পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩২৪ বৃষ্টিস্নাত কেস্থার জঙ্গলে মেঘে আধ-ঢাকা চতুর্দশীর জ্যোংস্ন। চিক্‌ চিক্‌ কবৃছিল । মাঝে মাঝে নদীর ধারে বড় বড় মাঠ। শঠি, বেত, ফান গাছের বন জায়গায় জায়গায় খালের জলে ঝুকে পড়েছে । বাইরে একটু ঠাণ্ড৷ পাকুলে৭ আমি ছই এর বাইবে বসে দেখতে দেখতে যাচ্ছিলুম—বরিশালের সে-অংশটা স্বন্দরবনের কাছাকাছি, ছোট ছোট খাল ও নদী চারিধারে, সমুদ্র খুব দূরে নয়, মাইল পশ্চিমেই হাতিয়া ও বদ্বীপ । স্বার-একটু রাত হ’ল। গালের দুপাড়ের নির্জন জঙ্গল অক্ষুট জোৎস্নায় কেমন যেন অদ্ভুত দেখতে লাগল। এ-অংশে লোকের বসতি একেবারে নেই ; শুধু ঘন বন আর জলের ধারে বড় বড় হোগলা গাছ। আমার সঙ্গী বললেন—"এত রাতে আৰ বাইরে থাকবেন না, আহ্বন ছইএর মধ্যে। এসব জঙ্গলে— বুঝলেন না ?” So IS & দক্ষিণ তার পর তিনি স্বন্দরবনের নানা গল্প করতে লাগলেন। তার এক কাকা নাকি ফরেষ্ট ডিপার্টমেন্টে কাজ করতেন, তারই লঞ্চে করে তিনি একবার স্বন্দরবনের নানা অংশে বেড়িয়েছিলেন—সেইসব গল্প । রাত প্রায় বারোটার কাছাকাছি হ’ল । মাঝি আমাদেব নৌকোয় ছিল মোটে একটি । সে বলে উঠল--"বাব একটু এগিযে গিয়ে বড় নদী পড়বে। ণত রাতে এক সে নদীতে পাড়ি জমাতে পারব না। এখানেই নৌকা রাখি ।” নৌকা সেখানেই বাধা হ’ল। গাছের আড়ালে চাদ অস্ত গেল । থালের দুপারেই অন্ধকারে ঢাকা ঘন জঙ্গল । চারিদিকে কোন শব্দ নেই, পতঙ্গগুলে পর্য্যস্ত চুপ করেছে । সঙ্গীকে বললুম—“মশায় এই ত সরু খাল— পাড় থেকে বাঘ লাফিয়ে পড়বে না ত নৌকার ওপর ?” সঙ্গী বললেন—“না পড়লেই আশ্চৰ্য্য হব।” শুনে অত্যন্ত পুলকে ছইএর মধ্যে ঘেসে বসলুম। থানিকটা বসে’. থাকুবার পর সঙ্গী বললেন—“আমুন এদিকে বড় বড় দেখলুম অপ্রশস্ত প্রবাসী—আষাঢ়, ১৩৩১ [ ২৪শ ভাগ, ১ম খণ্ড একটু শোয়া যাক। ঘুম ত হবে না আর ঘুমোনে। ঠিকও না, আমুন একটু চোখ বুজে থাকি।” থানিকট। চুপ করে থাকবার পর সঙ্গীকে ডাকৃতে গিয়ে দেখি তিনি ঘুমিয়ে পড়েছেন, মাঝিও জেগে আছে বলে মনে হ’ল না ; ভাবলুম তবে আমিষ্ট বা কেন মিথ্যেমিথ্যে চোখ থাকি --মহাজনদের পথ ধরবার উদ্যোগ করলুম। তার পর যা ঘটুল সে আমার জীবনের এক অদ্ভুত অভিজ্ঞতা। শুতে যাচ্ছি হঠাৎ আমার কানে গেল অন্ধকার বন-ঝোপের ওপারে অনেক দূরে গভীর জঙ্গলের মধ্যে কে যেন কোথায় গ্রামোফোন বাজাচ্ছে। তাড়াতাড়ি উঠে বসূলুম—গ্রামোফোন ? এ বনে এত রাতে গ্রামোফোন বাজাবে কে ? কান পেতে শুনলুম গামোফোন না । অন্ধকারে হিজল হিন্ত{ল গাছগুলো যেখানে খুব ঘন হয়ে আছে, সেথান থেকে কারা যেন উচ্চ । আৰ্ত্তকরুণ মুরে কি বলছে । খানিকটা শুনে মনে হ’ল সেটা একাধিক লোকের সমবেত কণ্ঠস্বর। প্রতিবেশীর তেতালার ছাদে গ্রামোফোন বাজলে যেমন খানিকট। স্পষ্ট খানিকটা অস্পষ্ট অথচ বেশ একটা একটানা স্বরের ঢেউ এসে কানে পৌছয় চেয়ে কণ্ঠে এও অনেকটা সেই ভাবের । মনে হ’ল যেন কতকগুলো অস্পষ্ট বাংলা ভাষার শব্দ গেল—কিন্তু ধরতে পারা গেল না কথাগুলো কি ! শব্দটা মাত্র মিনিটখানেক স্থায়ী হ’ল, তার পরই অন্ধকার বনভূমি যেমন নিস্তন্ধ ছিল, আবার তেমনি নিস্তব্ধ হ'য়ে গেল । তাড়াতাড়ি ছইএর বাইরে এলুম। চাবিপাশের অন্ধকার ঝিঙের বিচির মতন কালো। বনভূমি নীরব, শুধু নীকার তলায় ভাটার জল কল্‌কল্‌ করে বাধছে, আর শেষ রাত্রের বাতাসে জলের ধারে কেয়ীবোপে একপ্রকার অস্পষ্ট শব্দ হচ্ছে। পাড় থেকে দুরে হিজল গাছের কালো কালে গুড়িগুলোর অন্ধকারে এক অদ্ভূত চেহারা হয়েছে। ভাবলুম সঙ্গীদের ডেকে তুলি। আবার ভাবলুম বেচারীরা ঘুমুচ্ছে ডেকে কি হবে, তার চেয়ে বরং নিজে জেগে বসে’ থাকি। দাড়িয়ে দাড়িয়ে একটা সিগারেটু কানে ণ্ড