” ও “কোল্ গ্যাসের" কারখানার মালিকগণ এই আলকাত ব্লাকে একটা বিরাটু জঞ্জাল ও আপদ মনে করিত ও ইহাকে লইয়া কি করা যায় তাহা ভাবিয়া পাইত না । আর সেই আল্কাতরা আজ রসায়নের যাদুমন্ত্র-বলে অভিনব রূপ গুণ রস গন্ধে মূৰ্ত্ত হইয়া উঠিয়া মানুষের ঐহিক স্বর্থ-স্ববিধা-সাধনে নিয়োজিত হইয়াছে।