পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩২৬ বন্ধুর। এর ছিলেন চন্দ্রদ্বীপের রাজ রামচন্দ্র রায়েদের পত্তমিদার । অবশ্য সে-সময় অনেক পত্তনিদারেব ক্ষমতা এগনকার স্বাধীন বাজাদের চেয়ে কম ছিল না। কীৰ্ত্তি রায়ের বন্ধু মারা গেলে তার তরুণবয়স্ক পুত্র নরনারায়ণ রায় পিতার জমিদারীর ভার পান । নরনারায়ণ তখন সবে যৌবনে পদার্পণ করেছেন, অত্যন্ত স্বপুরুষ, বীর “; শক্তিমান । নরনারায়ণ কীৰ্বি রায়ের পুত্ৰ চঞ্চল রায়ের সমবয়সী ও বন্ধু । সেবার কীৰ্ত্তি রায়ের নিমন্ত্রণে নরনারায়ণ রায় তাহার রাজ্যে দিন কতকের জন্তে বেড়াতে এলেন । চঞ্চল রায়েব তরুণী পত্নী লক্ষ্মী দেবী স্বামীর বন্ধ নরনারায়ণকে দেবরের মত মেহের চক্ষে দেখতে লাগলেন । দু-একদিনের মধ্যেই কিন্তু সে স্নেহের চোটে নরনারায়ণকে বিব্রত হয়ে উঠতে হ’ল । নরনারায়ণ রায় তরুণবয়স্ক হ’লেও একটু গম্ভীরপ্রকৃতি। বিদ্যুৎ-চঞ্চল। তরুণী বন্ধুপত্নীর ব্যঙ্গ-পরিস্কাসে গম্ভীর-প্রকৃতি নরনারায়ণের মান বঁচিয়ে চল। দুষ্কর হয়ে পড ল স্নান করে উঠেছেন, মাথার তাজ খুঁজে পাওয়া যায় না, নানা জায়গায় খুজে হয়রান হ’য়ে তার অশ ছেড়ে দিয়ে বসে আছেন, হঠাৎ কথন নিজের বালিশ তুলতে গিয়ে দেখেন তার নীচেই তাজ চাপ৷ আছে—যদিও এর আগেও তিনি বালিশের নীচে খুঁজেছেন। তার প্রিয় তরবারিখানা দুপুর থেকে বিকেলের মধ্যে পাচ বার স্টারিয়ে গেল, আবার পাঁচ বারই সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত স্থান থেকে খুজে পাওযা গেল । তাস্থলে এমন সব দ্রব্যের সমাবেশ হতে লাগল, যা কোনো কালেই তাম্বুলের উপকরণ নয়। তরল-মস্তিষ্কা বন্ধুপত্নীকে কিছুতেই এটে উঠতে না পেরে অত্যাচারজর্জরিত নরনারায়ণ বায় ঠিক্‌ করলেন তার বন্ধুর স্ত্রীটি একটু ছিটুগ্ৰস্ত । বন্ধুর দুর্দশায় চঞ্চল রায় মনে মনে খুব খুসি হলেও বাইরে স্ত্রীকে বললেন—“ড়দিনের জন্যে এসেছে বেচারী, ওকে তুমি যে-রকম বিত্রত করে তুলেছ, ও আর কখনো এখানে আসবে না ।” দিনকয়েক এরকমে কাটুবার,পর কীৰ্ত্তি রায়ের আদেশে চঞ্চল রায়কে কি কাজে হঠাৎ গৌড়ে যাত্রা করতে হ’ল। নরনারায়ণ’ক্সয়ও বন্ধুপত্নী কখন কি করে বসে, সে ভয়ে প্রবাসী—আষাঢ়, ১৩৩১ [ ২৪শ ভাগ, ১ম খণ্ড দিনকতক সশস্ক অবস্থায় কাল যাপন করবার পর নিজের বজরায় উঠে তাপ ছেড়ে বঁাচ লেন । যাবার সময় লক্ষ্মী দেবী ব’লে দিলেন—“এবার আবার যখন আসবে ভাই, এমন একটি বিশ্বাসী লোক সঙ্গে এনে যে রাতদিন তোমাব জিনিষপত্র ঘরে বসে চৌকী দেবে—বুঝলে ত ?” নরনারায়ণ রায়ের বজরা রাযমঙ্গলের মোহানী ছাড়িয়ে যাবার একটু পরেই জলদস্থাদের দ্বারা আক্রান্ত হ’ল । তখন মধ্যাহ্ন-কাল, প্রখর রৌদ্রে বজরার দক্ষিণ দিকের দিগ্বলয়-প্রসারী জলরাশি শানানো তলোয়ারের মত ঝকুঝক করছিল, সমুদ্রের সে-অংশে এমন কোনো নেীকে ছিল ন যার সাহায্য করতে আসতে পারে। সেট; রায়মঙ্গল আর কালাবদর নদীর মুখ, সামনেই বারসমুদ্ৰ—সন্দীপ চ্যানেল, জলদসু্যদের প্রধান ঘাটি । নরনারায়ণের বজরাব রক্ষীরা কেউ হত হ’ল, কেউ ংঘাতিক জখম হ’ল । নিজে নরনারায়ণ দস্থ্যদের আক্রমণ প্রতিহত করতে গিয়ে উরুদেশে কিসের খোচ থেয়ে সংজ্ঞাশন্ত হ’য়ে পড়লেন । জ্ঞান হ’লে তিনি দেখতে পেলেন তিনি এক অন্ধকার স্থানে শুয়ে আছেন, তার সাম্নে কি যেন একটা বড় নক্ষত্রের মতন জলছে । খানিকক্ষণ জোরে চোখের পলক ফেলবার পর তিনি বুঝলেন যাকে নক্ষত্র বলে মনে হয়েছিল তা প্রকৃত পক্ষে একটি অতি ক্ষুদ্র গবাক্ষপথে আগত দিবালোক। নরনারায়ণ দেখলেন তিনি একটি অন্ধকার কক্ষের আর্দ্র মেজের ওপর শুয়ে. আছেন, ঘরের দেওয়ালে স্থানে স্থানে সবুজ শেওলার দল গজিয়েছে। কয়েক দিন কয়েক রাত কেটে গেল । কেউ তার জন্যে কোন খাদ্য আনলে না, তিনি বুঝলেন যাব তাকে এখানে এনেছে, তাকে না খেতে দিয়ে মেরে ফেলা তাদের উদেখা । মৃত্যু —সামনে নিৰ্ম্মম মৃত্যু ! সে দিনমানও কেটে গেল। আঘাত-জনিত ব্যথায় এবং ক্ষুধা-তৃষ্ণায় অবসন্নদেহ নরনারায়ণের চোখের সামনে থেকে গবাক্ষ-পথের শেষ দিবালোক মিলিয়ে গেল । তিনি অন্ধকার ঘরের পাষাণ-শয্যায় ক্ষুধাকাতর দেহ প্রসারিত করে অধীরভাবে মৃত্যুর প্রতীক্ষা করতে