পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩য় সংখ্যা ] ভাইটিকে কি সাম্‌লাইতে পারে ?—তাহাতে আবার যখন জরে পড়ে ! এ-সব কথা শুনিয়া প্রসন্ন মনে মনে ভাবিত—“তোমার মত গিন্নিবাল্লি মেয়ে ত আমি দেখিনি।”—কখন কখন মুখ ফুটিয়াও বলিত। তাহার প্রভাব অনুভব করিত সৰ্ব্বক্ষণ। যে-কটাদিন ক্ষান্ত পাঠশালায় উপস্থিত থাকিত, প্রসন্ত্রের মাথার উপর যেন একটা মস্ত বোঝা চাপিয়া থাকিত। কিছুতে একটা খুখ হইবার জো নাই। নিজের লেখাপড়ায় ষোল আনা ক্রটি করিয়া সতর্ক দৃষ্টিতে চারিদিকের ক্রটি সাম্‌লাইয়৷ ফিরা—এই ছিল ক্ষাস্তর কাজ । প্রসল্পকে সব শাসন নীরবে সহ করিয়া যাইতে হইত। এমন ‘গিন্নিবান্নি’ মেয়েকে পড়া জিজ্ঞাসা করা প্রসন্ন বেচারার সাহসে বড় একটা কুলাইত না। যে-দিন বা কুলাইয়া উঠিত, ক্ষান্ত বলিত, “আমি একট। মানুষ না হয় আপনার বাড়ী গিয়ে পড়া দিয়ে আসতে পারি, ঐ দেখুন রেধো শেলেটে এক কলসী জল ঢেলে বসেছে, ওকে সাম্লান আগে” ইত্যাদি ইত্যাদি । এ-যেন এক অভিনব সংসার লইয়া তাহারা উভয়ে আসিবে । যে-দিন ক্ষান্ত আসিত না, প্রসন্ন প্রথমটা খুব উৎসাহের সহিত কাজ করিয়া যাইত ; কিন্তু একটুর মধ্যেই দমিয়া যাইত । না আসিবার প্রকৃত কারণ আন্দাজে জানিতে পারিলেও কোন-একটা ছেলেকে rষ্টইয়া সঠিক বৃত্তাস্ত জানিতে হইতই। যে-দিন ক্ষান্তর নিজের অস্বথ না হইত, প্রসন্ন খবর পাচত ; সে ভ’হার বাড়ীতে যাই পড়িয়া আসিতে পারে। সম্ভব হই েকোন কোন দিন সে নিজে চলিয়াও আসিত, কাঠের বাক্সটাতে ঠেস্ দিয়া প্রসন্ন চাহিয়া থাকিত –ক্ষান্ত আসিতেছে, প্রকাণ্ড প্লেটের কাল গায়ে তাহার নিরলঙ্কার শুভ্ৰ হাতখানি পড়িয়া আছে। ঘাড়ে অসংযত কেশরাশির একটা বিপুল বিশৃঙ্খল গ্রন্থি। পায়ে দু’গাছা মল। প্রসন্ন লক্ষ্য করিত যে-দিন মলের শব্দ সতেজ এবং ঘন, সে-দিন মুখটাও গম্ভীর। সে দিন প্রসন্নকে শক্ত প্রশ্নের উত্তর দিতে হইত—কেন সে একজনের পড়ার ক্ষতি করিয়া তাহাকে ডাকিতে পাঠাইয়াছে, আমোদ ●eዓ SSASAS A SAS SSAS S AASAASAASAASAASAAAS পেরসাদে যে পাচদিন ধরিয়া কামাই করিতেছে, তাহার জন্ত কটা লোক পাঠান হইয়াছে, ইত্যাদি। এক-একদিন মনটা ভালও থাকিত। সেটাও প্রকাশ পাইত মলের বোলে এবং মুখের ভাবে। সে-দিন দুর হইতে ক্ষাস্ত হাসিয়া ফেলিত এবং প্রসল্পের মুখেও সে হাসির প্রতিচ্ছবি প্রতিফলিত হইত। এইরূপভাবে হাসিতে হাসিতে একদিন পাঠশালের দাওয়ায় উঠিয়া সঘনে মাথা হেলাইয়া ক্ষান্ত বলিল, “না গুরু-মহাশয়, আমি আর আপনার বাড়ীতে পড়তে যাব না, তাই এখন এলুম।” প্রসন্ন হাসিয়া জিজ্ঞাসা করিল, “কি হ’ল আবার ?" কৃত্রিম রাগের সহিত ক্ষান্ত বলিল, “যান, সবাই কেন বলবে আমাদের বড় ভাব ?” লজ্জায় আধমরা হইয়া প্রসন্ন প্রথমটা চুপ করিয়া রহিল, তাহার পর গুরু-মহাশয়ের কৰ্ত্তব্য স্মরণ করিয়া গম্ভীরতার চেষ্টা করিয়া বলিল, “কে বলেছে বল ত।” আপনার ভাইয়ের দিকে অঙ্গুলী-নির্দেশ করিয়া ক্ষাস্ত বলিল, “কেন, ঐ ড্যাকুরা। মা বলবেন পিঠোপিঠি বলে’ বলে ; আপনিও কিছু বলবেন না। বেশ, আমি ত আর যাচ্ছিনে ৷” তাহার ভাই দিদির অবস্থা দেখিয়া শ্লেটের আড়ালে হা সতেছিল, তাহাকে লক্ষ্য করিয়া ক্ষান্ত বলিল, “হতচ্ছাড়া ছেলে, বোম্বেটে ।” ( t ) ছুটিতে বন্ধুর বাড়ী আসিয়াই সত্যেন পাঠশালায় হাজরি দিল। প্রসন্ন তখন উপুড় হইয়া শুইয়। ক্ষস্তির লেখা শোধরাই দিতেছিল। বাম হস্তের উপর ভর দিয়া ঘাড় বাকাইয়া ক্ষান্ত এক-মনে দেখিতেছিল । সত্যেনকে দেখিয়া ছেলেরা চুপ করিয়া যাওয়ায় প্রসন্ন চাহিয়া দেখিল। তাড়াতাড়ি উঠিয়া বসিয়া সত্যেনকে বলিল, “আয়, দাড়িয়ে রইলি যে !” ক্ষাস্ত উঠিয় পাঠশালের একপ্রান্তে গিয়া বসিল । বাক্সর উপর বসিয়া মৃদু হাসিয়া সত্যেন কহিল, "বাঃ, বেড়ে আছিস্ কিন্তু * অতিমাত্র লজ্জিত হইয়া প্রসন্ন বলিল, “কিরকম ?”